মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকা নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের স্বপ্ন

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসরাম রনি

ঢাকা নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের স্বপ্ন

‘স্বপ্নের রাজধানী’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন আসন্ন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটের আগে সবার মুখেই প্রতিশ্রুতির বন্যা। অলি-গলিতে গণসংযোগে, পোস্টারে, লিফলেটে কিংবা মাইকিংয়ে এসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছেন প্রার্থীরা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংক ও দুবাইয়ের মতো নগরী গড়ার কথাও বলছেন তারা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির চার মেয়র প্রার্থী প্রতিদিনই গণসংযোগে নিত্য নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সবাই বলছেন, ঢাকা হবে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও আধুনিক নগরী।

সচল, নিরাপদ, আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। একইভাবে বাসযোগ্য আধুনিক নগরী গড়তে চান উত্তর সিটিতে আতিকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে মৌলিক সুবিধাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দক্ষিণ সিটিতে তার প্রধান প্রতিন্দ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে বজায় রেখে আদি ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়েই সংস্কার করবেন।

আতিকুল ইসলামের প্রতিশ্রুতি : আতিকুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ, নারী-শিশুবান্ধব, আলোকোজ্জ্বল ঢাকা গড়তে সড়কে ৪৮ হাজার এলইডি লাইট লাগানোর পরিকল্পনা আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরো এলাকা সিটি টিভির আওতায় আনা হবে। শিশুদের জন্য পার্ক, খেলার মাঠ গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়া হবে। এ বিষয়গুলো আমার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, আমরা একটি পরিকল্পিত শহর গড়তে চাই। এ জন্য ঘরে ঘরে উন্নয়নের মার্কা নৌকা পৌঁছে দিতে হবে। ঢাকাকে যানজটমুক্ত করার উদ্যোগ নেব। বাসমালিকদের সঙ্গে বসে বাসের রুট ঠিক করার কাজ করব। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আপনাদের নিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুন্দর ঢাকা শহর গড়ে তুলব। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা আমাদের আরেকটি চ্যালেঞ্জ। নির্বাচিত হলে পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করব।

তাবিথ আউয়াল যা বলছেন : নগর ভবন থেকে দুর্নীতি দূর করাসহ ১২ দফা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাবিথ আউয়াল। একই সঙ্গে বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা মহানগর গড়তে চান ধানের শীষের এই প্রার্থী। তিনি বলেন, আমি মেয়র হলে সেবক হিসেবে জনগণের পাশে থাকব। স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নই হবে আমার কাজ। সিটি করপোরেশন এখন দুর্নীতির আখড়া। এটাকে দুর্নীতিমুক্ত করব। এ ছাড়া খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, নগরবাসীকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্যাক্স প্রদান, সবার জন্য বাসস্থান, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ঢাকা শহরের নির্মল পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন, শব্দ ও বায়ুদূষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সামাজিক উন্নয়ন, জন্ম-মৃত্যু সনদ পেতে ভোগান্তি দূর করা, সবার জন্য বিনোদন, খেলাধুলার পর্যাপ্ত মাঠসহ ক্রীড়াঙ্গনের পরিবেশ, ডিজিটাল সেবা প্রদান, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নগর প্রশাসন গড়ে তোলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করাসহ সামগ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাবিথ আউয়াল। কাল বুধবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তাবিথ আউয়াল তার ১২ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন।

 

ফজলে নূর তাপসের ভাবনা : নির্বাচিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে মৌলিক সুবিধাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে আগামী ৫ বছরে বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের ৭ দিন, দিনের ২৪ ঘণ্টার ৩৬০০ সেকেন্ড আপনাদের জন্য নিবেদিত করব। নগর ভবনের দরজা সবার জন্য খোলা থাকবে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাপস বলেন, আপনাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেলে আমাদের প্রাণের ঢাকা, ভালোবাসার ঢাকা, জীবনযাপনের ঢাকা, নতুন প্রজন্ম নিয়ে স্বপ্নের ঢাকা গড়ব। আমি ৫ ধাপে ঢাকার উন্নয়ন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কারণ উন্নত বাংলাদেশের একটি উন্নত রাজধানী প্রয়োজন। সেটা হবে আমাদের উন্নত ঢাকা। সেই উন্নত ঢাকা আমরা এখনো করতে পারিনি। আমরা পরিকল্পনা তৈরি করব ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি এবং সেখানে আমাদের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা যে কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করব, সেটার অন্তত ১০ বছরের স্থায়িত্ব হবে। 

প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন : দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, মেয়র নির্বাচিত হলে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বজায় রেখে আদি ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়েই সংস্কার করব। পুরান ঢাকা আমার অস্তিত্ব। আমার মরহুম বাবা সাদেক হোসেন খোকার ছায়া দেখতে পাই পুরান ঢাকায়।

ঢাকা সিটি দক্ষিণের জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে নগর সরকারের আদলে একটি বাসযোগ্য ও দূষণমুক্ত নগরী উপহার দেব। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা, অনিরাপদ পানি সরবরাহ, যানজটসহ নানা নাগরিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ও প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই মশা নিধনে ব্যাপকভিত্তিক কাজ শুরু করব।

পাশাপাশি জলাবদ্ধতা, যানজট ও মাদক সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ দিনের পরিকল্পনা ঘোষণা করব।

এ ছাড়া উত্তর সিটিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ড. সাজেদুল হক রুবেল, দক্ষিণ সিটিতে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুর রহমান জমজমাট প্রচার চালাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর