সিডনির গ্রেগ পারসিভাল কমিউনিটি হল, ইংগেলবার্নে বসেছিল এবারের পিঠা উৎসবের আসর। বিগত বছরগুলিতে পিঠা উৎসবের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার প্রেক্ষিতে ২০১৯ থেকে এই উৎসব স্কুল প্রাঙ্গণের বাইরে আয়োজিত হচ্ছে। গত দুবছর করোনা মহামারীর জন্য পিঠা উৎসব আয়োজন সম্ভব হয়নি।
রবিবার ১৯ জুন সকাল দশটায় বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান সবাইকে স্বাগত জানান। এর পরপরই পিঠা উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলা সঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী সেলিনা আজাদ।
এবারের উৎসব সকাল থেকেই ব্যাপক উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেয়া ভোজন রসিক ও সংস্কৃতি প্রেমিক মানুষের কল কাকলিতে উৎসব স্থল মুখরিত হয়ে ওঠে।
বৃন্দ আবৃত্তিতে অংশ নেয় রাইসা, ইয়ারা, ইয়াশফীন, নুসাইবা, কাইজান, সোহারদিতি, আদিল, তাইশা, সাফা, রেহনুমা, অলিভিয়া, মারজান, অর্ণা, রাইয়ান, আজনিহা, জাফিরা,নাশভা, অস্কার, নুসায়বা, নাজিফা, আদিয়ান, আমিনা, অনিরুদ্ধ, মাহরুস, রাকিন ও আনিকা। দৈত্ব আবৃত্তি করে মারজান ও অর্ণা এবং রাকিন ও আনিকা।
একক আবৃত্তিতে অংশ নেয় ইয়াশফিন, রাইনা, নুসাইবা, রুখসার, রাইসা, রাজীন, আনিকা,আলিশা ও দৃপ্ত। বাংলা বই দেখে গল্প পড়ে শোনায় ইয়ারা ও রুশনান। একক সংগীত পরিবেশন করে এলভিরা, রেহনুমা ও সাফা। একক নৃত্যে অংশ নেয় মেহুলি ও বাংলা পাঠশালার ছাত্রী তারা।
পরবর্তীতে স্কুলের নিজস্ব শিল্পী এবং আমন্ত্রিত সিডনীর বরেণ্য শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। বেহালায় রবীন্দ্র সংগীতের সুর সৃষ্টি করেন বাংলা স্কুলের শিক্ষক আবীর হারুণী। সংগীতের মূর্ছনায় সবাইকে বিমুগ্ধ করেন ফারিয়া, নাজিম, তৃপ্তি খান, সাজ্জাদ আহমেদ, অমিয়া মতিন, ঐন্দ্রিলা আহমেদ, আনিসুর রহমান ও রোকসানা বেগম এবং মিঠু স্বপ্ন ও দিনা ইভানা।
দোতারায় আবহমান বাংলার মেঠো সুর তুলে আনেন তারিক আহমেদ। আবৃত্তিতে অংশ নেন মৌমিতা চৌধুরী ও শাহিন শাহনেওয়াজ। শুদ্ধ সংগীতের শীর্ষ নাম প্রতীতির পরিচ্ছন্ন ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন। নৃত্যে অংশ নেয় ঐশী ও প্রতীতি। কৌতুক অভিনেতা ওয়াসিফ আহমেদ শুভ এর হাস্যকৌতুক উৎসবের বৈচিত্র্যময় মেজাজের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটায়। সব শেষে আশির দশকের বাংলা বাণিজ্যেক চলচ্চিত্র ছায়া অবলম্বনে একটি হাসির নাটক উপস্থিত দর্শকদের শেষ বেলায় নির্মল আনন্দ দিতে সক্ষম হয়।
নাট্যাভিনেতারা হলেন মসিউল আজম খান স্বপন, মহসিন খান, তারিক আহমেদ, ওয়াসিফ আহমেদ শুভ, মাসুদ পারভেজ, ফারহানা বিথি ও আহমেদ সাগর। ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনা বাংলা স্কুলের কার্যক্রম তুলে ধরে সবার সন্তানদেরকে বাংলা স্কুলে নিয়ে আসতে অনুরোধ করেন।
বরাবরের মতো এবারও অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেরা বাঙালি সাজের জন্য পুরস্কার। পুরুষ, মহিলা, ছেলে ও মেয়ে এই চারটি শাখায় বাঙালি সাজ পোষাকের জন্য এই পুরস্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন এবারের পিঠা উৎসব আহ্বায়ক নাজমুল আহসান খান, সঞ্চালনায় ছিলেন বিশাখা পাল, অনিতা মন্ডল, শায়লা ইয়াসমিন নুসরাত, মৌমিতা চৌধুরী, ফারহানা বিথি ও আজীম সাগর। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন দেশ বরেণ্য সংগীতজ্ঞ সিরাজুস সালেকিন এর নেতৃত্বে প্রতীতির শব্দ প্রকৌশলী বৃন্দ।
শিল্প নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন ফায়সাল খালিদ শুভ, কারিগরি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় ছিলেন রাফায়েল রোজারিও এবং সহায়তায় ছিলেন আবীর হারুণী ও ব্রতী। এবারের পিঠা উৎসবে প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন ইয়াকুব আলী। হিসাব সংরক্ষণে ছিলেন নুরুল ইসলাম শাহিন।
আপ্যায়নে ছিলেন শাহীন, মহসিন, কিবরিয়া, এহসান, মাসুদ, মৃন্ময়, রঞ্জন, নুসরাত, তাবাসসুম, সংগীত, ইয়াকুব, তানিয়া, সাবিহা, আজিজ, সায়মা, তারিক, টপি, নূরীণ, সারিনা, তাহিয়া, সৃজা, রোদোশী, রাত্রি, আনিকা, লুৎফা, আইরিন, অনু, নুসরাত, ফারহানা, আলিশা, হোসেন, ফেরদৌস, মেগডালিনা, বর্ণী ও দিশা।
বিকাল ৫টায় সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামীতেও সবার সহযোগিতা কামনা করে পিঠা উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি মসিউল আজম খান স্বপন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল