ঠিক সকাল সাড়ে ৭টায় 'টি অফ' (শুরু) করেন সিদ্দিকুর রহমান, কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ১০ নং হোলে। সজোরে প্রথম শটটি নিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো বৃষ্টি। উপস্থিত মিডিয়াকর্মী, গলফ কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে তখন হতাশা! তবে স্থায়ী হয়নি। উটকো বৃষ্টি কয়েক সেকেন্ডেই উধাও! তারপর সিদ্দিকুরও পেয়ে গেলেন বার্ডি। পরের হোলেও বার্ডি। টানা দুই বার্ডিতে স্বপ্নিল শুরু সিদ্দিকুরের। কিন্তু তৃতীয় হোল সম্পন্ন করার পরই বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস। তারপর নতুন করে শুরু করলেন দেশসেরা গলফার। কিন্তু মনোযোগটা আর ধরে রাখতে পারলেন না। দিন শেষে পারের চেয়ে এক শট বেশি খেলে ফেলেন। ব্যর্থতা দিয়েই সিদ্দিকুর রহমান বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে তার মিশন শুরু করলেন।
৭১ পারের খেলায় প্রথম দিন শেষে এক শট বেশি খেলে যৌথভাবে ৩৪তম অবস্থানে। একই পজিশনে রয়েছেন বাংলাদেশের আরও দুই গলফার সজীব আলী ও দিল মোহাম্মদ। তবে পারের সমান শট খেলে ২১তম অবস্থানে রয়েছেন দুলাল হোসেন। কিন্তু গতকাল প্রথম রাউন্ড শেষ করতে পারেননি তিনি। ১৮ হোলের মধ্যে খেলেছেন মাত্র ১২ হোল। গতকাল যেখানে শেষ করেছেন আজ সেখান থেকেই আবার শুরু করবেন। পারের চেয়ে দুই শট করে বেশি খেলে যৌথভাবে ৪৯তম অবস্থানে রয়েছেন সায়ুম ও নুরজামাল।
কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে বড় সমস্যা হচ্ছে 'ফেয়ারওয়ে' বেশ সরু। তাই বৃষ্টি কিংবা বাতাসের গতিবেগ বেশি হলে বগি খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। সে কারণে শুরুর পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে পারেননি সিদ্দিকুর। বলে হিট করার সময় ফেয়ারওয়েতে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বল গিয়ে পড়েছে পানিতে। আর ফেয়ারওয়ে থেকে বাইরে পড়লেই তো বগি! তবে ফেয়ারওয়ে সরু হওয়ার কারণে সুবিধাও আছে। দেশের বাইরে প্রশস্ত ফেয়ারওয়েতে খেলা তারকা গলফাররা যেকোনো সময় খারাপ করতে পারেন।
শুরুর ক্যারিশমাটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পারার জন্য আক্ষেপ থাকলেও হতাশ নন সিদ্দিকুর। তিনি এখনো মনে করেন শিরোপা জয় করা অসম্ভব নয়। আত্দবিশ্বাসের সঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'চার দিনের মধ্যে যেকোনো গলফারের খারাপ যেতেই পারে। ধরে নিতে পারেন, আমার খারাপ দিন ছিল এটি। সামনের তিন দিন ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। এমন আবহাওয়ায় আমি এই স্কোরকে খারাপ বলব না। তবে বৃষ্টি না আসলে অন্য রকম হতে পারত। আমি তো শুরুটা খুবই ভালো করেছিলাম। তবে এখন আমি ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি। সেটা আগামীকাল (আজ) থেকে হয়তো দেখতে পাবেন।'
পারের চেয়ে ৫ শট করে কম খেলে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন সিঙ্গাপুরের মারদান মামত ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাসে অটল। নিজের খেলা শেষে মামত বলেন, 'প্রথম দিনের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। তবে সামনের দিনে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে দিন শেষে ভালোই লাগছে। আমি মনে করি, পরের দিনগুলোতে পারের চেয়ে তিন শট করে কম খেলতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। তবে এটা ধরে রাখা সহজ নয়। আমি আশাবাদী।'
বৃষ্টি বাধায় সুবিধা করতে পারেননি শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভারতীয় তরুণ গলফার রশীদ খান। তিনি পারের চেয়ে তিন শট বেশি খেলেছেন প্রথম রাউন্ডে।
টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে গলফের দারুণ মিল! অসীম ধৈর্য তো থাকতেই হবে, সবচেয়ে জরুরি গভীর মনোযোগ। একটু এদিক সেদিক হলেই তার মাশুলও দিতে হবে। সিদ্দিকুরও গতকাল তার মাশুল দিয়েছেন। ৭১ পারের খেলায় তিনি শট নিয়েছেন ৭২টি। চারটি বার্ডি পেলেও পাঁচটি বগি খাওয়ায় পিছিয়ে পড়েন সিদ্দিকুর।
সিদ্দিকুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দেশের মাটিতে এশিয়ান ট্যুরের টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা। কাল সকালেই সে স্বপ্নপূরণ হয়ে গেছে দেশসেরা গলফারের। তবে এ কারণেই কিছু ইমোশনাল ছিলেন সিদ্দিকুর। দিনের খেলা শেষে মিডিয়াকে বলেন, 'প্রথম দিকে আমার বেশ ভয় ভয় লাগছিল। খারাপ করার সেটাও একটা কারণ। তবে সে ভয়টা আজই কেটে গেছে। এখন আমি মনে করি, সামনের তিন দিন খুব ভালোভাবে পারফর্ম করতে পারব।'