নারী উন্নয়নের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানালেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এ প্রসঙ্গে উপমন্ত্রী বলেন, “বিগত এক দশক ধরে নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ গৃহীত এসকল পদক্ষেপকে আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে এখাতে বিনিয়োগ ও সক্ষমতা বিনির্মাণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, মানব পাচার, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদের মতো চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও এগিয়ে আসতে হবে”। এছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাক্কালে উন্নয়নশীল দেশসমূহে নারী উন্নয়নে সৃষ্ট বাধাসমূহ অতিক্রম করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন উপমন্ত্রী নওফেল।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কমিশন অন দ্যা স্ট্যাটাস অব উইমেন (সিএসডব্লিউ) -এর ৬৩তম সেশনের সাধারণ আলোচনায় ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার দেশ পর্যায়ের ভাষণে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
উপমন্ত্রী বলেন, “সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশে প্রথম নারীর মর্যাদা উচ্চতর স্থানে তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু করেন। জাতির পিতার পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুযায়ী পর পর তিন বছর বাংলাদেশ লিঙ্গ-সমতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান ধরে রেখেছে। আর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ইনডেক্স’ অনুযায়ী আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ পাঁচটি দেশের একটি”।
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বহুবিধ পদক্ষেপের কথা প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর ব্যাপকভিত্তিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জেন্ডার রেস্পন্সিভ বিনিয়োগ ও বাজেট প্রণয়ন করছে মর্মে উল্লেখ করেন উপমন্ত্রী।
উঠে আসে, সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যেমন: নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিগত নির্দেশিকা প্রণয়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টি; জীবনমূখী প্রশিক্ষণ প্রদান; ক্ষুদ্র-ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ ও নারী বান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্থা; নারী উদ্যোক্তাদের জামানত বিহীন ঋণ সুবিধা; অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি; কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সম-মজুরী এবং মেয়েদের সুরক্ষা ও এগিয়ে নেওয়ার প্রকল্পের কথা।
এছাড়া তিনি ‘আশ্রয়ণ’, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ ও ‘জয়িতা’সহ বাংলাদেশে নারীদের সহযোগিতা, উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদানে বিভিন্ন প্রকল্প/পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন। শিশু বিবাহ, যৌন নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুলিশী ও অন্যান্য সেবা পেতে ‘জয় মোবাইল অ্যাপস্’ এর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নারী নেতৃত্ব রয়েছে। মোট সংসদ সদস্যের ২০ ভাগ নারী। শিক্ষাখাতের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ লিঙ্গ-সমতা অর্জন করেছে এবং নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা-সহায়তা তহবিল থেকে ছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে ”।
উপমন্ত্রী তার বক্তব্যে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, “বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই সঙ্কট মোকাবিলায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে”। সাধারণ পরিষদে দেশ পর্যায়ের ভাষণ শেষে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ব্রিটেনের কমনওয়েলথ্ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমদ্ এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আজ সকালে ৬৩তম সিএসডব্লিউ উপলক্ষে ওআইসি আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী পর্যায়ের ইভেন্টেও যোগ দেন উপমন্ত্রী।
এর আগে ১২ মার্চ উপ-মন্ত্রী চলতি ৬৩তম সিএসডব্লিউ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী তুরস্ক, আয়ারল্যান্ড ও কলম্বিয়ার প্রতিনিধিদলের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। তুরস্কের জনশক্তি বিষয়ক মন্ত্রী জেহ্রা জুমরুট সেলকুক, আয়ারল্যান্ডের অভিবাসন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডেভিড স্টানটোন, কলম্বিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্থা লুসিয়া রামিরেজ এবং কলম্বিয়ার জেন্ডার বিষয়ক প্রেসিডেন্সিয়াল হাই-কমিশনার অ্যানা মারিয়া ট্রিবিনো। বৈঠকে স্ব স্ব দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত দশকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে তা বিদেশী প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতাসহ নারী উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয় এসকল দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে।
এদিকে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নাহার ১২ মার্চ সকালে ‘লিঙ্গ ও কিশোরী সংবেদনশীল সামাজিক সুরক্ষা, বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে যোগ দেন। ২০১৪ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রথম গার্লস্ সামিটে অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু বিবাহ নিরোধে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন অগ্রগতি তিনি ইভেন্টটিতে তুলে ধরেন।
৬৩তম সিএসডব্লিউ-এর বিভিন্ন ইভেন্টে যোগদানকৃত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের মধ্যে আরও রয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নাহার, ক্যাবিনেট ডিভিশনের সমন্বয় ও সংস্কার বিষয়ক সচিব ড. মো: শামসুল আরেফিন, বৈদেশিক কল্যাণ ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রওনাক জাহান ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুন্নেছা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন