শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বই পরিচিতি

বই পরিচিতি

‘মরণোত্তম’ এক অসহনীয় সময়ের প্রতিবিম্ব

মো. আদনান আরিফ সালিম

 

প্রথমেই প্রশ্ন করা যেতে পারে ‘মরণোত্তম’ বই নাকি প্রতিবাদের আরেক নাম? কোনো লেখক একের পর এক বেস্টসেলার বই লিখতে থাকলে সেটাও একটা সমস্যা। বিশেষ করে পাঠকপ্রিয়তার অন্তরালে তার সেরা সৃষ্টিগুলো ছাইচাপা আগুনের মতো স্তিমিত হয়ে থাকে। তবে কথায় বলে সৃষ্টিশীল মানুষেরা নাকি ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন। তাদের হয়ে কথা বলে রং তুলির প্রতিটি আঁচড় কিংবা সাদা-কালোর বুননে ফুটে ওঠা বর্ণবিন্যাসের শব্দ-আখর।

‘মরণোত্তম’ তেমনই, লেখা হয়েছে বছর দুই আগে। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে বর্তমানের এই অসহ্য সময়ে এসে আমরা যা দেখছি তার সুনিপুণ এক ধারাবিবরণী যেন এই বই। এ যেন আজ, কাল কিংবা পরশু লেখা। ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ ও তার প্রতিবাদের ভাষা এখানে এমনভাবে চিত্রিত হয়েছে যা পড়লে পাঠক শিউরে উঠতে বাধ্য। বাধ্য নতুন করে ভাবতেও। আত্মজিজ্ঞাসা এবং উপলব্ধির মাঝের দেয়াল ভেঙে দিতে ‘মরণোত্তম’ যেন চোখে আঙুল ঠেসে দেওয়া এক রুঢ় বাস্তবতা।

ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচারে যে লুকোচুরি খেলা চলে, তার খেলোয়াড়দের মুখে এক অর্থে ঝামা ঘষে দিয়েছেন উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আজিজ মাস্টার। গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বলন্ত মশাল হাতে প্রেস ক্লাবের সামনে আস্ত এক প্রতিবাদের মিছিল হয়ে ওঠা মানুষটি যখন বুকে ঝোলান, ‘আমিই কোহিনুরের পিতা, আমি তার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই।’ তখন সুবোধসম্পন্ন মানুষ মাত্রই হয়ে উঠতে চাইবেন আজিজ মাস্টার। যার কাছে মেরুদন্ডহীন হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে শিরদাঁড়া সোজা রেখে মৃত্যুকে মেনে নেওয়াই জীবনের প্রকৃত নাম। কিংবা প্রতিবাদের ভাষা। সেখানে কি জীবনের চেয়ে মরণই উত্তম?  মরণোত্তম?

সূত্র : মরণোত্তম, লেখক, সাদাত হোসাইন, প্রকাশক, অন্যপ্রকাশ, মূল্য, ২২৫ টাকা, প্রচ্ছদ, চারু পিন্টু।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর