আমার এক বড় ভাই বললেন, খেয়াল করে দেখলাম, ছোটবেলার কোনো শিক্ষাই বৃথা যায় না। এজন্য সবার উচিত, ছোটবেলায়ই নানারকম শিক্ষা গ্রহণ করা। তাহলে আমি যেভাবে উপকৃত হচ্ছি, সবাই সেভাবে উপকৃত হতে পারবে। আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি, আপনি ছোটবেলায় নানান পদের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তা এখন যে বললেন উপকৃত হচ্ছেন, সেটা কোন শিক্ষার গুণে, একটু জানতে পারি? বড় ভাই বললেন, অবশ্যই জানতে পারিস। না জানলে শিখবি কীভাবে? শোন, আমি ছোটবেলায় বুদ্ধি করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলাম। বিতার্কিক হিসেবে একবার পুরস্কারও পেয়েছিলাম। সে জিনিসটা এখন আমার কাজে লাগছে। আমি জানতে চাইলাম, কী ধরনের কাজে লাগছে? বড় ভাই বললেন, জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে ভালোই দর কষাকষি করতে পারছি। মাঝে-মধ্যে জিতেও যাচ্ছি। যেমন একটু আগেও এক মুদি দোকানদারের সঙ্গে দর কষাকষি করে এক কেজি পিঁয়াজে এক টাকা কম দিতে পারলাম। এক টাকা কম! চাট্টিখানি ব্যাপার না কিন্তু। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, জিনিসপত্রের দাম এত বেশি বেড়ে গেছে, কী আর বলব। তবে এতে লাভ হয়েছে বউদের। এখন আর বউদের সঙ্গে পারা যায় না। বউরা যেটা বলে, সেটাই সঠিক। আপনি যে তাদের কথা মিথ্যা প্রমাণ করবেন বা যুক্তি দিয়ে হালকা করবেন, সেটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি বললাম, শুরু করলেন জিনিসপত্রের দাম দিয়ে, শেষ করলেন বউ দিয়ে। এক সাবজেক্ট থেকে আরেক সাবজেক্টে লাফ দেওয়ার বিষয়টা ঠিক বোধগম্য হলো না। প্রতিবেশী বললেন, বোধগম্য না হওয়ার কিছু নেই। জিনিসপত্রের দাম আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় এখন বাজারে গিয়ে ব্যাপাক দর কষাকষি করতে হয়। আর এ দর কষাকষি তথা তর্কাতর্কি করেই আমাদের সব এনার্জি শেষ হয়ে যায়। বাসায় ফিরে কোনো কারণে মতবিরোধ হলে বউয়ের সঙ্গে যে তর্কাতর্কি করব, সে এনার্জি আর থাকে না। ফলে বউ যা বলছে, একতরফাভাবে সংসারে সেটাই আইন হয়ে যাচ্ছে। কী একটা অবস্থা! সংসারের কর্তা হিসেবে স্বামীদের ইজ্জত আর থাকল না।
আমার এক বন্ধু বলল, আমাদের মনে হয় আর জ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হলো না। জিনিসপত্রের এ দুর্মূল্যের বাজারে সত্যিই জ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দুষ্কর। আমি বললাম, তোর কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বন্ধু বলল, তুই নিশ্চয়ই জেনে থাকবি, জ্ঞানীগুণীরা ফাও কথা কম বলেন। গম্ভীর থাকেন। কিন্তু জিনিসপত্রের যা দাম আর এ দাম নিয়ে দোকানদারদের সঙ্গে যে পরিমাণ কথা কাটাকাটি করতে হয়, এর পরও কি জ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ অবশিষ্ট থাকে?
আমার আরেক বন্ধু বলল, বাজারে গিয়ে মাছওয়ালা, সবজিওয়ালা, এইওয়ালা, সেইওয়ালার সঙ্গে দর কষাকষি করে যে বাজে অভিজ্ঞতা আমার হলো, তাতে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। সিদ্ধান্তটা হচ্ছে- আমার বাচ্চা ছোট সাইজের যে ছাতাটা দিয়ে খেলে, সে ছাতাটা নিয়ে বাজারে যাব। আর দোকানদারদের সঙ্গে দর কষাকষির সময় সেটা মুখের সামনে ধরব। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত দর কষাকষির সময় প্রায়ই তাদের মুখ থেকে এটা-সেটা বের হয়ে এসে আমার মুখে পড়ে। যেমন গতকালও একজনের দাঁতের চিপা থেকে সুপারির টুকরা বের হয়ে আমার নাকে বাড়ি খেল। টুকরাটা আরেকটু বড় হলেই আমার নাক আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারত।