মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা কীভাবে জলবায়ু ও আবহাওয়া প্রভাবিত করতে পারে, সে সম্পর্কে নতুন একটি গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা প্রকাশিত গবেষণায় দাবি করেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা মেঘ গঠনে ভূমিকা রাখছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বাতাসে বরফ-নির্মাণ কণার (আইস-নিউক্লিয়েটিং পার্টিকল) মতো কাজ করে, যা সাধারণ অবস্থায় মেঘ না গঠন করা পরিবেশেও মেঘের সৃষ্টি ঘটাতে পারে। গবেষণাটি এই সপ্তাহে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি: এয়ার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা ল্যাবরেটরিতে চার ধরণের মাইক্রোপ্লাস্টিক পরীক্ষা করেন। ছোট পানির ফোঁটায় এগুলোকে ভাসিয়ে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করে দেখা হয়, কীভাবে এগুলো বরফ গঠনে প্রভাব ফেলে। পরীক্ষায় দেখা যায়, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা যুক্ত ফোঁটাগুলি সাধারণ ফোঁটার চেয়ে ৫-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় জমে যায়। সাধারণত একটি ত্রুটিহীন বায়ুমণ্ডলীয় পানির ফোঁটা প্রায় -৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জমে যায়। তবে অধিকাংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক যুক্ত ফোঁটা প্রায় -২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জমে যায়। এর মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্তে আসেন যে, পানির ফোঁটায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো অদ্রবণীয় পদার্থ যুক্ত হলে তা উষ্ণতায় বরফ গঠন ঘটাতে পারে।
পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির রসায়নের অধ্যাপক ও গবেষণার প্রধান লেখক মিরিয়াম ফ্রিডম্যান জানান, এটি এখন স্পষ্ট যে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমাদের জলবায়ু ব্যবস্থার সাথে কীভাবে যুক্ত হচ্ছে তা আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি যে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা মেঘ গঠনের প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণভাবে মেঘ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে পৃথিবীর পৃষ্ঠকে শীতল করতে পারে, তবে নির্দিষ্ট উচ্চতায় মেঘ তাপ ধরে রেখে উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে পারে।
ফ্রিডম্যান আরও বলেন, যদি মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশ্র-পর্যায়ের মেঘ গঠনে প্রভাব ফেলে, তাহলে তা জলবায়ুকেও প্রভাবিত করতে পারে। তবে এর সামগ্রিক প্রভাব মডেল করা বর্তমানে অত্যন্ত কঠিন।
উল্লেখ্য, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলি ৫ মিলিমিটার বা তার চেয়ে ছোট এবং পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে পাওয়া গেছে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে শুরু করে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত, এমনকি মানব মস্তিষ্ক এবং গভীর সমুদ্রের মাছের পেটে পর্যন্ত এই কণাগুলি চিহ্নিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের কারণে বিশ্বজুড়ে একটি জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এটি সকল জীবের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য হুমকিস্বরূপ
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল