যে উদ্যম নিয়ে খেলাধুলা করতাম তা কি এখন থাকবে? বেশ হতাশার সুরেই এ কথা বললেন দেশখ্যাত সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন যে ৯টি ইভেন্ট বাদ দিয়েছে তার মধ্যে সাঁতার অন্যতম। অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব শাহেদ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল, যেসব ইভেন্টে ভালো করার সম্ভাবনা নেই সেসব বাদ দেওয়া হয়েছে। জেনেশুনে আমরা তো আর অর্থ অপচয় করতে পারি না। তার এ কথার যুক্তি থাকলেও কথা উঠেছে, যে ১২ ইভেন্টে বাংলাদেশ অংশ নেবে সেখানে তো ক্রিকেট ও কাবাডি ছাড়া অন্য কিছুতে পদক জেতার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনাও নেই। সে ক্ষেত্রে সাঁতার ও অ্যাথলেটিকসের মতো জনপ্রিয় ইভেন্টকে পাঠালে ক্ষতি ছিল কি? তা ছাড়া অর্থ অপচয় কি শুধু ক্রীড়াবিদদের পাঠিয়ে হচ্ছে? প্রয়োজন ছাড়া অযথা অর্থ খরচ করে ডেলিগেট যে পাঠানো হয় তা কি অপচয় নয়। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এই প্রথম ইভেন্ট কমাল। এ নিয়ে প্রশংসা পাওয়ারই কথা। কিন্তু মহাসচিবের বক্তব্য সাঁতার ও অ্যাথলেটিকস বাদ দেওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনে বরং সমালোচনার ঝড় বইছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় দেশসেরা সাঁতারু সাগরের সঙ্গে। যার এবার এশিয়ান গেমসে পুলে নামার কথা ছিল। সাগর বললেন, এটা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত। তাই বেশি কিছু বলতে চাই না। আবার মনের কষ্ট ধরেও রাখতে পারছি না। দেখেন এই সিদ্ধান্ত যদি আরও আগে নেওয়া হতো তাহলে মানসিকভাবে ধাক্কাটা পেতাম না। গেমস একেবারে দ্বারপ্রান্তে- সেই লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক সেই মুহূর্তে যখন শুনলাম সাঁতার পাঠানো হবে না মনটা খারাপ হয়ে গেল। বলতে পারেন যে উদ্যম নিয়ে সাঁতার চালিয়ে যাচ্ছিলাম তা এখন ধরে রাখাটা মুশকিল হবে। উদ্যম হারিয়ে ফেললে পারফরম্যান্স কি ধরে রাখা যাবে? শুনছি শুধু এশিয়ান গেমস নয়, এখন থেকে বড় কোনো গেমসে সাঁতারুদের পাঠাবে না। এসএ গেমস ও ইন্দো-বাংলা গেমসে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। সত্যিই যদি হয় তাহলে ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার দেখছি। কেননা কোন উৎসাহে ছেলে বা মেয়েরা সাঁতারে আসবে। দেখেন একজন খেলোয়াড়ের লক্ষ্য থাকে শুধু লোকাল প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন নয়। জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাটাই মূল লক্ষ্য। এখন সেই লক্ষ্য কেড়ে নেওয়া হলে উৎসাহ কি থাকবে? এসএ গেমস বা ইন্দো-বাংলাকে আমি তুচ্ছ চোখে দেখছি না। কথা হচ্ছে, এ দুটো কি নিয়মিত হয়? ২০১০ সালে ঢাকায় শেষবারের মতো এসএ গেমস হয়েছিল। ২০১২-তে তা ভারতে হওয়ার কথা ছিল। ২০১৪ সাল শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ সেই গেমসের খবর নেই। ইন্দো-বাংলারও একই অবস্থা। পদক যদি দিতে পারতাম তাহলে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হতাম না। দেখেন পদক যে নেব সেটা কীভাবে? আমাদের কি সেই মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে সাঁতারে প্রস্তুতি শুরু হয় ১৮ জানুয়ারি থেকে। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে পুলে নামি। ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৬৮ জনের মধ্যে আমার অবস্থান ছিল ২৮তম। এমন প্রস্তুতিতে রেজাল্ট ভালো না মন্দ তার বিচারের দায়িত্ব ক্রীড়ামোদীদের ওপর ছেড়ে দিলাম। পদকের আশা করবেন আর সেই ধরনের সুযোগ পাব না। এখানে আমাদের কী করার আছে। আসলে এ নিয়ে অনেক কিছু বলার ছিল। বলেই বা লাভ কী?