আধুনিক অলিম্পিকের সবগুলো আসরেই ছিল এমন পাঁচটা ক্রীড়া ইভেন্টের মধ্যে অন্যতম হলো ফেনসিং। দুইধারী তলোয়ার (ফেনসিংয়ের ভাষায় ব্লেড) দিয়ে দ্বৈত লড়াই। বাকি চারটা অ্যাথলেটিকস, সাইক্লিং, সাঁতার ও জিমন্যাস্টিকস দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীদের কাছে পরিচিত হলেও ফেনসিং এতদিন আড়ালেই ছিল। ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম ফেনসিংয়ের চর্চা শুরু হয় বাংলাদেশে। তখন মিরপুরের এক ক্যাম্পে ৫০ জনের দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ভারতীয় কোচ অমিতাভ। এই দলে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের মেয়ে সাহাদা আক্তার শোভাও। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ আনসারের এই মেয়ে ফেনসিংয়ে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠেন। গত মে মাসে বাংলাদেশে ফেনসিংয়ের প্রেসিডেন্ট কাপে দুটি স্বর্ণ জিতেছেন শোভা। স্যাবর ও ইপি ইভেন্টে খেলেন তিনি। স্যাবর ইভেন্টে কেবল মাথা, হাত ও শরীরের উপরাংশে আঘাত করলেই পয়েন্ট পাওয়া যায়। ইপিতে সারা শরীরের যে কোনো স্থানে আঘাত করলেই পয়েন্ট পাওয়া যায়। ফেনসিংয়ের আরও একটা ইভেন্ট হলো ফয়েল। এই ইভেন্টে কেবল শরীরের উপরাংশে আঘাত করলেই পয়েন্ট পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ফেনসিংয়ে সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিল ২০১০ ও ২০১২ সালে। ৮ দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবার দলগত ইভেন্টে মেয়েরা ৩য় এবং ছেলেরা ২য় হয়েছিল। ২০১২ সালে মেয়েরা ও ছেলেরা ৩য় স্থান অর্জন করে। বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নতুন এই ক্রীড়া ইভেন্টের ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্ন করতেই শোভা বললেন, 'বাংলাদেশ দারুণ করছে এই ইভেন্টে। এখানে সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে পারলে বিশ্ব মঞ্চেও ভালো করা সম্ভব।' জানালেন নিজের লক্ষ্যের কথাও। 'আমি একদিন অলিম্পিকে খেলতে চাই। আমার বিশ্বাস নিয়মিত অনুশীলন করতে পারলে অলিম্পিকে দেশের জন্য সম্মানজনক অর্জন বয়ে আনতে পারব।'
ফেনসিং বাংলাদেশে এখনো তেমন একটা সংগঠিত নয়। একটা অ্যাসোসিয়েশন দিয়ে চলছে ফেনসিং। বিভিন্ন সময় যেসব ইভেন্টে বাংলাদেশ অংশ নেয় তখন অস্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই বাংলাদেশ আনসারের। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীরও নিজস্ব দল রয়েছে। ইকুইপমেন্টসহ কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় দলের পক্ষ থেকেই। তবে শোভা বাংলাদেশ আনসারের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, 'আমাদের এখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক। বিশেষ করে আমাদের ডিরেক্টর নিমাই দাস এবং রায়হান ফকীর অনেক সুযোগ-সুবিধা দেন।' নিজের সফলতার জন্য বাংলাদেশ আনসারের কাছে কৃতজ্ঞতাও জানান শোভা। ইকুইপমেন্টের অভাব নেই। তবে ভালো কোচের অভাব। যোগ্য কোচের হাতে পরলে বাংলাদেশ ফেনসিংয়ে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারবে বলে সাহাদা আক্তার শোভার বিশ্বাস। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০০ ফেনসিং খেলোয়াড় আছেন। এই ক্রীড়া ইভেন্টে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারলে প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে তেমনি যোগ্য তারকাদেরও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।