শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

৭৫ বছরে কিংসই প্রথম

বসুন্ধরা কিংস ৬ - শেখ রাসেল ৪

মনোয়ার হক

৭৫ বছরে কিংসই প্রথম

ইতিহাসটা লিখেই ফেলল বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংস। অন্যরা যা পারেনি তা করে দেখিয়ে দিল তারা। তিন ম্যাচ বাকি থাকলেও পেশাদার ফুটবল লিগে টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস গড়ল ফুটবল কিং বসুন্ধরা কিংস। গতকাল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে ৬-৪ গোলে হারানোর পর ১৭ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট পেয়ে কিংসের শিরোপা নিশ্চত হয়। ঘরোয়া ফুটবলের শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। আর বসুন্ধরা কিংসের পেশাদার লিগে আবির্ভাব ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে। মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় বসুন্ধরা দেখিয়ে দিল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। ওয়ান্ডারার্স, আবাহনী ও মোহামেডানের হ্যাটট্রিক শিরোপার রেকর্ড রয়েছে। বসুন্ধরা কিংসও হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বিরল এক রেকর্ড গড়েই। তিন দল টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অভিষেকের অনেক পরে। কিন্তু বসুন্ধরা অভিষেক থেকেই টানা তিন শিরোপা। এরপর আবার যোগ হলো চতুর্থ শিরোপা। অতীত সব রেকর্ড ভেঙে বসুন্ধরা কিংস প্রমাণ দিয়েছে ফুটবলে তারাই দেশসেরা।

বসুন্ধরা কিংসের এমন সময় আবির্ভাব ঘটেছিল যখন পেশাদার লিগে ঢাকা আবাহনীর দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের সুযোগ ছিল। কিন্তু তা আর হতে দেননি ড্যানিয়েল কলিন ড্রেসরা। অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাজিমাত করে ফেলেন কিংসের ফুটবলাররা। এরপর যেন শিরোপা জেতাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। লিগে ইতিহাস গড়া টানা চার শিরোপা তো আছেই, দুবার করে ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন। অভিষেক করেই পাঁচ বছরে আট শিরোপা কিংসের। এটাও দেশের ঘরোয়া ফুটবলে অনন্য ইতিহাস। চ্যাম্পিয়ন শুধুই বসুন্ধরাকে মানায়, তা এখন স্বীকার করতেই হবে। বসুন্ধরা কিংস আগমনের পরই ঝিমিয়ে থাকা পেশাদার লিগ নতুনভাবে জেগে ওঠে। প্রকৃত পেশাদারিত্বের দেখা মেলে বসুন্ধরা থেকেই।

বসুন্ধরা এমন সময় ইতিহাস গড়েছে যখন লিগের প্লাটিনাম জুবিলি অতিবাহিত হচ্ছে। ৭৫ বছর চাট্টিখানি কথা নয়। অথচ এ নিয়ে বাফুফের কোনো বিশেষ কর্মসূচি নেই। তবে রাঙল ঠিকই আর তা বসুন্ধরার টানা শিরোপা জয়ের মাধ্যমে। আবু নাঈম সোহাগ ফিফা থেকে বহিষ্কারের পর তো কেউ আর ফুটবলের খোঁজ নিতে চান না। কিন্তু বসুন্ধরার ইতিহাস ঘিরে ঠিকই আগ্রহ ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। মোহামেডান, আবাহনী, ওয়ান্ডারার্স, ব্রাদার্স বাঘ বাঘা দল যা পারেনি তা পাঁচ বছরের আবির্ভাবে করে দেখিয়ে দিল বসুন্ধরা। এ এক বিশাল প্রাপ্তি।

বসুন্ধরার ইতিহাস গড়ার দিনে বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কিংস অ্যারিনাও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেল। যদিও গতকাল হোম ভেন্যু ছিল শেখ রাসেলের। তার পরও ঘরের মাঠে এই প্রথম শিরোপা নিশ্চিত করল কিংস। কিংস অ্যারিনা বসুন্ধরার হোম ভেন্যু হওয়ার পর কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। গত বছর লিগে শুধু এক ম্যাচ ড্র করে শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে। এটাও আরেক রেকর্ড। শিরোপার উৎসবের দিনে কিংসের সমর্থকরা ছিলেন যেমন খুশিতে মাতোয়ারা, তেমনি নতুন রূপ ধারণ করে কিংস অ্যারিনা। ম্যাচের শেষের দিকে হলেও গতকালই প্রথম ফ্লাডলাইট জ্বলল।

বসুন্ধরা কিংস গঠন হয় শুধু নিজেদের সাফল্যের জন্য নয়, ঘুমিয়ে থাকা ফুটবলকে জাগাতে। তাও বাস্তবায়িত হচ্ছে, কেননা হোম বা অ্যাওয়ে বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ হলেই দর্শকের ভিড় জমে। সাফল্যের ইতিহাস তো আছেই, দেশের ফুটবলের নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে কিংসই। তাই এ কথা বলা যেতে পারে, ফুটবলে যা কিছু প্রথম তা বসুন্ধরা কিংসই।

 

১৯৪৮ সালে লিগ শুরু হওয়ায় সবাই ছিল নতুন দল। এ ক্ষেত্রে এক দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস ২০১৭-১৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পেশাদার লিগে ওঠে এবং ১২ দলের মধ্যে নবাগত হিসেবে অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন হয়।

উল্লাসে উত্তাল বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনা। গতকাল শেখ রাসেলকে হারিয়ে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে ইতিহাস গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। ক্লাবের টানা ৪ লিগ জয়ে উৎসবে মাতেন কিংসের সমর্থকরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর