ফোবানাকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নাম নিয়ে যে সংগঠনটি গত ৩২ বছর ধরে উত্তর আমেরিকায় কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতটা পরিচিত নয়। দেশের হাতেগোনা সামান্য কিছু মানুষ এই ফোবানার কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত।
১৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েন ইন নর্থ আমেরিকার (ফোবানা) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মীর এইচ চৌধুরীর নেতৃত্বে বারো সদস্যের নেতৃবৃন্দ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীনের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। দলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফোবানা এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী, ফোবানার এক্সিকিউটিভ সদস্য ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম বাবলা, নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলন ২০১৯ এর কনভেনার নার্গিস আহমেদ, মেম্বার সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, ড্রামা সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক পলাশ পিপলু, সদস্য আসমা বেগম, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক এর প্রাক্তন সভাপতি আবু সোলায়মান, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক এর প্রাক্তন সভাপতি ও ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসাইন, ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলীর পরিচালক আকতার হোসাইন, ও বাংলাদেশ আমেরিকা ফ্রেন্ডশীপ ফাউন্ডেশন (বাফি) চেয়ারম্যান শিব্বীর আহমেদ ও মিসেস জিন্নাত চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের হেড চ্যাঞ্চেরী দেওয়ান আশরাফ।
সভায় ফোবানা কর্মকর্তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন ফোবানার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এমন একটা সময় আসবে যখন আমি আপনি থাকবনা। কিন্তু ফোবানা সংগঠনটি যুগের পর যুগ বছরের পর বছর এই উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে টিকে থাকবে তার কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, এখন সময় হয়েছে ফোবানার সুফল বাংলাদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দেয়ার। প্রতি বছর ফোবানায় যে অর্থ সংগ্রহ করা হয় তার একটি অংশ দিয়ে বাংলাদেশে ফোবানা ক্লিনিক, ফোবানা স্কুল গড়ে তোলা যায়।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন বলেন, ফোবানা বাংলাদেশের গরীব দুঃখী মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান করে একটি পরিবারকে সঠিক ও সুন্দর পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করতে পারে। একটি ছাত্রকে ফোবানা বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে একটি ফোবানার সৈনিক বাংলাদেশে তৈরি করতে পারে। যদি বছরে বাংলাদেশে বিশ পঁচিশজন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে ফোবানা বৃত্তি প্রদান করা যায় তাহলে প্রতি বছর বাংলাদেশে বিশ পঁচিশজন ফোবানা ছাত্রছাত্রী তৈরীর মাধ্যমে ফোবানা পুরো একটি সামজকে বদলে দিতে পারে। যার মাধ্যমে ফোবানার সুফল ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা বাংলাদেশে।
প্রবাসের নুতন প্রজন্মের কাছে ফোবানার ঐতিহ্য ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন ফোবানা ইয়ং ফ্যানক্লাব তৈরির আহ্বান জানান। এছাড়া প্রতিটি বাংলাদেশি আমেরিকানকে ভোটার রেজিষ্ট্রেশনে সহযোগীতা করে একটি শক্তিশালী বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে ফোবানা। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই আমাদের ছেলে মেয়েকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার করতে আগ্রহী বেশি। আমরা কেউ আমাদের সন্তানদেরকে আমেরিকার রাজনীতি সম্পর্কে শিখতে দেইনা। ফলে কোথাও আমাদের কোন প্রতিনিধি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ক্যাপিটাল হীলে শত শত ভারতীয় পাকিস্তানী নেপালী তরুণরা কাজ করছে। তারা নিজ নিজ দেশের জন্য জনমত সৃষ্টি করছে। অথচ কোথাও বাংলাদেশি প্রজন্মকে দেখা যায়না। যা অত্যন্ত দু:খজনক। এ ব্যাপারে ফোবানা নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন।
সাক্ষাতে ফোবানার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মীর এইচ চৌধুরী ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী ফোবানার বিস্তারিত কর্মকান্ড ও তথ্য রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে ধরেন। ফোবানা সম্মেলন ২০১৯ এর কনভেনার নার্গিস আহমেদ এবং মেম্বার সেক্রেটারি আবীর আলমগীর আসন্ন নিউইয়র্ক ফোবানার আয়োজন সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীনকে অভিহিত করেন এবং ফোবানাকে সফল করার জন্য সহযোগীতা কামনা করেন। সাক্ষাতে ফোবানা নেতৃবৃন্দ আসন্ন ফোবানা সম্মেলনে অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করার জন্য নিমন্ত্রন জানান তাকে।
উল্লেখ্য, ড্রামা সার্কেলের আয়োজনে আগামী ২০১৯ সালের আগষ্টের ৩০, ৩১ এবং সেপ্টেম্বর ১ তারিখ শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার নিউইয়র্কের লংআইল্যান্ডের নাসাউ কলসিয়ামে ৩৩তম ফোবানার আসর বসবে। প্রায় পাঁচ লাখ ডলারের বাজেট নিয়ে ড্রামা সার্কেল ফোবানা সম্মেলন আয়োজন করছে।
বিডি প্রতিদিন/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হিমেল