যথাযোগ্য মর্যাদায় ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে পালিত হল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এদিন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য গোষ্ঠিকে চিহ্নিত করতে জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীর সভাপতিত্বে অনলাইনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে সংগঠনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটারন্স’ ১৯৭১-ইউএসএ ইনক-এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নেতৃবৃন্দরা।
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সভার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরে নিহত সকলের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাহাত্তরে সদ্যস্বাধীন বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির ভাষণ মঞ্চের খুব কাছে থেকেই শোনার সুযোগ আমার হয়েছিল, যেটা আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে এসেই রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে প্রধামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু জাতির মধ্যে যে ঐক্য তিনি গড়েছিলেন, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সেই ঐক্যে ফাটলের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মেজর রশিদ ও মেজর ফারুক গংরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। কিন্তু এদের নেপথ্যে যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী ছিল, আজও তা আমাদের অজানা রয়ে গেল। আমি দাবি জানাই একটি জাতীয় কমিশন গঠন করে নেপথ্যের সেই ষড়যন্ত্রকারীদের নাম-পরিচয় উদঘাটন করে জাতির কাছে তা প্রকাশ করার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশাল একটি বিষয়, যেটা অনেক গবেষণার দাবি রাখে। আমরা যারা সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি, আমরা গৌরবান্বিত। সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আসুন আমরা সবাই সকল ভেদাভেদ ভুলে জননেত্রীর নির্দেশে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ায় কাজ করি।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ বলেন, স্বাধীনতার পরে আমরা অনিশ্চয়তায় ছিলাম বঙ্গবন্ধু ফিরবেন কিনা। বঙ্গবন্ধু যদি ফিরে না আসেন তাহলে আমাদের কি হবে, বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের কি হবে। এমন শঙ্কায় যখন আমরা ভুগছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে তখনও আমাদের পাশে ছিলেন যিনি, যার কাছে বাংলার মাটি ও মানুষ সবচেয়ে ঋণী- তিনি হচ্ছেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। বঙ্গবন্ধু নিজেই তার ভাষণে বলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের জনগণের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব না। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পরেও যারা আজ ভারতের বদনাম করে, ভারতকে সহ্য করতে পারে না, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের সাথে আপোষকারী বলে বদনাম ছড়ায়, তারা হচ্ছে পাকিস্তানপন্থী, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে আমাদের সকলকে।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন, তখনও স্বাধীনতা বিরোধীরাই নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই নিউইয়র্কে ঘাঁটি গেড়ে জামায়াত-শিবির আর ফ্রিডম পার্টির শয়তানেরা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। একটি জাতি-রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন লাগাতার অপপ্রচারণায় লিপ্তদের ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক ও টুইটার নিষিদ্ধ করতে সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমীপে আবেদন জানানো উচিত।
সভায় অপর বক্তারা বলেন, জাতির জনক একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে ছিলেন। তিনি বাঙালি জাতিকে মাথা উঁচু করে বীরের বেশে বেঁচে থাকার জন্য শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আমাদেরকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে স্বপ্নের বাংলাদেশ রূপান্তরিত করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যেতে হবে।
এসময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা এম এ সালাম (নিউজার্সি), সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম বাদশা, সদস্য শেখ আতিকুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কলামিস্ট শীতাংশু গুহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রানা মাহমুদ, আটলান্টা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, পেনসিলভেনিয়া শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বীর প্রতীক ও সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম, গ্রেটার ওয়াশিংটন শাখার সভাপতি দস্তগির জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আহম্মেদ, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাজমুল রতন, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আল আমিন হোসেন, ড. দেলোয়ার হোসেন (আলাবামা), মেগি হালিম (টেক্সাস) প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক