শক্তিমত্ত্বায় দুই দল যখন সমপর্যায়ের তখনই পরাজয়ের দায় স্বীকারের প্রশ্ন আসে! কিংবা নিজেদের চেয়ে দুর্বল দলের বিরুদ্ধে হারলে! টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান তিন নম্বরে, বাংলাদেশ নয়ে। তারপরেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে পরাজয়ের দায় স্বীকার করলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কেন?
বিশ্বকাপ থেকে খুলনা টেস্ট; বাংলাদেশের পারফরম্যান্স স্বপ্নের মতো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ জয়। তারপর খুলনা টেস্টে জাদুকরী পারফরম্যান্স দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু ঢাকা টেস্টে হঠাৎই সেই পুরনো বাংলাদেশ! দুরন্ত পারফরম্যান্সের পর হঠাৎ বাজেভাবে হারের জন্য তাই প্রতিপক্ষের সক্ষমতার চেয়ে নিজেদের খারাপ পারফরম্যান্সকেই দুষলেন টাইগার দলপতি।
ধারহীন ব্যাটিং, বোলিং! শরীরী ভাষাতেও ছিল না আত্দবিশ্বাসের ছাপ। সে কারণেই কিনা ৫ দিনের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারতে হলো সাড়ে তিন দিনে। খুলনা টেস্টে দারুণভাবে ড্র করার পরও ঢাকায় ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে সিরিজটাই হাতছাড়া হয়ে গেল। দল একই থাকলেও খুলনা টেস্টের বাংলাদেশ দলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি ঢাকায়। মুশফিক বলেন, 'এই হারের দায় আমাদেরই। আমরা প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করতে পারিনি। শেষ টেস্টে আমরা যেভাবে পারফর্ম করেছিলাম, এই টেস্টে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি।'
দলে স্পেশালিস্ট বোলার মাত্র তিন জন। বাকি আটজনই ব্যাটসম্যান। অবশ্য স্কোর কার্ড দেখলে, ভুল বোঝা স্বাভাবিক, কেননা এই টেস্টে বোলিং করেছেন নয়জন বোলার। কেবলমাত্র ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুশফিক ছাড়া সবাই হাত ঘুরিয়েছেন। এখানে কলরিডসের সেই বিখ্যাত গল্প 'অ্যানসিয়েন্ট মেরিনার'এর উক্তিটি খুবই যুক্তিযুক্ত, 'চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কিন্তু পান করার মতো এক ফোঁটা পানিও নেই।'
টেস্ট জিততে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দরকার হয় ভাগ্যের ছোয়াও! কেননা পাঁচদিনের ম্যাচে বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের কারণে পণ্ড হয়ে ড্র হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ভাগ্যের স্পর্শ বেশি দরকার হয় পারফরম্যান্সে! ঢাকা টেস্টে সেই 'ভাগ্য'ই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল টাইগারদের দিক থেকে। তা না হলে কেন প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান আজহার আলি ও ইউনুস খান আউট হওয়ার পরও 'নো' বলের কারণে বেঁচে যাবেন! তারপর পাকিস্তানের এই দুই তারকাই তো ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দেন। আজহার করেন ডাবল সেঞ্চুরি, আর ইউনুস সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশ ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিল একাদশ ঘোষণার আগেই। প্রথম দিন ম্যাচ শুরুর আগে ওয়ার্ম-আপ করতে নিয়ে সবচেয়ে কার্যকরী বোলার লেগ স্পিনার যুবায়ের আহমেদ লিখন ইনজুরিতে পড়েন। শাহাদত হোসেন রাজীবের পেস বোলিংয়ের ওপর ভরসা করেই টস জিতে ময়েশ্চারের সুবিধা নিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু সেই শাহাদত মাত্র দুই বল করেই পড়লেন ইনজুরিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৫৫৭/৮ ডিক্লে.
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ২০৩ (অলআউট)।
পাকিস্তান ২য় ইনিংস : ৪১.১ ওভারে ১৯৫/৬ ডিক্লে. (মিসবাহ ৮২, ইউনুস ৩৯, আজহার ২৫, সরফরাজ ১৮*, শহীদ ২/২৩, মাহমুদুল্লাহ ১/৮, শুভাগত ১/১৮, সৌম্য ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৬)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ৫৬.৫ ওভারে ২২১ (মুমিনুল ৬৮, তামিম ৪২, শুভাগত ৩৯, ইমরুল ১৬, শহীদ ১৪*, সাকিব ১৩, ইয়াছির ৪/৭৩, ইমরান খান ২/৫৬, হাফিজ ১/৩, ওয়াহাব ১/৩৬, জুনায়েদ ১/৪৫)।
ফলাফল : পাকিস্তান ৩২৮ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আজহার আলী (পাকিস্তান)।
সিরিজ সেরা : আজহার আলী (পাকিস্তান)।