সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

দেলু মিয়া হাজির

আফরীন

দেলু মিয়া হাজির

মাকে বলেছিলাম একজন রান্নার লোক পাঠাতে। কাপড় আমি ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে নিই। ঘর পরিষ্কারের কাজ ছুটির দিনগুলোতে সেরে ফেলি। সমস্যা কেবল রান্নাটা। বাইরের খাওয়া খেয়ে খেয়ে শরীরের বারোটা বেজে গেছে। আর নেওয়া যাচ্ছে না। এক খালাকে রেখেছিলাম। কিন্তু উনার হাত টানের যা ধাত ছদিনের মাথায় বিদায় করে দিতে হয়েছে। ছদিনে মাসের বাজার গায়েব করে দিয়েছে। আর দুদিন সময় পেলে বোধহয় আসবাবপত্রগুলোও কাপড়ের তলায় লুকিয়ে নিয়ে যেত। কিন্তু মা যাকে পাঠাল তাকে দেখে আমার মাথায় হাত। ঢোলা একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর তার চেয়েও ঢোলা একটা হাফশার্ট পরে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে পোঁটলার মতো একটা ব্যাগ। ‘এ্যাই, নাম কি তোর’? ‘দেলু’। ‘ভালো নাম বল’। ‘দেলু মিয়া’। ‘বয়স কত’? ‘এগারো বছর’। মা কি আমার সঙ্গে রসিকতা করছে? চেয়েছি মাংস পাঠিয়েছে আলু। একে দিয়ে আমি করব কি? এখনই একে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মাকে ফোন করলাম। ‘পছন্দ হয়েছে ছেলেটাকে?’ ‘কি বলছ এসব? আমি রান্না করতে পারবে এমন কাউকে চেয়েছিলাম। তুমি যা পাঠিয়েছ তাকে তো আমার রান্না করে খাওয়াতে হবে।’ ‘শোন, আপাতত কাজ চালিয়ে নে। ছেলেটা বেশ কাজের। দেখিয়ে দিলে সব পারবে।’ ‘মা, ছোটদের দিয়ে কাজ করানো ঠিক না। তুমি জানো এটা।’ ‘তাহলে কিছু করাতে হবে না। এমনি রেখে দে। ছেলেটার থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। দু-চার দিন যাক। তারপর দেখি কি করা যায়। রাখ, ফোন রাখ।’ মা লাইন কেটে দিয়েছে। উদ্ভট মহিলা। ছেলেটা হাসছে। দেখে মনে হলো খুব মজা পাচ্ছে। ‘মেডাম, একটা গোপন কথা কই। আমার বয়স তের বছর। ছোট মাইনষের লিগা দয়ামায়া বেশি আহে। এ জন্য দুই বছর কমায়া কই।’ আমি রাগে কথা খুঁজে পাচ্ছি না। ছেলেটাকে থাকার জায়গা দেখিয়ে দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বসলাম। একটু পরে দেখি সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ‘কিরে, কিছু বলবি?’ ‘মেডাম, টিবির রিমুটটা দ্যান। খিদা লাগছে।’ মাথায় ঢুকল না। ‘ক্ষুধার সঙ্গে রিমোটের কি সম্পর্ক?’ ‘টিবির দিকে চাইয়া থাকলে খিদার কতা মনে থাহে না। আপনের মেজাজ ভালো নাই। এহন খাওন চাওন ঠিক হইব না। এই জন্য রিমুট চাইছি।’

এই ছেলে দেখছি ভারি চালাক। এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দিল। আমি গলার স্বর গম্ভীর রেখে বললাম, ‘ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলবি না। যা দরকার সরাসরি বলবি।’ ‘তাইলে মেডাম, খাওন দেন, রিমুটটাও দেন। খাইতে খাইতে টিবি দেহি।’ ‘ফ্রিজে কি আছে দেখ। কিছু একটা খেয়ে নে। রিমোট সেলফের ওপর আছে। সাউন্ড কমিয়ে দেখবি। কাজের সময় একদম বিরক্ত করবি না।’ ‘আইচ্ছা, মেডাম’। খুশিতে দাঁত বের হয়ে গেছে। আমি বললাম, ‘ম্যাডাম ম্যাডাম করার দরকার নেই। উচ্চারণ তো করতে পারিস না ঠিকমতো। আপা বলবি, আপা। যা এখন। ‘ঘণ্টাখানেক নির্বিঘ্নে কাজ করলাম। দেলুর কোনো সাড়াশব্দ নেই। উঠে ড্রয়িংরুমে গেলাম। দেলু ফ্লোরে বসে হাত-পা ছড়িয়ে চোখ গোল গোল করে টিভি দেখছে। কোলে আচারের বৈয়াম। সামনে ছড়ানো ছিটানো খাবারের উচ্ছিষ্ট। এই এক ঘণ্টায় সে এক বৈয়াম কাজু বাদাম, বড়সড় এক প্যাকেট চানাচুর, এক বাটি কর্নস্যুপ, দুই পিস চিকেন ফ্রাই, চারটা কলা, দুইটা আপেল আর আধা বৈয়াম আচার শেষ করে ফেলেছে। কাজু বাদামে আমার মিনিমাম পনেরো দিন চলে যেত। বিশাল সাইজের দুইটা চিকেন আমি একবারে শেষ করতে পারি না। আমার মাথাটা ঘুরে উঠল। আগের খালা কি এর চেয়ে ভালো ছিল না? বাসায় তো কিছু রেখে গিয়েছিলেন। এই ছেলে তো কিছু রাখবে বলে মনে হয় না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর