২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৩:১৭

কানাডার টরন্টোতে ‘তিতাস পারের মানুষটি’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত

কানাডা প্রতিনিধি

কানাডার টরন্টোতে ‘তিতাস পারের মানুষটি’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত

টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে কানাডার টরন্টোতে ‘তিতাস পারের মানুষটি : শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। 

দেশটির স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম উপস্থাপিত হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নে প্রথম কথা বলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। সেই সময়ে পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রায় শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। ফলে অন্যায় ও অন্যায্যতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করা বাংলার মৃত্তিকার এই জনবান্ধব ক্ষণজন্মা মানুষটি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপন করেন। অধিবেশনে তার সেই বক্তৃতায় তিনি সাধারণ মানুষের কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব বাংলার প্রধানতম ভাষা হিসেবে বাংলা কেন অবশ্যাম্ভাবী সেটার পক্ষে যুক্তি দেন। তার সেই বক্তৃতায় ছিল যুক্তি, ন্যায্যতা, প্রাসঙ্গিকতা আর দৃঢ়তা। সেই অধিবেশনেই সেই সময়ের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর সাথে তার বাদানুবাদ শুরু হয় রাষ্ট্র ভাষা প্রশ্নে। ফলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে উঠেন সেই সময় পাকিস্তানের প্রথম ও প্রধান শত্রু। আজীবন মানুষের মাঝে ভালোবাসা বিলানো এই মানুষটি ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর জন্মেছিলেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর পারে। 

স্কুলজীবন থেকেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী এবং তখন থেকেই প্রান্তিক স্তরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তিনি কাজ করে গেছেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য প্রথম কারাবরণ করেন তিনি ১৯৩০ সালে। তারপর দফায় দফায় তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে, কখনও ব্রিটিশ জেলে আবার কখনও পাকিস্তান জেলে। কিন্তু তিনি কখনই তার বিশ্বাস আর আদর্শ থেকে চ্যুত হননি। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তিনি প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন। তার মন্ত্রীত্বের সময়ই পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য কাঠামো তৈরি হয়। 

পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালের পর থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বার বার হয়তো জেলে যেতে হয়েছে, অথবা গৃহবন্দী হিসেবে সময় কাটাতে হয়েছে। তার উপর পাকিস্তান সরকারের চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেমে আসে, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ। সেদিন গভীর রাতে তার কুমিল্লার বাসভবন থেকে তাকে আর তার কনিষ্ঠ পুত্র দিলীপ দত্তকে হানাদার বাহিনীরা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট ধরে নিয়ে প্রায় চৌদ্দ পনের দিন অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল পঁচাশি বছর। 

চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শেষে ঢাকা থেকে উপস্থিত দর্শকদের সাথে অনলাইনে কথা বলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী আরমা দত্ত এমপি। চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল ভিডিও’র মাধ্যমে চলচ্চিত্র দেখার জন্য উপস্থিত দর্শকদের শুভেচ্ছা জানান এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে কথা বলেন। এছাড়া উপস্থিত দর্শকদের পক্ষ থেকে চলচ্চিত্রটি নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিক সুব্রত নন্দী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সেলিম চৌধুরী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আসমা আহমেদ, টরন্টো বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক সাদী আহমেদ ও টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুল। 

চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর