২৮ মার্চ, ২০২০ ১৩:৪৭

লকডাউন ছাড়াই সিঙ্গাপুরে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে করোনাভাইরাস

শেখ আকতার উদ্দীন আহমেদ

লকডাউন ছাড়াই সিঙ্গাপুরে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে করোনাভাইরাস

শেখ আকতার উদ্দীন আহমেদ

প্রথমে সংক্ষেপে সিঙ্গাপুর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক। সিঙ্গাপুরের আয়তন ৭২৫.৭ বর্গ কিলোমিটার (২৮০.২ বর্গ মাইল), জনসংখ্যা ৫৬,৩৮,৭০০। তার মানে বাংলাদেশের একটি মাঝারি উপজেলার আয়তনের সমান। কিন্তু এরিয়া অনুযায়ী একটি ঘন বসতিপূর্ণ দেশ। সিঙ্গাপুরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০,২১২ জন বসবাস করেন আর বাংলাদেশে বসবাস করেন ১,১০৬ জন। 

সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সনাক্তের সংখ্যা ৭৩২ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৮৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা ২ জন।  তাহলে এত ঘনবসতির দেশ হয়েও কীভাবে সিঙ্গাপুর লকডাউন ছাড়াই করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাখলো? 

সিঙ্গাপুর সচেতনতার দিক দিয়ে পৃথিবীর একটা শ্রেষ্ঠ দেশ তা আরো একবার প্রমাণ করলো। চীনের উহানে গত বছরের ডিসেম্বরে করোনা সনাক্ত হওয়ার পর পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো হালকাভাবে নিলেও সিঙ্গাপুররের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এটাকে হালকাভাবে নেয়নি। যার কারণে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো প্রতিদিন হাজার হাজার করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হলেও সিঙ্গাপুরের চিত্র ঠিক তার বিপরীত।

এখন দেখা যাক সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি কি পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলো:   

১।  চীনের উহানে ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর ২ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উহান থেকে আসা সবগুলো ফ্লাইটের যাত্রীদের টেম্পারেচার স্ক্রিনিং শুরু হয়। 

২।  ২০ জানুয়ারি চীন থেকে আসা সব ফ্লাইটের যাত্রীদের টেম্পারেচার স্ক্রিনিং শুরু হয় এবং চীন থেকে আসা সকল যাত্রীকে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক নির্দিষ্ট স্থানে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়, যে স্থানটি আগেই সব যাত্রীদের সকল সুযোগ সুবিধা বজায় রেখে প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো। 

৩।  ২৩ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে প্রথম সনাক্ত হয় করোনাভাইরাস, আক্রান্ত ব্যক্তি চীনা নাগরিক যিনি চীনের উহান থেকে ২২ জানুয়ারি এসেছিলেন। 

৪।  ২৪ জানুয়ারি বিমানবন্দর, স্থল বন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে আসা সকল যাত্রীর স্ক্রিনিং শুরু হয়। সন্দেহজনক যাত্রীদের আলাদা করে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। যেটা এখনো অব্যাহত আছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণকারীদের সিঙ্গাপুর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।  

৫।  ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন কয়েকজনের মধ্যে এই ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, শপিং মলসহ সবকিছু খোলা রেখে সমগ্র সিঙ্গাপুরে চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। বিনা প্রয়োজনে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব (একজন থেকে আরেক জনের দুরুত্ব কম পক্ষে ৩ ফুট)  বজায় রাখতে বলা হয় এবং মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটিইজার ব্যবহার করতে উপদেশ দেওয়া হয়, যেটা সবাই মেনে চলছেন এবং অব্যাহত আছে। 

এই সমস্ত পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ গ্রহণের ফলে তাঁরা এই মরণঘাতি করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। 

সবাই একটু সতর্ক হলেই এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যার উদহারণ সিঙ্গাপুর, সচেতন জনগণের সহযোগিতায় তারা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। আমরা যদি বিনা প্রয়জনে ঘর থেকে বের না হই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশগুলো মেনে চলি তবে এই ঘাতক করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হন। 

লেখক: ব্যাংকার, মালয়েশিয়া।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর