মহাকাশ গবেষণায় নতুন এক রহস্যের মুখোমুখি হয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়েতে ১৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে এক অদ্ভুত বস্তু শনাক্ত করেছেন তারা। এই বস্তু এক্স-রে ও রেডিও তরঙ্গ ছড়াচ্ছে। এর নাম রাখা হয়েছে ASKAP J1832-0911।
এই বস্তুটি প্রতি ৪৪ মিনিট পরপর আলো ও তরঙ্গ ছড়িয়ে আবার নিস্তেজ হয়ে যায়—যা মহাকাশ গবেষণায় একেবারেই নতুন ধরনের আচরণ। বিজ্ঞানীদের মতে, এমন বৈশিষ্ট্য কোনো পরিচিত নক্ষত্র, গ্রহ বা মহাকাশীয় বস্তুতে আগে দেখা যায়নি।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ডি ওয়াং নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক একটি দল সম্প্রতি এই আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী ন্যাচার জার্নালে।
প্রথমে নাসার চন্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরি (চন্দ্রা এক্স-রে মানে মহাকাশে এক্স-রে পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি বিশেষ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) এক মহাকাশীয় বিস্ফোরণের (সুপারনোভা) ধ্বংসাবশেষ পর্যবেক্ষণ করছিল। তখনই হঠাৎ এই অজানা বস্তুর থেকে আসা এক্স-রে সঙ্কেত ধরা পড়ে। পরে দেখা যায়, এই বস্তু আগে থেকেই পরিচিত এক ধরনের রেডিও তরঙ্গ নির্গতকারী বস্তু—যাদের বলা হয় রেডিও ট্রানজিয়েন্ট।
বস্তুটি প্রতি মাসে একবার সক্রিয় হয় এবং এক মাস ধরে নিয়মিত এক্স-রে ছড়ায়। এরপর আবার নিশ্চুপ হয়ে যায়। এই ওঠানামার স্বভাব বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন কৌতূহল তৈরি করেছে।
গবেষকদের ধারণা, এটি হতে পারে একটি মৃত নক্ষত্রের চৌম্বকীয় অংশ, যেমন নিউট্রন স্টার বা হোয়াইট ডোয়ার্ফ (অত্যন্ত ঘন ও ক্ষুদ্র মৃত নক্ষত্র)। তবে তারা এটিকে একেবারে নতুন ধরনের বস্তু বলেও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
এখনো স্পষ্ট নয়, এই বস্তুটি পাশে থাকা সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে যুক্ত কী না। কারণ, তাদের মধ্যকার দূরত্ব অনেক বেশি। তাই এ নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হয়তো এর মতো আরও অনেক রহস্যময় বস্তু মহাকাশে লুকিয়ে আছে, যেগুলোর এখনো সন্ধান মেলেনি।
এই আবিষ্কার মহাকাশ বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দিয়েছে। তবে ASKAP J1832-0911 কী ধরনের বস্তু, তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও গবেষণার।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল