আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লিটন দাসের অভিষেক ৯ বছর আগে। ভারতের বিপক্ষে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা স্টেডিয়ামে অভিষেক ইনিংসে ৪৫ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ওই ইনিংসের পর বিসিবির বর্তমান পরিচালক ও ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তারকা। গত ৯ বছরে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে লিটনের। রান করেছেন। ব্যর্থ হয়েছেন। আবার ফিরেছেন। তারপরও কোনো সমালোচকই তার প্রতিভা নিয়ে সমালোচনা করেননি। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহসিক সিরিজ জয়ী টেস্টে যে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ব্যাটিং করেছেন লিটন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশসহ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস। ২৬ রানে ৬ উইকেটে পতনের পর লিটন খেলেন ১৩৮ রানের ইনিংস। খেলেছেন অসাধারণ ধৈর্য নিয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন রয়েছেন পুরোপুরি ফুরফুরে মেজাজে। পাকিস্তান সিরিজ শেষে লিটনদের এখনকার মিশন ভারত। প্রতিবেশী দেশটির মাটিতে খেলবে দুটি টেস্ট এবং ৩টি টি-২০। সফরটি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে বলেন টাইগার অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন। তিনি বলেন, ‘ভারত অনেক ভালো দল। সফরটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
সফরে টাইগাররা প্রথম টেস্ট খেলবে চেন্নাইয়ে ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় টেস্ট কানপুরে ২৭ সেপ্টেম্বর-১ অক্টোবর। প্রথম টি-২০ ম্যাচ ৬ অক্টোবর গোয়ালিয়র, ৯ অক্টোবর দ্বিতীয় টি-২০ দিল্লিতে এবং তৃতীয়টি ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে। টেস্ট দুটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৩ টেস্ট খেলে জয়ের মুখ দেখেনি। দুটি টেস্ট সাকল্যে ড্র করেছে। টি-২০ খেলেছে ১৪টি। এক জয়ের বিপরীতে হেরেছে ১৩টি। এ বছর আরও দুটি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজটি নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য নারী টি-২০ বিশ্বকাপ দুবাই সরিয়ে নিয়েছে আইসিসি। দক্ষিণ আফ্রিকাও পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছে। যদিও বিসিবি আশ্বাস দিয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার। বিষয়টি আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত হবে।
লিটনরা ভারত সফরে যাচ্ছে পাকিস্তানকে হারানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে। পাকিস্তানের মাটিতে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে টাইগাররা। সাবেক অধিনায়ক সিরিজটিকে অতীত ভেবে সামনের দিকে এগোতে চাইছেন। লিটন বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে এটা এরই মধ্যে অতীত হয়ে গেছে। এখন সামনে তাকানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদেরও একটু সাহায্য করতে হবে। আপনারা যদি পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে বেশি কথা না বলেন, খুব ভালো হবে। খেলোয়াড় হিসেবে আমার কাছে ওটা অতীত হয়ে গেছে।’ পাকিস্তান সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৬ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার প্রয়োজন হয়নি। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে খেলেন ১৩৮ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন পুরোপুরি খাদের কিনারায়, তখন তিনি হাল ধরেন মেহেদি হাসান মিরাজকে জুটি করে। সিরিজে তিনি রান করেন ১৯৪। চলতি বছর এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৩টি। রান করেছেন ৬ ইনিংসে ২৬১। যাতে সেঞ্চুরি একটি ও হাফ সেঞ্চুরি একটি। ক্যারিয়ারে ৪৩ টেস্টে ৩৬.৮৭ গড়ে রান করেছেন ২৬৫৫। সেঞ্চুরি ৪টি ও হাফ সেঞ্চুরি ১৭টি। ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচ টেস্টের ৮ ইনিংসে রান করেন ২৬৫। সর্বোচ্চ ৭৩।
পাকিস্তানের পর ভারত। দুটিই বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি। দুই দলের বিপক্ষে খেলার আবেদনটা একেবারেই ভিন্ন। দুই দলের বিপক্ষে খেলা বাড়তি অনুপ্রেরণা, বলেন লিটন। তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা এলে অনুপ্রেরণাই দেয়। ভালো খেললে সুনাম হবে, দুজন মানুষ চিনবে। এর চেয়ে বড় পাওয়া তো আর কিছু থাকতে পারে না! আমার মনে হয় না চাপের কিছু আছে। টেস্ট ক্রিকেটটা আমরা এখন মোটামুটি ভালো খেলছি। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন।’ পাকিস্তানকে হারানোর পর ভারতের মাটিতে টাইগাররা খেলবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে। তবে সিরিজ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিংই হবে বিশ্বাস করেন লিটন।