দক্ষিণ আফ্রিকায় চলতি টেস্ট সিরিজে ফের বিতর্কের ঝড় উঠল। এবার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ব্যানক্রফ্টের বিরুদ্ধে বল বিকৃতির অভিযোগ আনলেন আম্পায়াররা।
দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এসে চাঞ্চল্যকর ভাবে সেই অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন ব্যানক্রফ্ট এবং অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। শুধু স্বীকার করে নেওয়াই নয়, স্মিথ আরও বলেছেন, এভাবে বল বিকৃতি করার পরিকল্পনার পিছনে তিনি এবং দলের কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের হাত আছে। এর ফলে শাস্তির মুখে ব্যানক্রফ্ট। পরের টেস্টে নির্বাসিত হতে পারেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, স্মিথ-কেও কি এর জন্য শাস্তি দেওয়া হবে?
ক্রিকেটের সাথে এই সিরিজে টানা বিতর্কও চলছে। নিউজিল্যান্ডে তৃতীয় টেস্টে চাপের মুখে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১১ রানের জবাবে ২৫৫ রানে অল আউট হয়ে যান স্মিথরা। এরপর ডুপ্লেসিরা দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৮-৫ তুলে ফেলায় অস্ট্রেলিয়া এখন ২৯৪ রানে পিছিয়ে। এই অবস্থায় ব্যানক্রফ্টের কীর্তি ক্রিকেট দুনিয়ায় ঝড় তুলে দিল।
ঘটনার সূত্রপাত তৃতীয় দিন চা বিরতির ঠিক আগে। ওই সময় ব্যানক্রফ্ট-কে হাতের তালুতে বল ঘষতে দেখা যায়। এরপরে টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, হঠাৎ তালুর ভিতর থেকে হলুদ রঙের কিছু একটা বার করে তা প্যান্টের ডান পকেটে ঢুকিয়ে রাখছেন ব্যানক্রফ্ট।
এই ফুটেজ দেখে টিভি আম্পায়ার ইয়ান গুল্ড সাথে সাথে মাঠের দুই আম্পায়ার নাইজেল লং ও রিচার্ড ইলিংওয়ার্থকে সতর্ক করেন। তখন খেলা বন্ধ রেখে তারা আলোচনা শুরু করেন। এই আলোচনার সময় টিভিতে ফের দেখা যায় ব্যানক্রফ্ট সেই হলুদ জিনিস পকেট থেকে বার করে প্যান্টের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলছেন।
স্মিথ ও ব্যানক্রফ্টকে একসাথে ডেকে পাঠান দুই আম্পায়ার। অস্ট্রেলীয় ওপেনারের পকেটে কী রয়েছে, তা দেখতে চান তারা। পকেট থেকে একটি কালো কাপড়ের সানগ্লাস-কভার বার করে দেখান ব্যানক্রফ্ট। যা দেখে আম্পায়াররা তখন সন্তুষ্ট হয়ে খেলা শুরু করার নির্দেশ দিলেও পরে তার বিরুদ্ধে সরকারি ভাবে বল বিকৃতির অভিযোগ আনেন।
ঠিক কী ঘটেছিল ওই সময়? ব্যানক্রফ্ট বলেছেন, তার পকেটে একটা আঠালো শিরীষ কাগজ ছিল। যেটা তিনি মাঝে মাঝে পিচে ঘষে নিচ্ছিলেন। যাতে পিচের ধুলো-বালি তাতে আটকে যায়। এরপর সেই খরখরে দিকটা বলে ঘষছিলেন তিনি। বল বিকৃত করার জন্য।
ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে স্মিথ বলেন, যা হয়েছে, তার জন্য আমি দুঃখিত। আমার নেতৃত্বে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। আর এটাই শেষ। আমরা এভাবে কিছুটা সুবিধা পাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। দলের সিনিয়ররা ওয়াকিবহাল ছিল। তবে কোচেরা জানতেন না।
অভিযুক্ত ব্যানক্রফ্ট বলেন, আমার বিরুদ্ধে আম্পায়াররা বলের অবস্থা পরিবর্তনের অভিযোগ এনেছেন। জানি এই ঘটনার জন্য আমাকে চিরকাল বদনামের ভাগী হয়ে থাকতে হবে। তবু ঘটনার দায়িত্ব এড়াতে পারি না। তাই আপনাদের সামনে এলাম।
ব্যানক্রফ্টের বিরুদ্ধে আইসিসি 'লেভেল ২' অভিযোগ এনেছে। যার জন্য তার ম্যাচ ফি-র ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ জরিমানা এবং পরের টেস্টে সাসপেন্ড হতে পারেন তিনি।
এই ঘটনার পরই ক্রিকেট বিশ্ব উত্তাল হয়ে ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রেম স্মিথ, অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন, দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা পেসার ডেল স্টেন ও ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিং, সবাই ব্যানক্রফ্টের এই কীর্তির কড়া সমালোচনা করেন।
বিডি প্রতিদিন/২৫ মার্চ ২০১৮/আরাফাত