আইসিসি সহযোগী কোনো দেশের কাছে বাংলাদেশ এবারই প্রথম টি-২০ ম্যাচ হারেনি। এ ফরম্যাটে টাইগাররা এর আগে হেরেছে স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, হংকংয়ের কাছে। সোমবার রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে যেভাবে ম্যাচটি হেরেছে, সেটা ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু! শারজাহর ছোট মাঠে ২০৫ রান করে হেরে যাওয়াটা লিটন বাহিনীর জন্য কতটা যৌক্তিক? লিটন বাহিনী একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশ এবং আমিরাত আইসিসি সহযোগী দেশ। সরলদোলকের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটি আমিরাত জিতেছে লিটন বাহিনীর বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের জন্য। বিশেষ করে ফিল্ডিং ছিল যাচ্ছেতাই। ক্যাচ মিস করেছে একাধিক। থ্রো করেছে অহেতুক। যার জন্য এক বল বাকি থাকতেই ২ উইকেটে হেরে যান লিটনরা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আজ। প্রথমটি টাইগাররা জিতেছিল ২৭ রানে। দ্বিতীয়টিতে হেরে যাওয়ায় সিরিজের সমীকরণ এখন সমানে সমান। সিরিজের ব্যবধান ১-১ হওয়ায় আজকের ম্যাচটি রূপ নিয়েছে অলিখিত ফাইনালে। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি শুরু হবে শারজাহতে রাত ৯টায়। দুই দল এর আগে ৫ বার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশের ৪ জয়ের বিপরীতে আমিরাতের জয় ১টি।
২০৬ রানের টার্গেট ছুড়ে ১৮ ওভার পর্যন্ত ড্রাইভিং সিটে বসেছিল লিটন বাহিনী। শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ২৯ রান। একপর্যায়ে ৮ বলে দরকার হয় ২৩ রান। ১৯ নম্বর ওভারের পঞ্চম বলে শরিফুল ইসলামকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ছক্কা মারেন হায়দার আলি। জমে ওঠে ম্যাচ। ৭ বলের সমীকরণ দাঁড়ায় ১৭ রান। ষষ্ঠ বলটি ইয়র্কার লেন্থে করেন টাইগার পেসার। স্বাগতিক দুই ব্যাটার দ্রুত সিঙ্গেল নিতে চেষ্টা করেন। তখনই শরিফুল অহেতুক থ্রো করেন। বল বাউন্ডারি লাইন পেরিয়ে যায়। ওই থ্রোতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে লিটন বাহিনী। শেষ ৬ বলের সমীকরণ ১২ রান। উত্তেজনাকর মুহূর্তে খুবই বাজে বোলিং করেন তানজিম হাসান সাকিব। ওভারের পঞ্চম বলে ফিল্ডিং করে বল ছুড়তে দেরি করেন তাওহিদ হৃদয়। ১ রানের জায়গায় ২ রান নিয়ে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেয় আমিরাত। অথচ শুরুতেই থ্রো করলে রান আউট হতেন স্বাগতিক ব্যাটার। মোহাম্মদ ওয়াসিমের আমিরাতের কাছে হেরে যাওয়ায় বাজে ফিল্ডিং ও বোলিংকে দুষছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন, ‘যে কোনো হারই কষ্টকর। হারলেও শারজাহর উইকেটে আমরা ভালো ব্যাটিং করছি। উইকেট ভালো। ব্যাটিংয়ে কুয়াশার সুবিধাটাকে কাজে লাগিয়েছে আমিরাত। ফিল্ডিংয়ে আমরা বেশ কিছু মিস করেছি। ইনিংসের মাঝের সময় বাজে বোলিং করেছি। এমন ছোট মাঠে জিততে হলে পরিকল্পিত বোলিং করতে হবে। নাহিদ রানার কাছে আরও ভালো কিছু চেয়েছিলাম। ক্রিকেটে ভালো দিন ও খারাপ দিন থাকতেই পারে। এখন আমরা নিজেদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়।’ অবিশ্বাস্য জয়ের ম্যাচের নায়ক আমিরাত অধিনায়ক ওয়াসিম চাইছেন সিরিজটি জিততে, ‘খুবই আনন্দিত বাংলাদেশকে হারিয়েছি। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। নিজের এবং দলের পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুশি। আমরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিততে চাই।’
সোমবারের ম্যাচে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস ৯.১ ওভারে ৯০ রানের ভিত দেন। তানজিদ ৫৯, লিটন ৪০, নাজমুল শান্ত ২৭, তাওহিদ ৪৫ রান করেন। ব্যাটাররা ভালো করলেও বোলাররা ছিলেন নখদন্তহীন। ৫ বোলারের প্রত্যেকে উইকেট পেলেও ছিলেন খরুচে। অভিষেক হয় নাহিদ রানার। ২ উইকেট নেন ৫০ রানের খরচে। তার কাছে আরও ভালো বোলিং আশা করেছিলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘রানা তার ফাইনাল ওভারের আগে কেমন বোলিং করেছে? তার কাছে আরও ভালো বোলিং আশা করেছিলাম।’ তানজিম সাকিব ৩.৫ ওভারে ৫৫ রান, শরিফুল ৪ ওভারে ৩৪ রান দেন। তিন পেস বোলার ১১.৫ ওভারে রান দেন ১৩৯। অবশ্য দুই স্পিনার তুলনামূলক ভালো বোলিং করেছেন। বাঁ হাতি স্পিনার তানভির ৪ ওভারে ৩৭ ও রিশাদ ৪ ওভারে ২৮ রান দেন। টাইগার ব্যাটাররা ৯টি ছক্কা হাঁকান। আমিরাতের ব্যাটাররা ছক্কা হাঁকান ১৩টি। আজ অলিখিত ফাইনাল। সিরিজ জিততে মড়িয়া লিটন বাহিনীর একাদশে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।