রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রথম রাউন্ডে খেলা ‘শাপেবর’

মেজবাহ্-উল-হক

প্রথম রাউন্ডে খেলা ‘শাপেবর’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন ফুরফুরে মেজাজে। বিশ্বকাপের আগে টানা তিন সিরিজ জয়ে আত্মবিশ্বাসের পালে লেগেছে বাড়তি হাওয়া। জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে টাইগাররা মানসিকভাবে দারুণ ‘বুস্টআপ’!

কঠোর সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সাফল্যে ‘যদি’ ‘কিন্তু’ খুঁজে পাওয়া যাবে সহজেই! জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতাটা আহামরি কি? বিশ্বকাপ যেখানে ‘স্পোর্টিং উইকেট’-এ খেলা হবে সেখানে ঘরের মাঠে স্পিন-দুর্গ বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে বধের মধ্যে কতটা লাভ হয়েছে?

এই অর্জনের অন্তরালে যত ‘প্রশ্নবোধক চিহ্ন’ থাকুক না কেন, উইনিং রেসে দলকে রাখতে পারাটাও কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়!

টি-২০তে এমনিতেই বাংলাদেশ ভয়ংকর কোনো দল নয়। তার ওপর নির্ধারিত সময়ে আইসিসি টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের তালিকায় আট-এর মধ্যে না থাকার কারণে টাইগাররা সরাসরি সুপার-টুয়েলভে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। -যা মনস্তাত্তি¡কভাবে দলের ক্রিকেটারদের কিছুটা ব্যাকফুটে রেখেছিল। কিন্তু এই সিরিজ তিনটি জয়ে যেন চাঙ্গা হয়ে গেল বাংলাদেশ।

আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন ছয়ে। আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে সরাসরি সুপার টুয়েলভে সুযোগ পাওয়া ‘ভয়ংকর’ অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তান এখন বাংলাদেশের নিচে। এটা ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বড় মানসিক স্বস্তি।

প্রথম রাউন্ডে ‘বি-গ্রুপে’ বাংলাদেশের সঙ্গী স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি। কোনো দলই আহামরি কোনো ‘থ্রেট’ নয়। যদিও টি-২০তে যেকোনো দলেরই জয়ের সম্ভাবনা থাকে। তারপরও যে দলটি অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে জায়গা করতে নিতে পারে, তাদের স্কটল্যান্ড (র‌্যাঙ্কিং-১৪), পাপুয়া নিউগিনি (র‌্যাঙ্কিং-১৬) ও ওমানকে (র‌্যাঙ্কিং-১৮) নিয়ে চিন্তা করার কী আছে!

প্রথম রাউন্ডে মোট আটটি দল দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলবে। আবার প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটি করে দল সুপার টুয়েলভে সুযোগ পাবে। তাই বাংলাদেশের মতো দলের প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

প্রথম রাউন্ডে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে সুপার টুয়েলভে টাইগাররা গ্রুপ-২ এ সুযোগ পাবে। এই গ্রুপে আগে থেকেই রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান। ছয় নম্বর দল হিসেবে সুযোগ পাবে প্রথম রাউন্ডে ‘গ্রুপ-এ’ -এর রানার্সআপ।

অবশ্য এখনই সুপার-টুয়েলভ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই! প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পার হওয়ার পরই ‘পরের ধাপ’ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু এটা তো ঠিক যে বড় স্বপ্ন দেখতে হলে বাড়াতে হবে ভাবনার ব্যাসার্ধো। প্রতিটি দলকে হারানোর সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্টের মননে মগজে বিষয়টি আছেও।

সব কিছুর পরও এটাই চরম সত্য-অনিশ্চয়তায় ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘আনপ্রেডিকটেবল’ ফরম্যাট টি-২০তে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে! যেমন ২০১৬ বিশ্বকাপে ওই আসরের সবচেয়ে দুর্বল দল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হারার পরও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে ফরম্যাটে হরহামেশাই এক ওভার কিংবা এক বলেও ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায়, সেই টি-২০তে বাংলাদেশকে নিয়ে আশা করতে দোষ কোথায়!

কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিংবা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বড় আসরের আগে দলগুলো ‘ওয়ার্মআপ’ ম্যাচ খেলে থাকে। তাই বাংলাদেশ ‘প্রথম রাউন্ড’কে ওয়ার্মআপ মনে করতে পারে। এটা টাইগারদের প্রস্তুতির অংশ। মূল আসরের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার মঞ্চ। হয়তো এই প্রথম রাউন্ড খেলার কারণে সুপার টুয়েলভে ‘দাপুটে’ পারফর্ম করতেও পারে বাংলাদেশ। তাই প্রথম রাউন্ডে খেলাটা টাইগারদের জন্য মনস্তাত্তি¡ক বাধা নয় বরং এখন ‘শাপেবর’!   

সর্বশেষ খবর