দ্বীপরাষ্ট্রের প্রতিটি প্যাগোডাতেই নিশ্চিত আগের রাতে পিদিম জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেছেন দেশবাসী। যাতে প্রিয় ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে তার বিদায়ী ইনিংসটাকে সোনালি মোড়কে পুরে ফেলতে পারেন। কিন্তু পারেননি। পারেননি বিদায়ী ইনিংসটাকে রঙিন করতে। পারেননি গ্রেগ চ্যাপেল, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনদের মতো সেঞ্চুরি করে ক্যারিয়ারের যবনিকা টানতে। তারপরও ১৭ বছরের লম্বা ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যা করেছেন তা চিরভাস্বর হয়ে থাকবে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট ইতিহাসে। মাহেলা জয়াবর্ধনে শুধু একজন ক্রিকেটারই নন, দ্বীপরাষ্ট্রের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। কাল কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেললেন টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের শেষ ইনিংস। তিন অঙ্কের ম্যাজিকেল ইনিংসের দেখা না পেলেও খেলেছেন ৫৪ রানের ঝরঝরে, অথচ মনে রাখার মতো চিরস্থায়ী একটি ইনিংস।
আগের রাতে অভিন্ন হৃদয়, প্রিয় বন্ধু কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গে ৯৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ফেরেন সাজঘরে। অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে। তাই অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন স্মরণীয় একটি ইনিংসের। কিন্তু হয়নি। চতুর্থ দিনের শুরুতেই সাঈদ আজমলের দুসরা বুঝতে ব্যর্থ হয়ে ৫৪ রানে ফিরে আসেন সাজঘরে। আজমলকে মিড অনে তুলে মারতে গিয়ে বলের লাইন বুঝতে ব্যর্থ হয়ে তালুবন্দী হন আহমেদ শেহজাদের। ক্যাচ হওয়ার পর পরই মাথা নিচু করে ফেলেন মাহেলা। স্তব্ধ হয়ে পড়ে স্টেডিয়ামসহ পুরো শ্রীলঙ্কা। সাদা পোশাকের শেষ ইনিংসটি খেলার পর চোখের কোণে অশ্রুও চলে আসে। খেলার আরও এক দিন বাকি। মীরাক্কেল কিছু না হলে শ্রীলঙ্কাই জিতবে টেস্ট। জয় দিয়েই টেস্ট ক্যারিয়ারে যতি পরবে মাহেলার। হয়তো টেন্ডুলকারের মতো বিদায়ী ভাষণ দিয়ে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন দ্বীপবাসীর মনের কোটরে।
১৯৯৭ সালে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে যেদিন অভিষেক হয় ভারতের বিপক্ষে, সেদিন ছিলেন ২০ বছরের তরতাজা এক তরুণ। ওই টেস্টে তাকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের টেস্ট ক্যাপ পরিয়েছিলেন অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। সতীর্থ ছিলেন অরবিন্দ ডি সিলভা, রানাতুঙ্গা, রোশন মহানামা, সনৎ জয়সুরিয়া, মারভান আতাপাত্তুদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। সেদিন তিনি ব্যাটিং করেছিলেন ৬ নম্বর পজিশনে। খেলেছিলেন ৬৬ রানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইনিংস। তবে ২২ গজের উইকেটে নামার আগে নিজেকে আত্দবিশ্বাসী করতে সাজঘরে বসে দেখেছিলেন জয়সুরিয়া-মহানামার অসাধারণ কীর্তি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৭৬ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন দুজনে। এর মধ্যে প্রথম লঙ্কান ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছিলেন জয়সুরিয়া। জয়সুরিয়ার ৩৪০ রানের ইনিংসকে টপকে এখন লঙ্কান ক্রিকেটের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটির মালিক মাহেলা। ৩৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০৬ সালে।
১৭ বছরে ১৪৯ টেস্ট ক্যারিয়ারে রান করেছেন ১১৮১৪। সেঞ্চুরি ৩৪ এবং হাফসেঞ্চুরি ৫০। তার উপরে রয়েছেন তারই বন্ধু সাঙ্গাকারা। সাঙ্গাকারার রান ১২৮ টেস্টে ১১৯৮৮। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলে সবার উপরে রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার। টেন্ডুলকারের রান ১৫৯২১। ওয়ানডে ক্রিকেটেও টেন্ডুলকারের রান সবচেয়ে বেশি ১৮৪২৬। মাহেলার রান ২৬৩ ম্যাচে ১১৬৭১। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়। লঙ্কান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবার উপরে জয়সুরিয়া। ৪৪৫ ম্যাচে তার রান ১৩৪৩০। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও ওয়ানডে খেলবেন বিশ্বকাপ পর্যন্ত।