স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নিউইয়র্কে মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘বাংলাদেশ ইজ দ্য মিরাকল অব ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক কনসার্টের আহ্বান জানানো হলো একাত্তরের ১ আগস্ট ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র আদলে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের পাশাপাশি শরনার্থীদের তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালনকারি সেই কনসার্টের ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এক সুধীসমাবেশে প্রধান অতিথি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা এ আহবান জানান।
এ সময় তারা উল্লেখ করেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এক কোটি বাঙালিকে ভারত আশ্রয় দেয়। সময়ের পরিক্রমায় সেই দেশটিতে এখন আশ্রয় পেয়েছে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অকুন্ঠ সমর্থনে মানবিকতার এ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এভাবেই জাতিরজনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় অদম্য প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ-বিস্ময়কর এই তথ্য আমেরিকানদের তথা বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবহিত করতেই এমন কনসার্টের ভীষণ প্রয়োজন। একইসাথে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এই কনসার্ট অসাধারণ ভূমিকা পালন করবে।
‘ফ্রেন্ডস অব ফ্রিডম’ নামক একটি সংগঠনের ব্যাপারে জ্যাকসন হাইটসে জুইশ সেন্টারে এ অনুষ্ঠান শুরু হয় জর্জ হ্যারিসনের সেই গানের কিছুটা অংশ এবং পন্ডিত রবিশংকরসহ অন্যদের সর্বাত্মক সহায়তা উপস্থাপন করা হয়।
প্রজেক্টরের মাধ্যমে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ সংগীত হওয়ার সময় উপস্থিত সকলেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। স্মৃতির পর্দায় ভেসে বেড়ায় একাত্তরের বাঙালির বিরত্বগাঁথা অধ্যায়। ঘৃণা বর্ষিত হয় পাক হায়েনাদের বর্বরতার প্রতি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগ্রত রাখার অভিপ্রায়ে চমৎকার এ আয়োজনের নেপথ্য সংগঠক সাংবাদিক শামিম আল আমিনের উপস্থাপনা ও সঞ্চালনায় হোস্ট সংগঠনের প্রধান ডা. ফেরদৌস খন্দকার এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদও বক্তব্য রাখেন। শেষ লগ্নে নতুন প্রজন্মের শিল্পী মাহী কর্তৃক জর্জ হ্যারিসনের গানটি পরিবেশনের সময়েও সকলে অভিভূত হন। এরপর সেই গানের বাংলা অনুবাদে কবিতা আবৃত্তি করেন মোহাম্মদ আলী বাবুল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন ‘শোকের মাস আগস্ট’ উপলক্ষে জাতির জনক ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যগণের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। উল্লেখ্য যে, কয়েক বছর আগে একাত্তরের সেই কনসার্টের স্মরণে নিউইয়র্ক সিটির সেন্ট্রাল পার্কে বহুজাতিক এক সমাবেশ হলেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে এটিই প্রথম ঘটনা ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ স্মরণে। এই পথ বেয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি তথা ২০২১ সালে মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে একটি কনসার্টের যে প্রসঙ্গ কূটনীতিকরা অবতারণা করেছেন, তার জন্যে কমপক্ষে ৫ লাখ ডলার প্রয়োজন। কে দেবে এ অর্থ-এটি প্রশ্ন হিসেবে এসেছে প্রবাসীদের কাছে।
একাত্তরের সেই কনসার্টের উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্বখ্যাত সিতারা বাদক পন্ডিত রবি শংকর। তারই প্রস্তাবে সাড়া দেন তদানিন্তন বিশ্বখ্যাত বিয়াটলস’র লীড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন। সাথে ছিলেন রিঙ্গো স্টার, বব ডিলন, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল। ব্যান্ড দল ছিল ব্যাডফিঙ্গার। রবি শংকরের টিমে আরো ছিলেন ওস্তাদ আলী আকবর খান, আল্লারাকা,। কনসার্টের উদ্বোধন করা হয় ক্লাসিক্যাল মিউজিকের মধ্য দিয়ে। একইদিন দুপুর এবং সন্ধ্যায় দুটি কনসার্টে আড়াই লক্ষাধিক ডলারের টিকিট ক্রয় করেন ৪০ হাজার দর্শক, যার সকলেই ছিলেন আমেরিকান। সংগৃহীত অর্থ শরনার্থীদের জন্যে ব্যয় করেছে ইউনিসেফ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন