উৎসবমূখর আবহে ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, আঙ্কারাতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করা হলো। গত ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রদূত এম. আল্লামা সিদ্দীকী’র নেতৃত্বে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এরপর দূতাবাসের অভ্যর্থনা কক্ষে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে দূতাবাস মিলয়নায়তনে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতেই দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
বাণী পাঠ সম্পন্ন হলে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রেক্ষাপট বর্ণনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'র অসামান্য নেতৃত্ব গুণ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তার অতুলনীয় অবদানের কথা গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ওইদিন সন্ধ্যায় আঙ্কারাস্থ শেরাটন হোটেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তুরস্কের জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী জিয়া সেলজুক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে তুরস্কের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উমিট ডুনদার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সামরিক বিভাগের কর্মকর্তা, ৫৪টি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সদস্যগণ এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীসহ ৫০০ জনের অধিক অতিথি উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত তার সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদূর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উন্নয়নের চিত্র এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রসরতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
এছাড়া তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পোর্কন্নোয়নে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন। প্রধান অতিথি জিয়া সেলজুক তার বক্তব্যে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান এবং তুর্কী সরকার ও জনগনের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক গভীরতর করার ক্ষেত্রে তার সরকারের আন্তরিক প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, দু’দেশ উভয়ের ক্রান্তিকালে একে অপরের সহযোগিতা করেছে এবং তাদের জনগণের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দৃঢ়তর করেছে।
তুরস্কের জনসাধারণের কাছে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের ইতিহাসকে সার্বিকভাবে তুলে ধরতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-এর ৪৮তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ দূতাবাস অতীতের ধারাবাহিকতায় “EMERGING BANGLADESH BEKONS”-শীর্ষক একটি বিশেষ প্রকাশনা মুদ্রণ করেছে। তুরস্কের জনসাধারণের কাছে বাংলাদেশকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে ২০০ পৃষ্ঠার তথ্যভিত্তিক উক্ত প্রকাশনাটি ইংরেজি এবং তুর্কী উভয় ভাষায় মুদ্রণ করা হয়।
প্রধান অতিথি জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী জিয়া সেলজুক, বিশেষ অতিথি তুরস্কের সেনাবাহিনী প্রধান উমিট ডুনদার এবং রাষ্ট্রদূত এম. আল্লামা সিদ্দীকী যৌথভাবে প্রকাশনাটির মোড়ক উন্মোচন করেন। অতপর উপস্থিতিদের মাঝে সমৃদ্ধশালী বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাংলাদেশী এবং তুর্কী মেয়েদের সমন্বয়ে প্রাণবন্ত নৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলাকালীন বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, বাণিজ্য, বিনিয়োগ সুবিধা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রার উপর ৩টি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। দূতাবাস হোটেলের ছবি গ্যালারীতে দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী, সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা শীর্ষক একটি আলোক চিত্র-প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর