কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে আসর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এর আগে দেশে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির বড় ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছে। কিন্তু গলফ থেকে যাচ্ছিল আড়ালেই। এ খেলার জনপ্রিয়তা তেমনভাবে না থাকলেও অনেক আগে থেকেই প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। সিদ্দিকুর রহমান দেশের বাইরে বড় দুটো টুর্নামেন্ট জেতার পরই ক্রীড়াঙ্গনে গলফ পরিচিত হয়ে উঠে। এরপরও বাংলাদেশে এশিয়ান ট্যুরের আসর বসবে তা ছিল স্বপ্নের মতো। এক কথায় অসম্ভবই ছিল। কারণ এশিয়া ট্যুর করতে যে অর্থের দরকার তা পাবে কোথায়? শেষ পর্যন্ত অসম্ভবকে সম্ভব করেছে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। ক্রীড়াঙ্গনে বসুন্ধরার অবদানের কথা কারোর অজানা নয়। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ছাড়াও অন্যান্য খেলাতে প্রতিষ্ঠানটি স্পন্সর করেছে। গলফের অধিকাংশ খেলাতে স্পন্সরশিপ করছে তারাই। গলফ ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে না এলে কোনোভাবেই বাংলাদেশ এশিয়ান ট্যুর আয়োজন করা সম্ভব হতো না। এক বছরের জন্য নয় তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ বাংলাদেশে আরও দুবার এশিয়ান ট্যুর হবে বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায়।
ঢাকায় এর আগে বড় তিন খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির আন্তর্জাতিক আয়োজনে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। গলফ বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয় খেলা না হলেও প্রথমবারের মতো এশিয়ান ট্যুর সাড়া জাগাবে এ আশা ছিল অনেকেরই। টুর্নামেন্টের পর্দা উঠেছে গতকালই। অথচ এরই মধ্যে বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনকে ঘিরে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে তা চোখে পড়ার মতো। দেশে এখন কোনো খেলা নেই। মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ভলিবল হলেও সাড়া জাগাতে পারেনি। সত্যি বলতে কি ক্রীড়াঙ্গনে এ মুহূর্তে শুধু একটাই আলোচনা গলফ আর গলফ। বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন কোর্স গড়াতেই এমনভাবে সাড়া ফেলবে তা ভাবাই যায়নি। টুর্নামেন্টকে ঘিরে শুধু কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে উত্তেজনা সীমাবদ্ধ ছিল না বাইরে ক্রীড়ামোদীরাও খোঁজখবর রাখছেন। দুপুর থেকেই পত্রিকা অফিসে ফোন করে অনেকেই জানতে চান বাংলাদেশের সিদ্দিকুরের অবস্থান কী? টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের মূল ভরসা সিদ্দিকুরই। প্রথম দিনটা তার ভালো না কাটলেও বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে কার হাতে ট্রফি উঠবে তা বলা মুশকিল। গলফ যে এখন বিশেষ শ্রেণির খেলা নয়, তা প্রমাণ মিলছে প্রথমবার এশিয়ান ট্যুরের আয়োজন করে। বিদেশি প্রতিযোগিরা আয়োজন দেখে মুগ্ধ। তারা বলছেন, এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের উপকারে আসবে। গলফ খেলার প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়বে। এতে ভবিষ্যতে নতুন নতুন গলফারেরও সন্ধান মিলবে। বসুন্ধরা গ্রুপ খেলাধুলাকে কতটা যে গুরুত্ব দেয় বার বার তার প্রমাণ মিলছে। শুধু পৃষ্ঠপোষকতা নয়, আয়োজন যেন স্বার্থকভাবে শেষ হয় তারও খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও মঙ্গলবার সকালে কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে প্রো-অ্যাম টুর্নামেন্টে অংশ নেন বসুন্ধরা গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফওয়ান সোবহান। গতকালও তিনি খেলা উপভোগ করেন। মূলত তার আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ট্যুরের আসর বসেছে। ক্রীড়াঙ্গনে এখন আলোচনা শুধু গলফকে ঘিরেই। টুর্নামেন্ট শেষে এ উদ্দীপনা যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে গলফ ফেডারেশনকে। ভালো মতো পরিচর্যা করলে বাংলাদেশ শুধু এগিয়েই যাবে না সৃষ্টি হতে পারে টাইগার উডসের মতো বিখ্যাত গলফারের।