মামুন যে মেয়ের পিছনে ঘুর ঘুর করে তার নাম বিলকিস। বিলকিসের তিনটা কুকুর। সবকয়টা বিদেশি। প্রতিদিন বিকালে বিলকিস কুকুরের গলায় চেইন ধরে রাস্তায় হাঁটতে বেরোয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে মামুন। উদাস নয়নে সে বিলকিসকে দেখে আর এলাকার নেড়ি কুকুরগুলোকে কফি বিস্কুট খাওয়ায়। বিলকিসের সঙ্গে বহুদিন ধরে সে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে। কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না। বিলকিসের দুই বড় ভাই আছেন। তারা সবাই এলাকার উঠতি পাতি মাস্তান। রাস্তাঘাটে তাদের হাতে ধরা পড়লে, যে পরিমাণ ধোলাই খেতে হবে তার ইচ্ছা, স্বাদ কিংবা শারীরিক সামর্থ্য কোনোটাই মামুনের নেই। তবে একদিন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঘটনা ঘটল। এলাকায় ক্যারমবোর্ড খেলতে গিয়ে মামুন লক্ষ্য করে, দোকানে দোকানে পোস্টার বিলি চলছে। বিলকিসের তিন কুকুরের জন্য একজন কেয়ারটেকার প্রয়োজন। কেয়ারটেকারের কাজ সময় মতো তিন কুকুরকে খাওয়ানো এবং বিকালে গলায় চেইন লাগিয়ে হাঁটতে বেরোনো। প্রেমের জন্য সম্রাট শাহজাহান তাজমহল বানাতে পারলে মামুন কুকুরের কেয়ারটেকার হতে পারবে না? এ বিবেচনায় মামুন কেয়ারটেকারের চাকরিটা নিয়ে নিল। চাকরির প্রথম দিনে ছিল এ বছরের ভ্যালেন্টাইনস ডে অর্থাৎ ভালোবাসা দিবস। মামুনের লক্ষ্য ছিল ভালোবাসা দিবসে বিলকিসের হাতে লুকিয়ে একটা প্রেমপত্র এবং একগুচ্ছ লাল গোলাপ তুলে মনের কথা প্রকাশ করবে। সে উপলক্ষে সারা রাত জেগে সে একটা প্রেমপত্র রচনা করল। পরদিন নিজের সবচেয়ে ভালো গেঞ্জি আর জিন্স পরে বিলকিসদের বাসায় উপস্থিত হলো। ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বিলকিসদের দারোয়ান মামুনকে দেখে বলল, ‘ওদের গোসল করান’। সে কিছুক্ষণ বুঝতে পারল না। পরে দেখল তিনটা কুকুর তার দিকে তাকিয়ে লেজ নাড়ছে। প্রেমের জন্য মজনু পাগল হয়েছিল আর মামুন কুকুরদের গোসল করাতে পারবে না? অবশ্যই পারবে। সে তিন কুকুরকে সাবান দিয়ে ডলে ডলে গোসল করাল। তারপর কুকুরদের খেতে দিল। শুরুতে তারা খেতে চায়নি, অনেক দৌড়াদৌড়ির পর মামুনের হাতে খেতে সম্মতি জানাল। এভাবে সারা দিন কুকুরদের পিছনে ছুটতে ছুটতে তার কালোঘাম ছুটে গেল। তার পকেটে তখনো প্রেমপত্র আর লাল গোলাপ। সে একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। বিকালে সুযোগ এলো। বিলকিস কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরুবে, সঙ্গে থাকবে মামুন। মামুন বেশ খুশি। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। ভালোবাসার দিবসে বিলকিসকে সে ভালোবাসার প্রস্তাব দিবে। হাঁটতে হাঁটতে তারা নদীর পাড়ে চলে এলো। মামুন পকেট থেকে প্রেমপত্র বের করবে ঠিক এমন সময় বিলকিস তার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি ওদের সঙ্গে বল খেলুন। আমি এক ঘণ্টার মধ্যে আসতেছি।’

বলেই বিলকিস সোজা হাঁটা ধরল। হেলমেট মাথায় মোটরসাইকেল নিয়ে এক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বিলকিস সোজা বাইকে উঠে হারিয়ে গেল। মামুন স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার এক হাতে প্রেমপত্র অপর হাতে কুকুরগুলোর গলার চেইন।