যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ’ (বিডিআই) এর উদ্যোগে ‘পরবর্তী ৩০ বছরের বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা’ শীর্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ মার্চ আয়োজিত এ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। প্যানেলিস্ট ছিলেন জাতিসংঘে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
ড. আতিউর বলেন, নব্বই দশকের মধ্য ভাগেও যে অর্থনীতির আকার ছিল ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা এখন বেড়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। জনগণের উন্নয়নের প্রবল আকাঙ্ক্ষা এবং তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগের কারণেই এমন সম্ভব হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সকল পক্ষকেই গৃহীত প্রকল্পগুলোর দক্ষ ও গুণমানসম্পন্ন বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, যাতে করে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যয়-সাশ্রয়ী হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও তাদের বাজারের সাথে সংযুক্ততা বাড়াতে সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে। আগামী দিনে ডিজিটাইজেশন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের বেসরকারি খাতই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিবে এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্যাক্স প্রদানে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। বিশেষ করে ধনী ও বিত্তশালীরা যাতে ট্যাক্স প্রদান করেন সে ব্যবস্থা বহাল করতে হবে। ট্যাক্স আদায়ের আইন কার্যকর করতে হবে যথাযথভাবে।
ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দীপ্ত প্রত্যয়ে। অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে ৫ বছরের পরিবর্তে ৪ বছর অন্তর জাতীয় নির্বাচনের রীতি চালু করা উচিত। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
ড. আতিউর তার দীর্ঘ গবেষণার আলোকে বলেন, বাংলাদেশের উদ্যমী মানুষের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গত ৩০ বছরে যতটা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, সেই ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতিও থাকতে হবে।
১৯৮৮ সালে গঠিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ’ (বিডিআই) এর উদ্যোগে এই সম্মেলনে কানাডা, বাংলাদেশসহ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দেড় শতাধিক পেশাজীবী অংশ নিচ্ছেন। এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। কানাডার কলগেট ইউনিভার্সিটির নাভিদ মোর্শেদের সঞ্চালনায় এ পর্বে প্যানেলিস্ট ছিলেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির রুহুল আমিন, নারী পক্ষ এবং নবেল উইমেন ইন্সটিটিউটের শিরিন হক, বাংলাদেশ লিগেল এইড এ্যান্ড সাির্ভিস ট্রাস্টের পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হক, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক দিনা সিদ্দিকী। তারা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের সীমাহীন উদাসীনতার সমালোচনা করেন।
বিডিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ড. মুনির কুদ্দুস কর্তৃক স্বাগত বক্তব্যের পর গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে তার সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন বিডিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট এবং বোয়িং কোম্পানীর জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী ড. আশরাফ আলী। এ সময় ‘আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’র প্রেসিডেন্ট ড. গোলাম মাতবর তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ২৪টি ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচির আলোকপাত করেন।
এই সংগঠন ১৯৯৫ সালে প্রথম সম্মেলন করে পেনসিলভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গে। এরপর ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে হার্ভার্ডে, ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে-তে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনে সহযোগী হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে ইয়েল ইউনিভার্সিটির ম্যাকমিলন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ কাউন্সিল। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে চলার পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে এই সম্মেলনে এবার বিশেষ সম্মান জানানো হবে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে।আজীবন সম্মাননা এওয়ার্ড পাবেন তিনি।
এবারের সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. রেশমা হুসাম, নবেল উইমেন ইনিসিয়েটিভের শিরিন হক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সোসাইটির ব্যারিস্টার সারা হক, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ড. দিনা সিদ্দিকী প্রমুখ। উদ্বোধনী সেশনের সঞ্চালনা করবেন রাইস ইউনিভার্সিটির ড. ইলোরা সিহাবউদ্দিন এবং বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন অথবা গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করবেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মঞ্জুর আহমেদ, ব্রাউন ইউনিভার্সিটির রুহুল আবিদ, ইয়েল ইউনিভার্সিটির ম্যাকমিলন সেন্টারের মুশফিক মোবারক, স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের উপ-প্রধান অঞ্জনী জেইন, হ্যান্ডারসন স্টেট ইউনিভার্সিটির হারুন এ খান, কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির নওরীন তাবাসসুম, ব্রুনেই’র দারুসসালেম ইউনিভার্সিটির এ কে এম আহসানউল্লাহ, কানাডার লরেনটিয়ান ইউনিভার্সিটির সদেকুল ইসলাম, সিপিডির ফাহমিদা খাতুন, মোহাম্মদ আল হাসান এবং সৈয়দ ইউসুফ সাদত, ঢাকা ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদ জিয়াউল হক মামুন, আবুরেজা এম মুজারেবা, ফারহানা কবীর, মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম, বেল্লাল হোসেন, এস এম আব্দুল্লাহ, মো. জাকিউল আলম, সায়েমা হক বিদিশা, এস এম আব্দুৃল্লাহ, জান্নাতুল ফেরদৌস, বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস’র জহিরুল হক এবং আসিফ ইউ আহমেদ, নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির বিরুপাক্ষ পাল, বিডসের রিজওয়ানা ইসলাম, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তানভির পাভেল এবং পল্লব মজুমদার, নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির সৈয়দ আবুল হাসান, বস্টন ইউনিভার্সিটির নাফিসা হালিম, বাংলাদেশের প্রাইসওয়াটার হাউজ কুপার্সের মামুন রশীদ, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির মিজানুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব নটরডেমের হেলাল মোহাম্মদ খান, ইয়েল ইউনিভার্সিটির হ্যারি ব্লেয়ার, জ্যাক বারনেট হাওয়েল, সাসেক্স ইউনিভার্সিটির নাওমি হোসাইন, বার্থ ইউনিভার্সিটির জিয়োফ উড, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসেচুসেটস’র ইলোরা এইচ চৌধুরী, রাটগার্স ইউনিভার্সিটির রওশন ফাতেমা, বাফেলো ইউনিভার্সিটির নাদিম মুর্শিদ, লেসলী ইউনিভার্সিটির নাফিসা তাঞ্জিম, তুলন মেডিকেল সেন্টারের এ কে এম মুক্তাদির, ইউএনডিপির শেখ মনিরুজ্জামান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর সৈয়দ সাদ আন্দালিব, এই ভার্সিটির নূর-ই ফয়জুননাহার, কাজি সাদিকা নূর, ডালিয়া রহমান, রুহি আন্দালিব হুদা, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের আহমেদ আহসান, ব্রীজ ফাউন্ডেশনের নাতাশা ইসরাত কবীর এবং মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গিরনগর ইউনিভার্সিটির আদিল মোহাম্মদ খান এবং মামনুনাহ জুবায়েদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি বিশেষজ্ঞ সুফিয়ান এ খন্দকার, মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটির শামিমা রায়হান মঞ্জুর, জাগো ফাউন্ডেশনের করবী রাকশান্ড ধুব, আইএফ আইসি ব্যাংকের শাহ আলম সরোয়ার, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আনিস খান, জাতিসংঘ পপুলেশন কাউন্সিলের সাজেদা আমিন, ইউনিভাসিটি অব কেন্টের জাকি ওয়াহহায, আমেরিকা ইউনিভার্সিটির তনিমা আহমেদ এবং অর্ণব আলম, আরবান স্টাডি গ্রুপের দ্বৈত বনতুলশী, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির আরিফুল ইসলাম ভূইয়া, প্রেইরি ভিউ এ এম ইউনিভার্সিটির নাবিলা শামিম, আইসিএমএ’র লক্ষী রাণী কুন্ডু, কম্প্যুটার এইডেড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পার্থ মোদক এবং সুকোমল মোদক, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের সাকিব মাহমুদ, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েই কাটুরের গাজী এম হাসান, টিআইবির জাকির হোসেন খান, শাহজালাল ইউনিভাসিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির আব্দুল হান্নান প্রধান, শামসুল আরেফিন এবং নওরোশ জাহান, লকহ্যাভেন ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসের আহমেদ বদরুজ্জামান, সঞ্চিতা সাক্সেনা, কিউনি স্কুল অব ল’র এটর্নি সমতলী হক, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারলিনার মিনু তেওয়ারি, লেবার ভয়েজের কহল গিল, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির সাঈদ আজিজ, ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি কলেজের ফাইজুল ইসলাম, আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ফারাহ তাসনীম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সায়েরা ইউনুস, মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সেমিনারের হোস্ট বিডিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মুনির কুদ্দুস, ভাইস প্রেসিডেন্ট রহিম কাজী এবং নির্বাহী সদস্য ড. ফাইজুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসব সেমিনারের আলোকে পরবর্তীতে একটি সুপারিশমালা রচিত হবে। পরে যা বাংলাদেশ সরকারের নীতি-নির্ধারকসহ আন্তর্জাতিক মহলে বিতরণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা
