সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেসবুকের রাজকুমারী

হামীম রায়হান

ফেসবুকের রাজকুমারী

ইদানীং সেন্টু ভাই ফেসবুকে নেই। অথচ এক সপ্তাহ হয়নি তিনি ফেসবুকে নতুন একাউন্ট খুলেছিলেন। একাউন্টের নাম ছিল ‘এলোমেলো সেন্টু’। প্রোফাইলে ডিএসএলআর দিয়ে একটা হিরো মার্কা ছবি দিয়েছিলেন। প্রতিদিনই শত শত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসত। সেন্টু ভাইও বেছে বেছে সুন্দর ছবিওলা মেয়েদেরই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন। এক দিন এক মেয়ে রিকোয়েস্ট পাঠাল। সুন্দর নাম ‘স্বপ্নপুরীর রাজকুমারী’। সেন্টু ভাই পারলে খুশিতে আকাশে উড়তে শুরু করেন। একটু পরই মেয়েটি মেসেজ দিল, ‘আমাকে বন্ধু করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার চেহারা একদম বাংলা সিনেমার নায়কের মতো। আমি তো আপনার ছবি দেখে পাগল হয়ে গেছি।’ এমন মেসেজ পড়ে সেন্টু ভাই রীতিমতো গলে গেলেন। সেই থেকে শুরু। সারা দিন চলে সেই মেয়ের সঙ্গে তার ফেসবুক কথন। নাওয়া নাই, খাওয়া নাই, মাঠে খেলতেও যান না এখন। গেলেও মাঠের কোণায় বসে চলে তার মোবাইল ব্যস্ততা! মোবাইল দেখে মুচকি মুচকি হাসেন।

এক দিন মেয়েটি সেন্টু ভাইকে দেখা করতে বলল। সেন্টু ভাই তো আনন্দে আটখানা। কত কী ভাবে বসে বসে! প্রথম দেখায় কী করবে, কেমন কাটবে, কী উপহার দেওয়া যায় এসব। মেয়েটি এক ডাকবাংলোতে দেখা করতে বলল। তারপর তারা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা করার প্ল্যানও করল। মেয়েটি একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেও জানাল। এসব শুনে সেন্টু ভাইয়ের তো আর তর সইছে না। আগামী শনিবার সকাল নয়টায় ডাকবাংলোতে দেখা হওয়ার কথা। আগের দিনই সেভ ও ফেসিয়াল করেছেন। গোসল করে নীল পাঞ্জাবিটা পরলেন। সঙ্গে জিন্স, জুতা আর হাতে দামি ঘড়ি। পকেটে টিউশন থেকে এডভান্স নেওয়া পাঁচ হাজার টাকা। ডাকবাংলোর ভিতরে মাঠে গিয়ে দেখেন বেঞ্চে একটা মেয়ে বসে আছে। কথামতো মেয়েটির পরনে নীল কাপড়। পেছন থেকে মেয়েটির চেহারা কিছুটা দেখা যাচ্ছে! বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটি সেই মেয়ে, এ তো ফেসবুক থেকেও সুন্দরী! আশপাশে কয়েকটা ছেলে ঘুরঘুর করছে। সুন্দরী মেয়ে এভাবে একা একা বসে থাকলে তো ছেলেরা এভাবে ঘুরবেই। ভাই ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন। মেয়েটির সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। মেয়েটি তাকে দেখেই বলে ওঠে, ‘উফ! আপনি তো অনেক সুন্দর!’ এ যেন সেন্টু ভাইয়ের মনের কথাই বলল। ভাই তো লজ্জায় কোনো কথাই বলতে পারছেন না। মেয়েটি ভাইকে পাশে বসালেন। ভাইও বসলেন পাশে। আর ভাবছেন ভবিষ্যতের কথা। এমন সময় ভাইয়ের মাথায় কে যেন পেছন থেকে টোকা দিল। পেছন ফিরে দেখে আরে এ তো সেই ছেলে, যে এতক্ষণ আশপাশে ঘুরঘুর করছিল। দেখেন আরও তিনজন ছেলে পেছনে এসে দাঁড়াল।

‘ওই বেটা, এটা কি প্রেম করার জায়গা?’

তাদের এমন অগ্নিমূর্তি দেখে ভাই হঠাৎ দমে গেলেন। কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না। ভাবলেন হয়তো রাজকুমারী তাকে রক্ষা করবে। তা ভেবে পাশে তাকালেন। দেখে তো অবাক! মেয়েটি তার পাশে নেই। একটু দূরে মেয়েটি দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। আর বলছে, ‘আরে তাড়াতাড়ি কর। আরেকটারে দশটায় আসতে বলছি। ব্যাটার হাতঘড়িটাও নিয়ে নে। দামি ঘড়ি।’ পকেটে থাকা পাঁচ হাজার টাকা, চোখের চশমা, হাতের ঘড়ি আর মোবাইলখানা দিয়ে সেন্টু ভাই দুটো চড় খেয়ে ফিরে এলেন। সেদিন এসেই সেন্টু ভাই তার ফেসবুক একাউন্টটা বন্ধ করে দেন!

 

পটিয়া, চট্টগ্রাম

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর