শিরোনাম
১১ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:৪৪

প্রযুক্তিকে দায়ী না করে নিজে সচেতন হোন

অনলাইন ডেস্ক

প্রযুক্তিকে দায়ী না করে নিজে সচেতন হোন

কদিন ধরে বাসাতে থমথমে পরিবেশ। তমার মা বাবার রাত দিন কাটছে মেয়েকে নিয়ে নানা শঙ্কাতে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু স্কুল কোচিং সব বন্ধ করে দিয়েছে। তমা সারাক্ষণ নিজের রুমে বসে চিন্তা করছে তার ভুলের পরিণতি নিয়ে। মা বাবার দেয়া স্বাধীনতা সে রাখতে পারেনি।

আর অন্যদিকে তমার মা ভাবছে মেয়েকে তিনি বন্ধুর মতো করে সব সময় বুঝিয়েছে জীবনের ধাপগুলো। শারিরীক মানসিক পরিবর্তনের সাথে সাথে কি কি হতে পারে। এমনকি এটাও বলছে কৈশোরের এ সময়টাতে বন্ধুদের সাথে বাইরের জগতকে ফ্যান্টাসি মনে হয়। সুতরাং সে জগতে চলতে গিয়ে ভুল করা যাবে না।সমস্যা হলে মা কে বলতে হবে। কিন্তু মেয়ে তার ভুল করল। এদিকে তমার বাবা সারাক্ষণ বলছে মেয়েকে মা শাসন করতে পারেনি। কি দরকার ছিল আহলাদ করে স্মার্ট ফোন কিনে দিবার। আজ সে ফোনই কাল হলো জীবনে।

তমা অনেক দিন ধরেই একটা ফোন চাইছিল। মা ও চিন্তা করেছে পড়াশোনার পাশাপাশি মেয়ে তথ্য প্রযুক্তির জগতটাকে জানুক। আর এখন পড়াশোনার অনেক কিছু ইন্টারনেট সহজ হয় পাওয়া। এই ভেবে ফোন দিয়েছিল। কিন্তু শর্ত ছিল কোন সামাজিক মাধ্যমে একাউন্ট থাকতে পারবে না। মাঝে মাঝে তমার ফোনও দেখতেন। তেমন কিছু থাকত না ফোনে প্রথম দিকে।

গত ৩ মাসে তমার মধ্যে কেমন একটা পরির্বতন। পড়াশোনাতে ভাল করলেও সারাক্ষণ রুমে থাকে, কম কথা বলে। ফোন নিয়ে ব্যস্ত। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে পড়া বেশি। ফোন নিয়ে ব্যস্ততার কারণ হিসাবে বলে নেট থেকে নোট রেডি করে। মা সবটাই বিশ্বাস করে।

কিন্তু না, তমা মায়ের সে বিশ্বাসকে মিথ্যাতে পরিণত করল। সেদিন কোচিং থেকে মেয়ের ফিরতে দেরি দেখে মা ছুটে গেলেন স্কুলে। সেখানে যা দেখে তাতে হতবাক হয়ে যায়। স্কুলের রাস্তায় সুনসান নীরবতা আর তমা নিজেকে বাঁঁচাতে রাস্তায় দিক বিদিকভাবে ছুটছে।  ৪/৫ টা ছেলে তমাকে বার বার পথ আটকে দিচ্ছে। আর বলছে আজ কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না। নেটে প্রেম করবে না যখন এখন নিয়ে রেপ করবে। এ কথাগুলো কানে আসতে টলে পড়ছিল তমার মা। কোনভাবে নিজেকে সামলিয়ে দৌড়ে গিয়ে মেয়ের হাত ধরলে ছেলেগুলো সরে যায়।

কিছু না বলে তমাকে নিয়ে ঘরে আসে। তমা কাঁদছে আর বলছে, 'মা সব দোষ আমার। তোমাকে মিথ্যা বলেছি বলে আজ এমন হলো। তুমি না গেলে ওরা আমাকে শেষ করে দিত।'

কিছুটা ধাতস্থ হয়ে তমার মা জানতে চাইল কি ঘটনা কেন ছেলেগুলো বাজে কথা বলছে আর পথ আটকাচ্ছে। তমা বললো, সে লুকিয়ে ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করত। সেখানেই শাহেদ ফ্রেন্ড হয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে। তারপর তাকে প্রেম করতে বলে । সে বলছে এসব পারবে না। তখন শাহেদ ভয় দেখায় বাসাতে জানিয়ে দিবে বলে। আর নেটে বাজে কথা বলবে তমার ছবি দিয়ে। ভয় পেয়ে যায় তমা এসব কথাতে। কিন্তু আজ স্কুল ছুটির পর স্কুলের সামনে শাহেদকে দেখে তমা। বাসার দিকে আসতে গেলে তমার হাত ধরার চেষ্টা করে সে। আর তখনি তমা  শাহেদের গালে থাপ্পড় দেয়। এরপর শাহেদসহ ৪/৫ মিলে তাকে তুলে নিয়ে যেতে চায়।

তমার ফোনটা দেখতে চাইলে সে বলে সব ডিলিট করে দিয়েছে। রাগে কষ্টে মা তমার গায়ে হাত তুলে। কিন্তু কী করবে বুঝতে পারে না। থানাতে অভিযোগ করলে নানা হয়রানি আবার এদিকে মেয়ের নিরাপত্তা। সব শঙ্কাতে তমার স্কুল যাওয়াও বন্ধ। ফোন অফ করে দিয়েছে বাবার কাছে।

তমা আর তার পরিবার এমন পরিস্থিতির শিকারের পিছনে দায়ী প্রযুক্তির অপব্যবহার আর অসচেতনতা। অল্প বয়সের ছেলে মেয়েদের ভুলের পরিণতিতে জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এভাবে। তাই সন্তানের হাতে প্রযুক্তি তুলে দেওয়ার সাথে সাথে তার মনোজগতের পরির্বতন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে  পরিবারকে। প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখা কোন সমাধান নয়। কারণ সারা দুনিয়া এখন প্রযুক্তি নির্ভর।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর