ব্রিটিশ হাইকোর্টের কোর্ট অব আপীল ডিভিশনে ঐতিহাসিক এক মামলার রায়ে দীর্ঘ ৫ বছর আইনি লড়াইয়ের পর আদালত এক আন ডকুমেন্টেড (অবৈধ বসবাসকারী) বাংলাদেশি মহিলাকে দুই সন্তানসহ দেশটিতে থাকার অনুমতি দিয়েছেন।
এ রায়ের ফলে এটা একটি রেফারেন্স ও কমন ল হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো অবৈধ ব্যক্তি দেশটিতে বিয়ে করে এই একই আইনের রেফারেন্সে এদেশে থাকার পথ সুগম হবে। যদি তার সন্তান (বাবা অথবা মায়ের রাইটে) ব্রিটিশ সিটিজেন হয় মামলাটি পরিচালনা করেন পূর্ব লন্ডনের ‘কালাম সলিসিটারস’।
জানা যায়, ২০০৬ সালের মে মাসে রুনা নামের এক বাংলাদেশি মহিলা ব্রিটেনে আসেন ভিজিটর হিসাবে। একই বছর নভেম্বর মাসে তিনি অবৈধ নাগরিক হয়ে যান। ২০১৪ সালে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মি. হোসাইনকে বিয়ে করেন। ২০১৫ সালে ১ এপ্রিল তিনি ভিসার জন্য আবেদন করলে সেটা ২০১৫ সালের জুনে প্রত্যাখ্যাত হয়।
তবে ২০১৬ সালে তাকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেয়া হয়। এরই মধ্যে মিসেস রুনা’র ২ জন সন্তান জন্ম নেয় যারা বাবার ব্রিটিশ সিটিজেন হওয়ার জন্য জন্ম সূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক। এর মধ্যে আপিল ও আপার ট্রাইব্যুনাল দুই জায়গায়ই রুনা প্রত্যাখ্যাত হোন। শেষ পর্যন্ত কোর্ট অব আপিলে গিয়ে জয় আসে।
১৪ আগস্ট শুক্রবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার আবুল কালাম, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট আব্দুল মতিন প্রমুখ ।
কালাম সলিসিটরস এর প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার আবুল কালাম বলেন, এটার মানে হচ্ছে আপনাকে শুধু হোম অফিসের সিদ্ধান্তের উপর ভরসা না করে সঠিক ন্যায় বিচার পেতে হলে কোর্টে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা কমিউনিটিতে আইনি সহায়তা দিচ্ছি তাদের আরও একটি জিনিস মাথায় রাখা উচিত, যেসব কেস কমিউনিটিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে সেসব কেসের ক্ষেত্রে লিগ্যাল ফিতে যেনো একটু ছাড় দেয়া হয়। কারণ কোর্টে গিয়ে আপিল করা অনেক খরচের ব্যাপার। এইসব কেস যখন রেফারেন্স হিসাবে দাড়িয়ে যায় তখন কিন্তু পরের কেসগুলো অনেক বেশি বেনিফিটেড হয়।
ক্লায়েন্টদেরও উচিত দক্ষ লিগ্যাল এডভাইজারদের কাছে যাওয়া। ঘরে বসে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি ওভার স্টে এই মহিলা একজন ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করে হোম অফিসে এদেশে থাকার জন্য আবেদন করলে তা নাকচ করা হয়। পরে একে একে দুই সন্তান হওয়ার পরও হোম অফিস আবেদন নাকচ করে। এ ব্যাপারে কোর্টের আশ্রয় নিলে ফাস্ট টায়ার ট্রাইব্যুনাল ও আপার টায়ার ট্রাইব্যুনালে তা প্রত্যাখ্যান করে। অবশেষে কোর্ট অব আপীলে গিয়ে বাঙালি মহিলা বিজয় লাভ করেন এবং দুই সন্তানসহ ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পান।
ইতোমধ্যেই এই আইন অনলাইনে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ আইনজ্ঞদের আর্টিকেল ও আইন বিষয়ক পরামর্শে রুন ভার্সেস সেক্রেটারি অব স্টেইট সেকশন ১১৭ বি (৬) নামে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ আবু জাফর