বিশ্বকাপ ফাইনালের সঙ্গে কি তুলনা হয় কোনো ম্যাচের? সোজা কথায়, না। তারপরও মনকে সান্ত্বনা দিতে অনেকেই অনেক ম্যাচের সঙ্গে তুলনায় আনতে চান বিশ্বকাপ ফাইনালকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে ২৮ বছরের বন্ধ্যত্ব ঘোঁচানো সম্ভব হয়নি ম্যারাডোনা, মেসির আর্জেন্টিনার। ফাইনালের সেই রেশ পুরোপুরি কাটার আগে গত পরশু বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি হয় আলবিসেলিস্তারা। ডুসেলডর্ফে জার্মানিকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। নিজে গোল করেছেন এবং তিনটি গোলে সহায়তাও করেছেন এই উইঙ্গার। মেসিবিহীন ম্যাচে তার চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সে আর্জেন্টিনা ৪-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে। এই জয়কে অনেকেই আবার প্রতিশোধ হিসেবেও দেখছেন। আরেক প্রীতিম্যাচে ইংল্যান্ড ১-০ গোলে হারিয়েছে নরওয়েকে। বিশ্বখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালে মেসি খেলেছিলেন। পরশু রাতে মেসি ছিলেন না ইনজুরির জন্য। বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে পারেননি ডি মারিয়া ইনজুরিতে পরে। সেটা যে কতটা সহায়ক ছিল জার্মানির, পরশু ডুসেলডর্ফে বুঝা গেছে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের রক্ষণভাগ, মধ্যভাগ একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ম্যান ইউতে যোগ দেওয়া ডি মারিয়া। খেলার ৬টি গোল হয় ৩০ মিনিটের মধ্যে। ম্যাচের ২১ মিনিটে ডি মারিয়ার নিখুঁত লবে সার্জিও অ্যাগুইরোর পা ছুঁয়ে দেওয়া গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা (১-০)। ৪০ মিনিটে ডি বক্সে ডান প্রান্ত থেকে ডি মারিয়ার মাপা ক্রসে লামেলা দুর্দান্ত ভলিতে গোল করলে ২-০ হয় স্কোর লাইন। দুই গোলে এগিয়েই বিরতিতে যায় আলবিসেলিস্তারা। বিরতির পর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে চার গোল হয়। ৪৭ মিনিটে ডি মারিয়ার ফ্রি কিকে হেডে ফার্নান্দেজ তৃতীয় গোল করে জয় নিশ্চিত করেন আর্জেন্টিনার (৩-০)। তিন মিনিট পর মধ্যমাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে একক প্রচেষ্টায় বাঁ পায়ের টোকায় গোল সংখ্যা চারে নিয়ে যান ম্যাচ সেরা ডি মারিয়া (৪-০)। চার গোলের পর মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপে ব্রাজিল-জার্মানির সেমিফাইনালের মতো গোলের বন্যা বইবে ডুসেলডর্ফে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠা আর্জেন্টিনা হয়তো আরও গোল করবে। এরমধ্যেই ৫২ মিনিটে শুরলে একটি গোল শোধ করে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পক্ষে (৪-১)। ৭৮ মিনিটে গোল ব্যবধান কমান মারিও গোটসে (৪-২)। এরপর আর কোনো গোল হয়নি ম্যাচে।
বিশ্বকাপের পর এটাই দুই দলের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কোচ জেরার্ডো মাটিনোরও প্রথম। চ্যাম্পিয়ন হতে না পেরে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব ছেড়ে দেন আলেসান্দ্রো সাবেলা। সাবেলার জায়গায় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তাকে। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল হওয়ায় ভীষণ খুশি মার্টিনো। উচ্ছ্বসিত ডি মারিয়ার পারফরম্যান্সে, 'ডি মারিয়া এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা উইঙ্গার। তার এই পারফরম্যান্স আমাকে মোটেও অবাক করেনি।' ফাইনালে ডি মারিয়ার অনুপস্থিতি দলকে দুর্বল করেছিল মনে করেন নতুন কোচ মার্টিনো, 'ফাইনালে ডি মারিয়ার উপস্থিতি আর্জেন্টিনাকে অন্যরকম শক্তি জোগাত কোনো সন্দেহ নেই।' তবে জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো তেমনটি মনে করেন না, '১৩ জুলাইয়ের ফাইনালের দিনটি ছিল শুধুই আমাদের। ওই দিন ডি মারিয়া খেললেও আমরা জিততাম।'
ওয়েম্বলিতে নরওয়ের বিপক্ষে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের একমাত্র গোলটি করেন অধিনায়ক ওয়েইন রুনি। অধিনায়ক হিসেবে এটাই অভিষেক ম্যাচ।