শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

শতবর্ষী আটঘর ডিঙি নৌকার হাট

কাঠের মানভেদে দাম দুই থেকে সাত হাজার টাকা

এস এম তানভীর আহমেদ, পিরোজপুর

শতবর্ষী আটঘর ডিঙি নৌকার হাট

দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা। প্রতি বছর বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই এ উপজেলা ও আশপাশ এলাকায় কদর বাড়ে নৌকার। কেননা এলাকাটি নদী-খাল বেষ্টিত। এখানকার সন্ধ্যা নদীর শাখা খাল আটঘরে এ মৌসুমে বসে ‘আটঘর ডিঙি নৌকার হাট’। এ উপজেলায় যাতায়াতের বাহন হিসেবে নৌকা বেশ জনপ্রিয়। ঘর থেকে বের হতেই প্রয়োজন হয় নৌকার। নৌকায় পণ্যের পসরা সাজিয়ে ভাসমান হাটে বিক্রি করতে যান এখানকার মানুষ। আবার সদাইপাতি কিনে ডিঙি নৌকা বেয়েই ঘরে ফেরেন তারা। জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার মানুষের নৌকার চাহিদা মেটাতে নেছারাবাদের আটঘরে কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট ও শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাটের গোড়াপত্তন ঘটে। আটঘর কুড়িয়ানা খালের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এ খালের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট বসলেও নৌকার হাট বসে শুধু আটঘরে। ১০০ বছরের পুরনো এ হাটকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবে মনে করা হয়। নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে আটঘর বাজার। বছরের বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের নৌকার সবচেয়ে বড় হাট বসে এ বাজারে। খালের পানিতে সমান তালে চলে বাহারি নৌকার বিকিকিনি। নদী বিস্তৃত এলাকা ও কাঠের সহজলভ্যতা হওয়ায় এখানে নৌকার চাহিদা ব্যাপক। আটঘরের নৌকার হাটে গেলে দেখা যায়, আধা কিলোমিটারজুড়ে সড়ক ও খালের দক্ষিণ প্রান্তে শত শত নৌকা সাজিয়ে রাখা হয়। শুধু নৌকা কেনার জন্যই নয়, নৌকাবাজারে লোকজনের এমনিতে আসাটাও যেন ঐতিহ্যের অংশ। এক সময় সুন্দরী কাঠ সহজলভ্য ছিল।

তখন এ কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি হতো। এখন সেটি দু®প্রাপ্য হওয়ায় কড়াই, চাম্বুল ও মেহগনি কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হয়। কাঠের মান ভেদে দুই থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অনেকে আবার পুরনো নৌকা বিক্রির জন্য আসেন এ হাটে। বাংলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি শুক্র ও শনিবার জমজমাট থাকে সাপ্তাহিক এ হাট।

তবে এ বছর নৌকার হাটের চিত্রটি একটু ভিন্ন। নৌকা বিক্রির ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কমেছে বিক্রি। এতে করে একদিকে নৌকা তৈরি ও বিক্রির ওপর নির্ভরশীলরা পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে নৌকার ওপর নির্ভরশীল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজ ও জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া বিগত বছরের তুলনায় নৌকার দাম কিছুটা বেশি হওয়ায়, নৌকা ক্রয়ে ক্রেতাদের আগ্রহও কম। অন্যদিকে আটগর কুড়িয়ানা নৌকার হাটে ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য বৈরী আবহাওয়ায় বসার কোনো স্থান কিংবা স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ রয়েছে হাটে আগতদের মাঝে। আটগর কুড়িয়ানা নৌকার হাটের ইজারাদার আব্দুর রহিম জানান, সাধারণত প্রতি হাটে তিন শতাধিক নৌকা বিক্রি হলেও এ বছর খাল-বিলে পানি কম থাকায় তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। পেয়ারা সংগ্রহের ভরা মৌসুম শুরু এবং বৃষ্টি বৃদ্ধি পেলে নৌকা বিক্রির এ সমস্যা দূর হবে বলে প্রত্যাশা তার।

সর্বশেষ খবর