শচীন টেন্ডুলকারের বিদায় টেস্ট নিয়ে মেতে উঠেছিল পুরো ভারত। নানান আয়োজনে বিদায় জানিয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ২০০ টেস্ট খেলা ক্রিকেটার টেন্ডুলকারকে। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসটি খেলছেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। আজকের পরই স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে যাবেন মাহেলা। টেন্ডুলকারের মতো না হলেও মাহেলার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি নেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিলবোর্ড, বড় বড় রেপ্লিকা তৈরি করে স্মরণীয় করতে রাখতে চাইছে দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের বিদায়টাকে। অবশ্য নিজেও বিদায়টাকে সোনালি ফ্রেমে বন্দী করে রাখতে প্রত্যয়ী ব্যাটিং করছেন মাহেলা। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে ৪৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন তৃতীয় দিন শেষে। সাদা পোশাকের শেষ ইনিংসে যাতে তিন অংকের ম্যাজিক্যাল স্কোর করতে পারেন, কাল রাতে শ্রীলঙ্কাবাসী বসেছিল প্রার্থনায়। কাল টেস্টের তৃতীয় দিন সেঞ্চুরি কিংবা হাফসেঞ্চুরি না পেলেও প্রিয় বন্ধু কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৯৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন ১৬৫ রানে। এই জীবন্ত কিংবদন্তির বিদায়ী টেস্টে আবার অসাধারণ বোলিং করে রেকর্ডের পাতায় জায়গা নিয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ।
মাহেলার বিদায়ী টেস্ট। ক্রিকেটপ্রেমীরা হারাচ্ছেন অসাধারণ এক ক্রিকেটার। মাহেলার বিদায়ী টেস্টটি আবার স্মরণীয় হয়ে থাকছে হেরাথের কাছে। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম বাঁ হাতি স্পিনার হিসেবে ৯ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁ হাতি। অবশ্য শ্রীলঙ্কার লিজেন্ড স্পিনার মুত্তিয়া মুরলীধরন দুই দুইবার ৯ উইকেট করে নিয়েছেন ইনিংসে। ১৯৯৮ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৫ রানে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। এরপর ২০০২ সালে ক্যান্ডিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫১ রানে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। প্রায় একযুগ পর হেরাথ ফের ৯ উইকেট পেলেন ইনিংসে। হেরাথ তৃতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ২৫০ উইকেট নিয়েছেন। এর আগে মুত্তিয়া মুরলীধরন (৮০০) ও চামিন্দা ভাস (৩০৭) আড়াইশ'র উপরে উইকেট নিয়েছেন। হেরাথ এখন পর্যন্ত তিন ইনিংসে ১৮ উইকেট নিয়েছেন। দুই টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড স্বদেশি মুরলীধরনের। মুরলীর বিদায়ের পর দেশকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন হেরাথ। মুরলীর অবসরের পর গত ৩৫ টেস্টে ২৬.৫৫ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৮০টি। ক্রিকেট ইতিহাসে সপ্তম বোলার হিসেবে ২০ বার ইনিংসে পাঁচ ততোধিক উইকেট নিয়েছেন হেরাথ। বর্তমানে তার উইকেট সংখ্যা ৫৭ টেস্টে ২৫৫।
প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪ রানে সাঝঘরে ফিরেছিলেন মাহেলা। দ্বিতীয় ইনিংসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার সর্বোচ্চটাই করছেন। ৭৯ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর বন্ধু সাঙ্গাকারার সঙ্গে জুটি বেঁধে ৯৮ রান যোগ করে দিন পার করেন। সাঙ্গাকারা ৫৪ রানে এবং মাহেলা ব্যাট করছেন ৪৯ রানে। আর এক রান করলেই ১৪৯ টেস্ট ক্যারিয়ারে তুলে নেবেন ৫০ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। হাফসেঞ্চুরি না করলেও তিনি ও সাঙ্গাকারা মিলিতভাবে জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন এখন পর্যন্ত। ১১৯ ইনিংসে দুজনের মিলিত রান গতকাল পর্যন্ত ৬৪৪৭। গড় ৫৬.০৬। এর মধ্যে ৬২৪ রানের একটি বিশ্বরেকর্ড জুটিও রয়েছে। সর্বোচ্চ রান দ্রাবিড়-টেন্ডুলকার জুটির, ১৪৩ ইনিংসে ৬৯২০। মাহেলা-সাঙ্গাকারার চেয়ে এগিয়ে আছেন দুই ক্যারিবীয় লিজেন্ড গর্ডন গ্রীনিজ-ডেনমন্ড হায়ান্স জুটি। ক্যারিবীয়দের স্বর্ণালি সময়ে ১৪৮ ইনিংসে দুজনে মিলিতভাবে করেছিলেন ৬৪৮২। আর মাত্র ৫৬ রান করলেই দ্বিতীয় স্থানে জায়গা নিবেন মাহেলা-সাঙ্গাকারা জুটি।
অবশ্য টেস্টটি ইউনিস খান ও আক্তার সরফরাজের জন্য স্মরণীয়। ইউনিস প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০০ ক্যাচ নিয়েছেন। তার পরে রয়েছেন জাভেদ মিয়াদাদ, ৯৩টি। আখতার সরফরাজ সেঞ্চুরি করেছেন উইকেটরক্ষক উমর আকমলের পর। বাঁ হাতি পেসার জুনায়েদ খান মাথায় আঘাত পেয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। অবশ্য অবস্থা তেমন কোনো সিরিয়াস নয় বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মঈন খান।