১০ এপ্রিল, ২০২৩ ১০:২১

বাংলাদেশটাকে শেখ হাসিনার মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?

সোহেল সানি

বাংলাদেশটাকে শেখ হাসিনার মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে?

সোহেল সানি

“For the spirit of Mujib is there, though diminished, in the personality of his daughter, Sheikh Hasina, who leads the party (Awami League) now” 

(অর্থাৎ মুজিবের মানসিক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গুণাবলী,পরিমাণে কিছুটা কম হলেও, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্বে প্রতিভাত হয়)- ১৯৮১ সালের ১১ জুলাই বিশ্ববিখ্যাত দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছিল। 

শেখ হাসিনার একটা মূহুর্তের জন্য ভুলে যাননি যে, তাঁর জন্ম এমন একটি পরিবারে -যে পরিবারের কর্তাব্যক্তি বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পিতার স্নেহাবেশে সমকালীন রাজনৈতিক ধারা, আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল যৌবনের সংগ্রামমুখর কর্মকাণ্ড এবং পূর্বাপর জাতীয় নেতাদের রণনীতি ও রণকৌশল স্বচক্ষে দেখেছেন, হাতে-কলমে শিখেছেন এবং গড়ে উঠেছেন সেভাবেই। জাতির পিতার সর্বাধিক কাছে থাকার সুবাদে স্নেহধন্য হয়ে একধরনের “প্রচ্ছন্ন বড়ত্ব” অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শেখ হাসিনার মাঝে থাকা সেই “প্রচ্ছন্ন বড়ত্ব” তাঁকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমাসীন করে। যে পর্দার আড়ালে ঢেকে দেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সুনাম ও ঐতিহ্যের একেকটি ধারা, সেই পর্দার একেকটি স্তর নিজের তীক্ষ্ণবুদ্ধির ছুরি দিয়ে একটা একটা করে কেটে ফেলে আবারও আওয়ামী লীগকে “জনগণের দল” হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পুরো কৃতিত্বটি শেখ হাসিনার।

অথচ আজ যে আধুনিক  বাংলাদেশের স্থপতি শেখ হাসিনা সেই তিনি সেদিন পরিচয়ে ছিলেন শুধুই বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার মাত্র।
অবশ্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যার পরিচয়টাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের মূলসূত্র। তাঁর অবর্তমানে ও অমতেই ১৯৮১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ কাউন্সিল তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করে। ভারতের দিল্লিতে রাজনৈতিক নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা ও দুই শিশুপুত্রকন্যা জয়-পুতুলকে নিয়ে পশ্চিম জার্মানীতে গমন করেন। সেখানে তাঁর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার অনুরোধে সেখানে বেড়াতে যাওয়া।
যাহোক বিগত চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবন গার্ডিয়ানের মন্তব্যকেই যথার্থ করে তুলেছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত উত্তরাধিকারিত্বই তাঁর নেতৃত্ব বহন করে চলছে। রাজনীতি ও রাজনীতির নানা বিষয়কে শেখ হাসিনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে পিতা শেখ মুজিবের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ছিলো না। কিন্তু প্রচ্ছন্নভাবে তাঁর কন্যার চোখে স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাবাদের একটা আদর্শ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়ে ছিলেন। সেকারণেই শেখ হাসিনা তাঁর সাধারণ প্রবণতায় নিজেকে রূপান্তরিত করতেন স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মী হিসেবে। তাঁকে দেখা যেতো রাজপথের সাহসী মিছিলে পিতা মুজিবের মুক্তির দাবিতে। কখনও ছাত্রলীগের কর্মীরূপে কিংবা কখনও ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি হিসাবে। শেখ হাসিনার লক্ষ্যনীয় চারিত্রিক দৃঢ়তা বলে দেয় যে, তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীনঅন্তঃসত্ত্বা না হলে নারী মুক্তিযোদ্ধা দলে নিশ্চয়ই নাম লেখাতেন। 

পৃথিবীর গ্রেট ব্যক্তিদের জীবন বড় বিচিত্র। প্রকারন্তরে তাঁরা একা, ভীষণ একা, অপরাহ্নের খাঁখাঁ রোদেলা আকাশে উড়তে থাকা চিলের মতো একা। ইতিহাসে যেসব ব্যক্তিকে গ্রেট বলা হয়, তার মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নাম সর্বাগ্রে। ইতিহাসের জনকও বলা হয় তাঁকে। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “আমি হয়তো পুরো পৃথিবীকে পায়ের তলায় রাখতে পারি, কিন্তু শান্তিময় নিদ্রার তো সাতটি রাতও দু-চোখের পর্দাকে এক করতে পারিনি।”

পৃথিবীর গ্রেটদের তালিকায় তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর নামটিও অগ্রগণ্য। হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে যেখানটাতে থামিয়ে দেয়া হয়–সেখান থেকেই শুরুটা শেখ হাসিনার। তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন গত চার দশকের রাজনীতিতে। নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য সাধারণ এক উচ্চতায়। ক্ষমতা, যশ ও খ্যাতির চূড়ায় অবতীর্ণ। কিন্তু তিনিও কী পরম প্রশান্তিতে নিজের দুটি চোখের পাতাকে এক করতে পেরেছেন একটি দিনের জন্য? না, তা পারেননি। ২০০২ সালের ১৮ জুন আমাকে এক সাক্ষাৎকার প্রদানকালে বলেছিলেন, আমার জন্য ‘রাত’ বড় বিভীষিকার, বড় বিষাদ-বেদনার এবং ঘোর অমানিশার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ‘রাত’ কেড়ে নেয় আমার অবর্তমানে বাবা-মা, ভাই-ভাবী, ছোট্ট আদুরে শেখ রাসেল ও আমার  আত্মীয়-পরিজনদের। পনেরো আগস্টের রাত যে কেয়ামতের রাত।"
শেখ হাসিনার জীবন বর্ণাঢ্য, কিন্তু বড় বিচিত্র! জীবনের সব শুভের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন পিতার দৃশ্যমান শূন্যতা। ‘অশুভ’ বারবার তাঁকে তাড়া করে। অদৃশ্যবাদী করুণাময়ের কৃপায় বারবার ‘অশুভ’ পরাভূত হয়! তাঁর জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণগুলো ভীষণ বিস্ময়ের এবং সুগভীর শূণ্যতার। সেই শূণ্যতা, পিতৃত্বের- পিতৃসন্নিধানের!
একটি মানুষের জন্ম-মৃত্যুর মাঝে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর সম্মিলনই তো জীবনকে সাজিয়ে দেয়। জীবন বর্ণাঢ্য হতে পারে, তেমনি হতে পারে সংক্ষিপ্ত। আবার প্রতিভার আমেজে, কিংবা মেধা ও গুণের মিশিলে জীবন হয়ে উঠতে পারে সুখময় ও সুসমৃদ্ধ। জীবনে বেদনাবিধুর স্মৃতিও থাকে। কমবেশি উত্থান-পতনের স্রোতধারায় বয়ে চলা ঘটনাপ্রবাহের নামই হলো পরিপাটি বা পরিপূর্ণ জীবন, সুখ-দুঃখের জীবন। ঠিক সুখদুখমাখা একটি জীবনের নাম শেখ হাসিনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা যিনি। পিতার ন্যায় শেখ হাসিনাও প্রকৃষ্ট-প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা। 
শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা জীবনের বিচিত্র গল্পটার শুরু ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সূর্যশোভিত রোদেলা দুপুরে। ইতিহাসের কী অদ্ভুত প্রদর্শন! ভারতবর্ষে চারশত বছরের রাজত্বে পালবংশের স্থপতি বুদ্ধিষ্ট রাজা গোপালের ‘গোপালগঞ্জ’-এ ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া শেখ মুজিবও এক রাজা-মহারাজা। যাঁর নামে মুক্তা ঝরে, নীলাদ্রি আকাশে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা, স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা। পিতার ন্যায় শেখ হাসিনাও ভূমিষ্ট নদীবিধৌত মধুমতী কোলআঁধারের ছায়াশান্ত পল্লীমঙ্গলারূপী টুঙ্গিপাড়াতে।
শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা রেণুর শুভপরিণয় এক রূপকথার গল্প। তেরো বছরের ছিপছিপে রোগাসোগা কিশোর মুজিব। অধ্যয়নে সপ্তমী পার হয়নি চোখপীড়া রোগের কারণে। আর ফজিলাতুন্নেছার রেণুর বয়স মোটে তিন। মুজিব-রেণু চাচাতো ভাইবোন। বড় অবেলায় হারান পিতাকে। অনাথ শিশুকন্যা। অবুঝ রেণুর বয়োবৃদ্ধ দাদামহ কিশোর মুজিবের পিতা মৌলভি শেখ লুৎফর রহমানের কাছে  দাবি করলেন, ‘লুৎফর তোমার বড়পুত্রের সঙ্গে আমার নাতনি রেণুর বিয়ে দাও। কখন চলে যাওয়ার ডাক আসে, আমি এখনই দু’নাতনির নামে সমস্ত বিষয়সম্পত্তি লিখে দিবো।" মুরব্বি বলে কথা। চাচার আবদার ফেলেন কি করে? তিন বছরের রেণুর সঙ্গে তেরো বছরের মুজিবের ‘নিকাহনামা’ রেজিস্ট্রি হলো ১৯৩৩ সালে। দু’বছরের মাথায় রেণু হারালেন মাকে। শাশুড়ি মা তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে নিলেন পুত্রবধূকে। রেণু, মুজিবের মা সায়রা খাতুনের স্নেহ-মমতা পেতে থাকলো সাত বছর বয়স থেকে। বাল্যবিবাহ বলে তাদের ফুলশয্যায় বিলম্ব। পার হতে হয়েছে বেশ ক’টি বছর। ১৯৪২ সালে হলো মুজিব-রেণু দম্পতির মধুরেণ সমাপয়েৎ- ফুলশয্যা। কলকাতায় ছাত্রনেতা হয়ে ওঠা বাড়ন্ত মুজিব নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের মধ্যমণি। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের জি.এস তিনি। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য হিসাবে শেখ মুজিবের পরিচিতি গড়ে উঠেছে বাংলার রাজধানী কোলকাতা জুড়ে। তাই কোলকাতাই মুজিবের প্রাণ। মাঝেমধ্যে গোপালগঞ্জে আসা। এভাবে এসে গেলো মুজিব-রেণুর দাম্পত্যের কন্যা সন্তান জন্মের মহামুহূর্তটি। মানুষ বেদনা ভিন্ন নয়। আবার বেদনার উর্ধ্বেও থাকে কিছু গৌরব। কিন্তু শেখ হাসিনার জীবনপ্রবাহের স্রোতধারা বিচ্ছিন্ন এবং বিষাদময়। মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখা শিশুটি পিতার সান্নিধ্য পেলো না। কারণ পিতা মুজিব তখন সুদূর কোলকাতায়। তিনি দেশবিভাগের তন্দ্রাঘোরে, স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা সোহরাওয়ার্দীর সাহচর্যে। পুত্র মুজিবকে টেলিগ্রাম করে পিতা লুৎফর রহমান জানান নাতনি হবার খুশির খবরটি। কিন্তু ছুটে আসেননি মুজিব, মেয়ের মুখদর্শন করতে। কোলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লাখো লাখো হিন্দু-মুসলমানের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্বাধীন অবিভক্ত বাংলার স্বপ্নটা তাতেই ধূলিস্যাত। বঙ্গভঙ্গের লীলাখেলায় আবারও বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলো। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, হাশিমের শেষ চেষ্টাটি ছিলো, পাকিস্তানের অধীন পূর্ববাংলার অংশে কোলকাতাকে ফেলার। শেখ মুজিব তাই সন্তান হওয়ার খবরশুনেও ছুটে এলেন না। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। না, তাঁর প্রিয় ‘লিডার’ সোহরাওয়ার্দী তখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সোচ্চার পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের বাঁচাতে। অবশেষে স্বপ্নভঙ্গ হলে শেখ মুজিব কলকাতার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় এসে ঘাট বাঁধেন।
মানুষের জীবন নামক যন্ত্রটা অকৃত্রিম। নিবুনিবু করে জ্বলে ওঠা প্রদীপশিখার আয়ুষ্কালের যোগবিয়োগে নেই এক পলকের ভরসা। তারপরও মানুষের ক্ষমতা আর ঐশ্বর্য লাভের বাসনা চির-অতৃপ্ত এবং অসীম। কেবল আল্লাহ বা স্রষ্টার অসীমত্বে সমর্পণের মাধ্যমেই মানুষ তৃপ্তি পেতে পারে। আর এভাবেই সৃষ্টিকর্তার কৃপায় মানুষ পেতে পারে রাজত্ব, ক্ষমতা, যশ ও খ্যাতি। যেমনটি পেতে থাকলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি স্বাধীন পাকিস্তানের প্রাদেশিক পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায় চলে এলেন কোলকাতা থেকে। ভালোদিন পথের বাঁকেই অপেক্ষা করছিলো, যেনোএকটু এগিয়ে যেতে হবে। দ্রুত মুজিবীয় কন্ঠ ভাষাসংগ্রামে। গণমুখে, আড্ডায়-আলাপে। ছাত্রলীগের ময়দানে। সেবক ও সহচরের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে মুজিব ক্রমে হয়ে ওঠেন এক অজেয় শক্তি। তাতে পারিবারিক অন্তরঙ্গ সম্প্রীতির মায়াজাল ছিন্ন হলো। একজন ছিপেছিপে, দীর্ঘদেহী, ঘনওল্টানো চুল মাথায়, খবরের কাগজ হাতে দাঁড়ানো শেখ মুজিবের জ্বালাময়ী ভাষণ একদিন স্বপ্ন দেখালো স্বাধীনতার। এর গভীর প্রভাব পড়লো পরিবারের ওপর। যেমনটি শেখ হাসিনার ওপর। তাঁর জীবন খুবই ঘটনাবহুল। 
১৯৫৩ সালে মুজিব আরমানিটোলাস্থ ৮/৩, রজনীবোস লেনস্থ এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে আসেন পরিবারকে। প্রিয় সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন সর্বংসহা, ধৈর্যের এক প্রতিমূর্তি। শত দুঃখ-কষ্টের মাঝেও যিনি এক মুহূর্তের জন্য হননি বিচলিত। সংগ্রামী স্বামীকে অহর্নিশ প্রেরণাদানকারী এক মহীয়সী নারী। মরণেও হয়েছেন স্বামীর সঙ্গী। সেই সুরমনী ফজিলাতুন্নেসার পরিবারের গল্প অশ্রসজল করে দেয় চোখ। যাহোক কবি সুফিয়া কামাল ছোট্টশিশু শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিলেন বই-খাতা-কলম। ভর্তি করা হলো নারী শিক্ষা মন্দিরে (বর্তমান শেরেবাংলা বালিকা বিদ্যালয়)। সেদিনও শেখ হাসিনার পাশে থাকতে পারেননি পিতা শেখ মুজিব। 
পিতার নিত্য সাহচর্যে ছিলেন না। তবুও তাঁর ঘটনা পরস্পরা ও অশ্রুতপূর্ব বিরল কতগুলো ঘটনা।
১৯৫৪ সালে শেখ মুজিব হলেন শিল্প বাণিজ্য ও দুর্নীতিদমন মন্ত্রী। রজনীবোস লেন ছেড়ে তাঁকে পরিবার নিয়ে উঠতে হলো মিন্টোরোডের সরকারি বাসভবনে। কিন্তু সুখ বেশীদিন টিকলো না। আবার ছাড়তে হলো বাসা। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এলে দ্বিতীয়দফা মন্ত্রী হলেন শেখ মুজিব। পূর্বপাকিস্তানে মুখ্যমন্ত্রী তখন আতাউর রহমান খান। আর সারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতা শহীদ সোহরাওয়ার্দী। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। কিন্তু দু’পদে থাকা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। সমালোচনার মুখে মুজিব সবাইকে বিস্মিত করে মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে সাধারণ সম্পাদক পদে দুর্বার হয়ে উঠলেন। ফলে মিন্টো রোডের সরকারি বাসা ছাড়তে হলো। এবার উঠলেন ৫৮ সেগুনবাগিচার এক ভাড়া-বাসায়। এরপর এলো ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে দিলেন ৬দফা। এর একবছর আগে ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেন। তিনি যখন ইডেন কলেজের ভিপি নির্বাচিত হলেন তখনো পিতা মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে।
১৯৬৮ সালের ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা যখন বিয়ের পিড়িতে, তখনো পিতা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ফজলুল হক হলের ভিপি এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ের ঘটকালিটা করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও মন্ত্রী রংপুরের মতিউর রহমান। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারাও ছিলেন নেপথ্যে। আত্মীয়-পরিজনহীন বিয়ের আসরে ছিল নাটকীয় পরিবেশ। যা কোনদিন মুছে যাবে না। বিয়ের উকিল শ্বশুর মতিউর রহমানের স্ত্রী উপহার দেন ৪৫০ টাকা মূল্যের বিয়ের শাড়িটা। চট্টগ্রামে হয় বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। আয়োজন করেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজ। 
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনাও ছিলেন সেই আন্দোলন-সংগ্রামের সারথি। গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ ছাত্র-জনসমুদ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। তারপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়। এলো একাত্তর। ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গ্রেফতার হলেন বঙ্গবন্ধু। পরিবারকে বাসভবন ছেড়ে উঠতে হলো ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের একটি বাসাতে। শুরু হয় পাকবাহিনীর প্রহরায় অন্তরীণের দুঃসহ দিনগুলোর। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল এম এ ওয়াজেদ মিয়া শাশুড়ি, স্ত্রীসহ শেখ রেহানা ও শেখ রাসেলকে নিয়ে ওঠেন খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় আরেকটি বাসায়। সন্তানসম্ভবা শেখ হাসিনা এসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রসব বেদনায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ডা. ওয়াদুদের তত্ত্বাবধানে। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত ৮ টায় পুত্র সন্তানের মা হলেন শেখ হাসিনা। পাশে ছিলেন লিলি ফুপু। নানী বেগম মুজিব স্বামীর সঙ্গে মিলিয়ে নাতির নাম রাখেন সজিব। মা শেখ হাসিনা যুক্ত করেন জয় বাংলার ‘জয়’। সঙ্গে  জুড়ে দেয়া হয় পিতার নাম ওয়াজেদ। পূর্ণ নামে সজীব ওয়াজেদ জয়।
১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনকারী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ ক্লাসের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। শেখ হাসিনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী ১৫ আগস্টের পরে জার্মানীতে যেতে বলেন। স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার জেদাজেদীতে তাঁকে যেতে হয় ১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই। পশ্চিম জার্মানিতে থাকার সুবাদে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছোটবোন রেহানাসহ বেঁচে যান শেখ হাসিনা। 
১৯৮১ সালের ১৭ মে দিল্লি থেকে স্বদেশে ফিরেন। চারদশকের সংগ্রামমুখর রাজনীতি। ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। চারবার প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতার দু’দশক পূর্ণতা পাবে মেয়াদপূর্ণে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বিচার হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যারও। সত্যিই
শেখ হাসিনার খাঁটি দেশপ্রেম ও বাঙালি জাতির মহত্ত্ব যেনো একই প্রস্রবণ হতে উৎসারিত। দেশের মহামারি, দুর্যোগ ও সংকটে সেটাই বারবার প্রমাণ করেছেন জাতির পিতার কন্যা। আমরা দেখেছও মরণঘাতক করোনার নীল দংশন হতে বাঁচাতে তাঁর মানবীয় গুণাবলীর ফল্গুধারা। যা তখন একই স্রোতস্বিনীর শাশ্বত স্রোতধারায় প্রবাহিত হয়েছে। লীন হয়েছে একই মহামানবের সাগরে। নেই কোনো ধর্মবর্ণ গোত্র। তাইতো করোনার করাল গ্রাস ততটা প্রাণ কেড়ে নিতে পারেনি। 
শেখ হাসিনা তাঁর মোহনীয় ব্যক্তিত্বের আকর্ষণে সবার হৃদয় জয় করেছেন ইতিমধ্যে। সরকার বলতে মন্ত্রী পরিষদ নয়, সংসদও নয় এককভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সর্বেসর্বা। নাম মাত্র একটি মন্ত্রিসভা। শেখ হাসিনা দেশকে এমন একটা সুউচ্চ শিখরে অবতীর্ণ করেছেন যে, বিদেশ রাষ্ট্রনায়করাও তাঁর ভূয়সী প্রশংসায়। মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ কে আর কে সংখ্যালঘিষ্ঠ তা আর আমলে নিতে চাচ্ছে না। এর কারণ মানুষ চায় শান্তি, শৃঙ্খলা, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। মানুষ হরতাল, রাহাজাহী, সংহিসতায় অগ্নিসংযোগের অতীতে ফিরতে চায়না। শেখ হাসিনা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন নেতৃত্বগুণে। করোনাকালে পরাশক্তির উপনিবেশিক শাসন ফাঁপা বেলুনের মতো ফেঁটে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। সব রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান যখন দিকবিদিকশুন্য, আকাশেপানে তাকিয়ে, তখন পবিত্র জায়নামাজে প্রার্থনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্জীব বা নির্বিকার ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী। রোম যখন পুরছিল, তখন নীরু বাঁশি বাজাচ্ছিলো, আর শেখ হাসিনা দুর্দমনীয় অসীম সাহসে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোত্তম পন্থা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টারত ছিলেন। মৃত্যুতে শোক বিহ্বল হলেও রাষ্ট্রনায়কের মনোবৃত্তিতে তিনি জাতির মনোবলকে চাঙ্গা রেখেছিলেন। চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক সবার পরিবারের প্রতি মানবাধিকার হাত প্রসারিত করেছিলেন। সত্যি তিনি গুনীমান্যি মানবতাৎসর্গী এক প্রাণ। জননেত্রী থেকে দেশরত্নের অভিধা তাঁর প্রাপ্য। তাঁর দীর্ঘসময়ের শাসনকর্মে প্রমাণ মিলেছে, কর্তব্য সম্পাদনের হিমাদ্রি সদৃশ্য এক অটল প্রতিজ্ঞা তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। দৃঢ়তা তাঁর দৃষ্টিতে বিরাজমান। একেকটি সংকটে তিনি উদ্যোমী আত্মবিশ্বাসী আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শুধু নয়, নির্মাতাও। শতসহস্র বিক্ষোভ, বিদ্রোহের ভ্রূকুটি, ইস্পাত-দৃঢ়  বিরোধিতার হুঙ্কার, তেজস্ক্রিয় আন্দোলন ও অবিরাম অগ্নিস্ফুলিঙ্গের আশঙ্কিত দাবানলে সরকার টলকানোর জঙ্গি হেফাজতের তান্ডবী ধ্বংসযজ্ঞের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেছেন। অস্থিরতা তাঁকে কর্তব্যকর্ম থেকে এতটুকু টলাতে পারেনি, এটাই তাঁর দূরদর্শী সুযোগ্য রাষ্ট্রনায়কের পরিচয়।
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণ যদি হয় উন্নয়ন, তাহলে বলতেই হয় সরকার টানা ক্ষমতায় রয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ কোনটি যদি বলা হয়, তাহলে আমি বলবো, গণতন্ত্রের চেহারা যাইহোক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি অবমুক্ত করাই হলো সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ এবং এটাকে বড় উন্নয়নও বলা যেতে পারে। কেননা এই দখলমুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র নিরাপদ জীবনে ফিরে এসেছে। আরও একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র মাঝেমধ্যে আহত হলেও অন্তত হত্যার শিকার হয়নি। শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করার একটা চেষ্টা করছি। যেমন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত যখন বাস, দোকানপাটে পেট্রোলবোমা মারায় লিপ্ত ছিলো তখন শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট (হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে দেশ যখন দুনীতিতে হ্যাট্রিক করে শেখ হাসিনার নাম তখন বিশ্বের সৎ প্রধানমন্ত্রীর তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জামায়াত যখন কল্পনায় যুদ্ধাপরাধী মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আকাশে দেখে, তখন শেখ হাসিনা মহাকাশে "বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট" পাঠায়। খালেদা জিয়ার সরকার যখন বিদ্যুতের খাম্বা তৈরি করে তখন শেখ হাসিনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেন। খালেদা জিয়ার বিএনপি জামায়াত সরকার যখন সারের দাবিতে বিদ্রোহ করা কৃষকের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে, তখন শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে সার বিতরণ করে। বিএনপি জামায়াত সরকার যখন বাংলা ভাই শায়খ আবদুর রহমানের আবিষ্কার করে শেখ হাসিনা সরকার তখন দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে। খালেদ জিয়া সরকার যখন সন্ত্রাসীদের মদদ দেন, শেখ হাসিনা তখন সাকিব-মুশফিক মাশরাফিদের খোঁজেন। খালেদা জিয়া যখন বলেন, পদ্মাসেতু সম্ভব নয়, শেখ হাসিনা তখন তা দৃশ্যমান করে ইতিহাস রচনা করেন। বিএনপি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এক হয়, শেখ হাসিনার সরকার তখন একেক করে ওদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে। বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট যখন চিৎকার করে জনগণকে বলে মাগো তোমার একটি ভোটে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, শেখ হাসিনা তখন বলেন, মাগো তোমার একটি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। 
প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র নয়, সাধারণ মানুষের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমূল বদলে যাওয়া দেশের চেহারা।
জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা সেই দেশকে গড়ে তুলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর ঘটাচ্ছেন। 
দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা তাঁর জীবনীশক্তি। তাই কোনো পরাশক্তি তাঁকে টলকাতে পারছেনা। পারছে না তাঁর স্বীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্য থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে। বিরাট কর্ম-সম্পাদনের জন্যেই মহান স্রষ্টা  তাঁকে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় আসনে আসীন করে সুমহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তিনি ধ্যানগম্ভীর মৌনঋষির মতো নীরবে শুধু কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর জীবন-মৃত্যু নিয়েও গুজব রটিয়ে খুশির জোয়ারে গা ভাসাতে দেখেছি আমরা। আসলে ওরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার সুফলভোগকারী। তাদের সমর্থকরা নিঃশেষিত নয়, তবে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেনা। তবে দেশের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড়বেশি প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেঁচে থাকা। কারণ চোখবুঝে কল্পনা করে দেখেছি- বর্তমান নেতৃত্বে বা দেশে শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা। আমি কারো আয়ুকাল নিয়ে বলার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন সমীচীন নয়। স্রষ্টা ব্যতীত কারো মৃত্যু সম্পর্কে আগাম বলাও সম্ভব নয়। তবে আমি এতটুকু উদার মনস্ক ভাববোধ হতে স্বেচ্ছায় বলতে দ্বিধা করছি না যে, চোখে বুঝে দেখছি প্রধানমন্ত্রীবিহীন বাংলাদেশ সে তো অন্ধকার। সে অন্ধকারে আমার সন্তানদেরও মতো লাখো সন্তানের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত। আল্লাহ না করুন, পেশীশক্তির জোরে জঙ্গি উগ্রবাদীরা রাষ্ট্রদখল করলে আমাদের সন্তানেরা ৭১ এর পরিণতি বরণ করবে। সেই চিন্তায় আমি ঘুমেবিভোর চোখে আচমকা লাফিয়ে চিৎকার করে উঠি। স্বপ্নে দেখি আমার কোমলমতি সন্তানরা স্কুল হতে উধাও হয়ে গেছে। আমার একার নয় আমরা প্রতিহিংসার নীলদংশনে বাঙালীরা চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবো। স্রষ্টা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করছেন দেশমাতৃকার জন্য। শেখ হাসিনা আল্লাহর কৃপায় তাইতো বারবার মৃত্যু দূয়ার থেকে ফিরে আসেন। তিনি তার মহান পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে ডিজিটাল রূপে সাজিয়েছেন নিরলস শ্রম দিয়ে। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। সত্যিই শেখ হাসিনা এখন হিমাদ্রিসদৃশ্য অটল এক প্রতিজ্ঞার নাম। শেখ হাসিনাও তাঁর মায়ের ন্যায় সদাহাস্যোচ্ছ্বল এক প্রাণময়ী নারী। পুরুষোত্তম পিতার সংগ্রামী আদর্শ ও সর্বংসহা মায়ের অসীম ধৈর্যই বুঝি তাঁর জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাবার পুঁজি। পিতার সোনারবাংলা গড়ার দৃপ্তশপথ নেয়া তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সফল হবেন আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানেও। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ দেশকে তাঁর পিতার মতো এবং তাঁর মতো করে কেইবা ভালোবাসতে পারে? 

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাসবেত্তা।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর