প্রায় ২১ বছর আগে ১৯৯৪ সালের বর্ষায় হংকংয়ে ৮টা দেশের প্রফেশনাল গলফারদের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এক বৈঠক। সেখানেই গঠিত হয় দি এশিয়ান পিজিএ। উইকিপিডিয়ার দেওয়ার তথ্যমতে ওটাই ছিল এশিয়ান ট্যুর গঠন প্রক্রিয়ার সূচনা বিন্দু। তবে তখনো ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব পিজিএ ট্যুরের ষষ্ঠ সদস্য হতে অনেক দেরি। ১৯৯৮ সালে এশিয়ায় গলফের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ লক্ষ্য করে দি এশিয়ান পিজিএ কে এশিয়ান ট্যুর নামে মেম্বারশিপ দেয় আন্তর্জাতিক পিজিএ ট্যুর ফেডারেশন। প্রধান কার্যালয় থেকে যায় হংকংয়েই। তবে ২০০২ সালে এশিয়ান ট্যুরের হেড কোয়ার্টার স্থানান্তরিত হয় মালয়েশিয়ায়। ২০০৪ সালে এশিয়ান ট্যুরে প্রফেশনাল গলফাররা ম্যানেজমেন্টের উপর বিরক্ত হয়ে আমূল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকেই এশিয়ান ট্যুরে গলফারদের আধিপত্য শুরু হয়। এশিয়ান গলফও এগিয়ে যেতে থাকে তর তর করে। ২০০৪ সালে যেখানে মাত্র ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাইজমানির ট্যুর টুর্নামেন্ট আয়োজন করে এশিয়ান ট্যুর সেখানে ২০০৯ সালে ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাইজমানির ট্যুর টুর্নামেন্ট আয়োজন করে তারা!
চলতি বছরে এশিয়ান ট্যুর ২১ টা টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে ৪টা, মালয়েশিয়ায় ৩টা, ভারতে ২টা, ইন্দোনেশিয়ায় ২টা, তাইওয়ানে ২টা এবং বাংলাদেশ, মাউরিতিয়াস, সুইজারল্যান্ড, জাপান, ম্যাকাও, হংকং, ফিলিপিনস ও ভিয়েতনামে ১টা করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। কিছু কিছু টুর্নামেন্টে এশিয়ান ট্যুরের সঙ্গে যৌথ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের পিজিএ ট্যুর, ইউরোপীয়ান ট্যুর, সানসাইন ট্যুর ও জাপান গলফ ট্যুর। এই টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে প্রাইজমানি সবচেয়ে বেশি মেব্যাঙ্ক মালয়েশিয়ান ওপেনে। তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাইজমানির এ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের অনির্বাণ লাহিড়ি। এছাড়া ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাইজমানির ট্যুর থাইল্যান্ড ক্ল্যাসিক টুর্নামেন্ট জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু ডট, ভারতের হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন জিতেছেন অনির্বাণ লাহিড়ি, সিআইএমবি নিয়াগা ইন্দোনেশিয়ান মাস্টার্স জিতেছেন ইংল্যান্ডের লি ওয়েস্ট উড এবং আফ্রো-এশিয়া ব্যাংক মাউরিতিয়াস ওপেন জিতেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ কোয়েতজি। এশিয়ান ট্যুরের চলতি বছরে ষষ্ঠ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হচ্ছে বাংলাদেশে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন। বসুন্ধরা গ্রুপের স্পন্সরে প্রথমবারের মতো দেশে আয়োজিত হচ্ছে এশিয়ান ট্যুর টুর্নামেন্ট। এর আগে দেশে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ট্যুর টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলেও প্রফেশনাল টুর্নামেন্ট এবারই প্রথম। বসুন্ধরা গ্রুপের স্পন্সরেই এ ব্যয়বহুল টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।
আজ থেকে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে শুরু হওয়া বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে ২৪টি দেশের ১৫৫জন প্রফেশনাল গলফার অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩১ জন গলফারও অংশগ্রহণ করছেন। চারদিনে শেষ হবে চারটা রাউন্ড। অংশগ্রহণকারী গলফারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮টি এশিয়ান ট্যুর টুর্নামেন্ট জিতেছেন থাইল্যান্ডের কিংবদন্তিতুল্য গলফার থওর্ন উইরাচান্ত। তিনি এশিয়ান ট্যুরের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টজয়ী গলফার। দ্বিতীয় স্থানে আছেন তারই স্বদেশি থংচাই জায়দি। তিনি ১৩টি এশিয়ান ট্যুর টুর্নামেন্ট জয় করেছেন।
এশিয়ান ট্যুর আনুষ্ঠাকিভাবে যাত্রা করেছিল ১৯৯৯ সালে। এর প্রায় ১৬ বছর পর বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে এ ট্যুরের টুর্নামেন্ট। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশে শুরু হবে এক নতুন যুগ। পেশাদার গলফার তো বটেই, দেশের গলফ ভক্তদের জন্য এতো বিশ্বকাপের আনন্দই!