১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:৩৬

শেখ হাসিনা রাজনীতিতে 'ইনকামবেন্সি' তত্ত্বকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন

ড. সেলিম মাহমুদ

শেখ হাসিনা রাজনীতিতে 'ইনকামবেন্সি' তত্ত্বকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন

ড. সেলিম মাহমুদ

বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাজনীতি বিজ্ঞানে বহুল প্রচলিত 'এন্টি ইনকামবেন্সি' তত্ত্বকে তার শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং জাদুকরি রাজনৈতিক দর্শনের মাধ্যমে অকার্যকর প্রমাণ করেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে এন্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর একটি বাস্তবতা। এর অর্থ হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দল বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে তার জনপ্রিয়তা কমে যায়। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা স্টেক হোল্ডারদের স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টিও এক্ষেত্রে একটি বাস্তবতা। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকাটাও এক ধরনের অভিশাপের মত। 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় অনেকেই স্বাভাবিকভাবে ধারণা করেছেন আওয়ামী লীগ সরকার 'ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টরের' কারণেই একটা রাজনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কিন্তু শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক দর্শনের কারণে 'এন্টি ইনকামবেন্সি' তত্ত্ব অকার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনা বরং বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন রাজনৈতিক দর্শন প্রতিষ্ঠিত করেছেন যার মর্মার্থ হচ্ছে কোন সরকার ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী কাজ করলে সেই সরকার দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে- এরকম একটি জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়। মানুষ চায় সেই দক্ষ ও জনবান্ধব সরকার তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকুক। এই বাস্তবতা বাংলাদেশে 'এন্টি ইনকামবেন্সি' থিওরি কে অকার্যকর করে দিয়েছে। 

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠীর নানা ষড়যন্ত্র সত্বেও দেশের অভ্যন্তরে শেখ হাসিনার শক্তিশালী অবস্থান এবং তার প্রতি দেশের সিংহভাগ মানুষের আকাশচুম্বী আস্থা ও সমর্থনের কারণে দেশের নানা স্টেক হোল্ডার এটি উপলব্ধি করেছেন যে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘস্থায়ীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এই ধারণা দেশের সাধারণ মানুষের মনের মধ্যেও গ্রোথিত হয়ে গেছে। এই বাস্তবতাও 'এন্টি ইনকামেন্সি' তত্ত্বকে অকার্যকর করেছে। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার দীর্ঘস্থায়ী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কারণে দেশে 'এন্টি ইনকামবেন্সি' তত্ত্বের বিপরীতে 'প্রো ইনকামবেন্সি' তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ -সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট 'এন্টি ইনকামবেন্সি' পরিস্থিতির অনুকূলে নয়। 'এন্টি ইনকামবেন্সি' মূলত সে সকল দেশ এবং অঞ্চলে কার্যকরী যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অবদান, সাফল্য, জনপ্রিয়তা, তাদের সার্বিক ট্র্যাক রেকর্ড সমপর্যায়ের এবং তারা জনগণের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। মূলত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটি প্রযোজ্য।‌‌ 

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিপরীতে বিএনপি এবং তার কিছু মিত্র নিয়ে বিএনপির অবস্থান। বিএনপি অসংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক পথে গঠিত একটি রাজনৈতিক দল যার মূল দর্শন হচ্ছে হত্যা, ষড়যন্ত্র আর অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা গ্রহণ। বিএনপি'র প্রধান মিত্র জামায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত। বিএনপি এবং তার মিত্রদের কোন গঠনমূলক রাজনৈতিক দর্শন নেই। বিএনপি-জামায়াত বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভর করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। এছাড়া প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপির বর্তমানে কোন নেতৃত্ব নেই। তাই আওয়ামী লীগের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তির কোন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নেই। ফলে 'এন্টি ইনকামবেন্সি'র কোন প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে পড়ছে না। 

বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। আর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। 'এন্টি ইনকামবেন্সি' রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধের একটি ধারণা । বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এদেশে বাণিজ্য, শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশে যুগান্তকারী উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উল্লম্ফন হওয়ায় দলমত নির্বিশেষে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বিনিয়োগকারীরা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখছেন। 

বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বরং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন করার বিষয়টি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর