শিরোনাম
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০৪:১৭

কাজে এলো না বিষ্ণুর স্পেল, ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ: আনন্দবাজার

অনলাইন ডেস্ক

কাজে এলো না বিষ্ণুর স্পেল, ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ: আনন্দবাজার

অবশেষে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল টাইগাররা। স্বপ্নের ফাইনালে ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়ে যুব বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল যুবারা। ক্রিকেট বিশ্বে এখন বাংলার যুবারাই সেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে মহানাটকীয় ম্যাচে টাইগাররা জয় তুলে নেয় ৩ উইকেটে। বাংলাদেশের এ জয় নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল:

অথর্ব আঙ্কোলেকরের বলটা মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ছুটতে শুরু করে দিলেন রাকিবুল হাসান। ডাগ আউট থেকে মাহমুদুল হাসান জয়, তৌহিদ হৃদয়রা ততক্ষণে মাঠের ভিতরে ঢুকে পড়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে। ভারতের মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে হারিয়ে প্রথম বার যুব বিশ্বকাপ জিতল বাংলাদেশ। 

ওদিকে পচেফস্ট্রুমের গ্যালারিতে বসে থাকা বাংলাদেশ সমর্থকদের উচ্ছ্বাস তখন বাঁধনহারা। ভিকট্রি ল্যাপ দেওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত তারা। সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজরা যা করে দেখাতে পারেননি, আকবর আলির নেতৃত্বে বাংলাদেশের যুবারা সেটাই করে দেখালেন নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের মাটিতে। ২৩ বল বাকি থাকতে তিন উইকেটে ভারতকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। আইসিসি পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।

ভারতের রান তাড়া করতে নেমে এক সময়ে পায়ের পেশিতে টান ধরেছিল ওপেনার ইমনের। অসহ্য যন্ত্রণায় উঠে গিয়েছিলেন তিনি। দল যখন একের পর এক উইকেট হারিয়ে বিপন্ন, তখন ব্যথা ভুলে ব্যাট হাতে নেমে পড়েছিলেন বাঁ হাতি ইমন। দারুণ সামলালেন ভারতীয় বোলারদের। তার মরিয়া লড়াই দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ক্রিকেটভক্তরা। ম্যাচের শেষে সেই ইমন বলছিলেন, দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আমরা এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে পায়ের ব্যথা হয়তো তখনকার মতো ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। 

বাংলাদেশে যখন আনন্দ। ভারতের সাজঘরে তখন বিষাদের ছায়া। ভারত অধিনায়ক প্রিয়ম গার্গ কোনওমতে নিজেকে সামলে বলছিলেন, দিনটা আমাদের ছিল না। তবে ছেলেরা লড়ে গিয়েছে।

রবি বিষ্ণুই, যশস্বী জয়সওয়ালদের লড়াই কাজে এল না রবিবার। বল করতে নেমে বিষ ঢেলেছিলেন বিষ্ণুই। একাই চার-চারটি উইকেট তুলে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তিনি। বিষ্ণুইয়ের আগে যশস্বীও ব্যাট হাতে শাসন করেছেন বাংলাদেশের বোলারদের। কিন্তু ফাইনালে ১৭৭ রানের পুঁজি নিয়ে লড়া যায় না। তার উপরে বল করার সময়ে একগাদা ওয়াইড-নো বল করে ফেললেন ভারতের বোলাররা। ২১০-২২০ রান ভারত করলে এই ম্যাচের চেহারাই যে বদলে যেত না, তা কে বলতে পারেন।

হারের পরে প্রিয়ম বললেন, টস না জেতা পার্থক্য গড়ে দিল। এই উইকেটে সাবলীলভাবে ব্যাট করা সম্ভব হচ্ছিল না ভারতের ব্যাটসম্যানদের। রানের গতি হয়ে গিয়েছিল মন্থর। যশস্বী একদিক কামড়ে পড়েছিলেন। অন্য দিকে থেকে একের পর উইকেট পড়ল। যশস্বী যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ততক্ষণ বড় রানের আশা ছিল। তিনি ফিরতেই সব শেষ। পুরো ৫০ ওভারও ব্যাট করতে পারল না ভারত। ১৭৭ রানে শেষ হয়ে গেল যশস্বীদের ইনিংস। শেষ সাত উইকেট পড়ল মাত্র ২১ রানে। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার ইমন ও তানজিদ। খুব সহজেই কার্তিক-আকাশদের সামলাচ্ছিলেন তারা। স্কোর বোর্ডে ৫০ রান তোলার পরে প্রথম উইকেট যায় বাংলাদেশের। রবি বিষ্ণুইকে মারতে গিয়ে তানজিদ (১৭) ফেরেন। 

বিষ্ণুইয়ের গুগলিতে বোল্ড হয়ে গেলেন জয় (৮)। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে এই জয়ই সেঞ্চুরি করে ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। এ দিন তিনি ব্যর্থ। তৌহিদ হৃদয়কেও এলবিডব্লিউ করেন বিষ্ণুই। শাহদাত হোসেনও বুঝতে পারেননি বিষ্ণুইয়ের স্পিন। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেটের (১৭টি) মালিক তিনি। সুশান্ত মিশ্রর বলে যশস্বীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় শামিম হোসেনকে (৭)। সুশান্তর বল চালাতে গিয়ে অভিষেক দাস ক্যাচ দিলেন কার্তিক ত্যাগীর হাতে। হঠাৎই ম্যাচে ফিরে আসে ভারত। একমাত্র উইকেট ফেলতে পারলেই ম্যাচ বের করা যাবে। এ ছাড়া আর অন্য কোনও উপায় খোলা ছিল না ভারতের হাতে। মরিয়া প্রিয়ম হাতের সবক’টা তাস ফেলে দিয়েছিলেন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বিষ্ণুইয়ের ১০ ওভার আগেই শেষ করে দেন তিনি।মারাত্মক চাপে থাকা বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য তখন নেমে পড়েন চোট পাওয়া ইমন। পাশে পান বরফ শীতল মস্তিষ্কের অধিকারী অধিনায়ক আকবর আলিকে। চাপটা সামাল দেন তারা। ইমন ও আকবর বাকি ভারতীয় বোলারদের সামলে দেন ঠাণ্ডা মাথায়। ইমন ফেরেন ৪৭ রান করে। জেতার জন্য বাংলাদেশের যখন দরকার ৫৪ বলে ১৫, তখন বৃষ্টি নামে পচেফস্ট্রুমে। বৃষ্টির পরে খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের জেতার সমীকরণ দাঁড়ায় ২৭ বলে ৬ রান। ২৩ বল বাকি থাকতে ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়ন হল বাংলাদেশ।

এর আগে ভারত চার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুব বিশ্বকাপে। এদিন সুযোগ ছিল পঞ্চমবারের জন্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। এই রেকর্ড কোনও দলের ছিল না। সেটা করতে পারলেন না প্রিয়মরা। তাদের মাঠ ছাড়তে হল মাথা নীচু করেই। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর