২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:৪৪

শেখ হাসিনার জন্মদিন ও মানবিক বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা

ড. মুহম্মদ মনিরুল হক

শেখ হাসিনার জন্মদিন ও মানবিক বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা

ড. মুহম্মদ মনিরুল হক

মনুষ্যত্বপূর্ণ কর্ম এবং লোকহিতকর উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জনগণের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করে মানবিক গুণাবলির চর্চা ও বিকাশে নিয়োজিত রাষ্ট্রকে মানবিক রাষ্ট্র বলা যায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ ও আন্তর্জাতিক ভাবধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মানবিক দিক ছাড়াও জনকল্যাণমূলক অনেক বিষয়ই বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়ে মানবিক বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য তেমনভাবে সামনে না আসলেও ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মানবিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি ‘বয়স্ক ভাতা’, ‘বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ভাতা’, ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ‘আদর্শ গ্রাম’ কর্মসূচিসহ অনেক মানবিক কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাঁর উদ্যোগে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাংলাদেশের মানবিক চেতনাকে নতুন দিগন্ত দিয়েছে। এ চুক্তির ফলে ১৯৯৮ সালে তিনি অর্জন করেছেন ইউনেস্কোর ‘হুপে-বোয়ানি শান্তি’ পুরস্কার। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি মানবিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বে (১৯৯৫-৯৬ সাল) দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। তাঁর টানা সরকার পরিচালনা এবং প্রায় এক যুগের শাসনামলে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০.৫ শতাংশে।

শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানবিক উন্নয়ন। ১৭ অক্টোবর ২০১৬ সালে এক ভাষণে তিনি বলেছেন, “আমাদের উন্নয়নের একটি মানবিক অবয়ব রয়েছে। দারিদ্র্য ও ঝুঁকির মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠীর জীবন-মানের উন্নয়ন আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।” অসহায়, এতিম, বৃদ্ধ, নারী, শিশু, কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীর প্রতি শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি ও বিভিন্ন উপক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বের অসাধারণ গুণ হলো নিপীড়িত, বঞ্চিত, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’ ১২ আগস্ট ২০২০ তারিখে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন পরিবারকে সরকারি উদ্যোগে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। 

শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময়ের ফলে নতুন ঠিকানা পেয়েছে ৬৭ বছর মানবেতর জীবন-যাপনকারী লক্ষ লক্ষ অধিবাসী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাঁর উদ্ভাবনী নেতৃত্ব-দর্শন মানবিক বাংলাদেশকে নতুন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘...এখানে কে হিন্দু, কে মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এটা কোনো কথা নয়। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি এবং মানবিকভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি।’ শেখ হাসিনার প্রদত্ত ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ এবং ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাব ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে গৃহীত হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনেও তিনি বলেছেন, ‘...আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, অর্থনৈতিক উন্নতি চাই, মানব ধ্বংস নয়, মানব কল্যাণ চাই।’ 

বিশ্বের অন্যতম সৎ, দক্ষ এবং সেরা প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতিসহ শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন পঞ্চাশের অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও পদক। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মিডিয়া ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ এবং অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটি ‘মানবতার চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পোপ ফ্রান্সিস এবং বিল গেটসকে পেছনে ফেলে ২০১৭ সালে বিশ্বের সেরা মানবিক নেতা মনোনীত হয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ‘শেখ হাসিনা: দ্য মাদার অব হিউম্যানিটি’ শিরোনামে স্টোরি করেছে ইউরোপের ম্যাগাজিন ‘ডিপ্লোম্যাট।’ আন্তজার্তিক উন্নয়ন সংস্থা ‘সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশিপ’ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘...বাংলাদেশ কোনো উন্নত রাষ্ট্র নয়, অফুরন্তু সম্পদও নেই দেশটির, তারপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার নেতৃত্ব নিয়েছেন।’ সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র। ...এমন মানবিক বাংলাদেশের পাশে সুইজারল্যান্ড সবসময় থাকতে চায়।’

শেখ হাসিনার শাসনামলে রাষ্ট্র এবং সরকারের কার্যাবলি ও পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর মানবোচিত গুণ ও জনহিতৈষী কর্ম, নীতি, দর্শন এবং ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নয়ন তত্ত্ব’ বিশ্বকে নতুন দিগন্ত দিয়েছে। যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ করলে একটি মানবিক রাষ্ট্রের ধারণা উজ্জ্বল হয়। বাংলার মানুষও মনে করে, তিনি দেশিকোত্তম ব্যক্তি, সর্বোত্তম পথনির্দেশক, দেশহিতব্রতী মানবিক শাসক। মানবিক বিশ্বের বাতিঘর খ্যাত শেখ হাসিনা ব্যক্তি জীবনেও মমতাময়ী, দয়াশীল, নীতিবান, ধার্মিক। এ মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞতা-ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ একটি রাষ্ট্রীয় দিবস ঘোষণা করা সময়ের দাবি। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আগামী জন্মদিনকে ‘মানবিক বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হলে তা হবে শান্তিকামী রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য প্রেরণার এবং মানবিক বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত। সে কারণে, দেশমান্য শেখ হাসিনার জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বরকে ‘মানবিক বাংলাদেশ’ দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করছি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর