প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে একটি বিশাল পর্বতের সন্ধান পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্মিডিট ওশান ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। অত্যাধুনিক সনার সিস্টেমের সাহায্যে সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরি করার সময়, চিলির উপকূল থেকে প্রায় ৯০০ মাইল দূরে অবস্থিত এই পর্বতের উচ্চতা প্রায় ৩,১০৯ মিটার বলে ধারণা করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে, এই উচ্চতা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফার প্রায় চারগুণ কাছাকাছি। এটি সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় এক অভাবনীয় আবিষ্কার হিসেবে ধরা পড়েছে।
গবেষণা জাহাজ ‘ফালকোর’ থেকে এই অভিযান চালানো হয়, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের নাজকা রিজ অঞ্চলের আশপাশে অসংখ্য ডুবোপর্বতের অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষণার অংশ হিসেবে সমুদ্রবিজ্ঞানী জ্যোতিকা বিরমানি জানান, সনার প্রযুক্তির সাহায্যে পানির নিচে শব্দতরঙ্গ পাঠিয়ে সমুদ্রতলের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠের তিন-চতুর্থাংশই সমুদ্রের তলদেশ হলেও, এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র ২৬ শতাংশ সমুদ্রতলের মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
এছাড়াও, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে একটি বিশাল প্রবালবাগানও আবিষ্কার করেছেন, যার আকার তিনটি টেনিস কোর্টের চেয়েও বড়। এই অভিযানে তারা একটি বিরল স্কুইড প্রজাতির সন্ধান পান, যা ‘প্রোমাচোটিউথিস’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানী টোমার কেটার জানিয়েছেন, নাজকা ও সালাস ওয়াই গোমেজ রিজ অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রে অতি চমকপ্রদ বৈচিত্র্য দেখা গেছে, যা বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে।
অন্যদিকে, বিজ্ঞানী অ্যালেক্স ডেভিড রজার্সের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন জৈবিক বৈচিত্র্য আগে কখনো দেখা যায়নি। এই অভিযানে ‘ক্যাসপার অক্টোপাস’ নামের এক ধরনের অক্টোপাসও আবিষ্কৃত হয়েছে, যা দেখতে অনেকটা উড়ন্ত স্প্যাগেটি দানবের মতো।
সমুদ্রের এই অজানা রহস্য উদঘাটনে বিজ্ঞানীরা তৃতীয়বারের মতো অভিযান পরিচালনা করছেন। এর আগের অভিযানে তারা ১৫০টিরও বেশি নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছিলেন, যা পৃথিবীর অজানা জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। এবারের অভিযান থেকেও আরও নতুন প্রাণীর তথ্য পাওয়া যাবে বলে তারা আশাবাদী।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল