মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

খাল নিয়ে কী করবে দুই সিটি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

খাল নিয়ে কী করবে দুই সিটি

রাজধানীর খালগুলো এখন ময়লার ভাগাড়। পরিকল্পিত সংস্কারের মাধ্যমে এগুলোতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করতে চায় সিটি করপোরেশন। রবিবার মোহাম্মদপুর রামচন্দ্রপুর খালের ছবি তুলেছেন- রোহেত রাজীব

ঢাকার খাল এবং পানি নিষ্কাশন চ্যানেল সংরক্ষণের দায়িত্ব পাচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। খালের দখল, দূষণ রোধ করে জলজট নিরসনের পরিকল্পনা করছে দুই সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খালের দুই পাড়ে গাছ লাগিয়ে, ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন তৈরি করে দখল রোধ করব। নতুন ওয়ার্ডগুলোর খালে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। অন্য ওয়ার্ডেও একইভাবে কাজ এগিয়ে নেব। খাল দখলমুক্ত করে নাব্য ফিরিয়ে আনতে হবে। অনেক জায়গায় খালের প্রস্থ দুই ফুট পরিমাণ। তিনি আরও বলেন, খাল পরিচ্ছন্ন করে ওই এলাকাবাসীকে তার দায়িত্ব দেব। খালপাড়ের বাসিন্দাদের ওই খাল দত্তক দেব। তিনি বলেন, খাল পরিষ্কার করে আলমারি, সোফা, টেলিভিশন পর্যন্ত পেয়েছি। খাল দূষিত করলে তাদের জরিমানার আওতায় আনা হবে। খাল নাব্য থাকলে রাজধানীতে জলজট থাকবে না।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, এক সময় খালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হাতেই ছিল এবং আইনেও তাই আছে। পরে কোনো এক সময়ে রাষ্ট্রপতির আদেশে সেটি ঢাকা ওয়াসার হাতে দেওয়া হয়। এখন দুই সিটির মেয়র খালের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সবাই মিলে আলোচনায় বসে আমরা ওয়াসা থেকে দুই সিটির কাছে খালগুলো হস্তান্তরের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হস্তান্তর কাজটি সম্পন্ন করতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি থেকে চারজন করে আটজন, ঢাকা ওয়াসা থেকে চারজন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিমকে আহ্বায়ক ও মোহাম্মদ সাঈদ উর রহমানকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি করা হয়েছে। গঠিত এ কমিটি সিটি করপোরেশন কীভাবে কাজ করবে, ওয়াসা কীভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। সে অনুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়া সম্পাদন হবে। কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্টের আলোকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে এত দিন ওয়াসা দায়িত্ব পালন করেছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই সিটি করপোরেশন খালের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য জনবল, যন্ত্রপাতিসহ সবকিছুই সিটি করপোরেশনের কাছে আছে, তাদের সক্ষমতাও আছে।

ওই সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা নিরসনে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ৩০ বছরের বেশি সময় ঢাকাবাসী দুর্ভোগে নিমজ্জিত ছিল। আমি আশাবাদী, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের কাজের মাধ্যমে অচিরেই ঢাকাবাসীকে এর সুফল দিতে পারব।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতির একটি সিদ্ধান্ত ছিল খাল ও পানি নিষ্কাশন চ্যানেল ওয়াসাকে দিয়ে দেওয়া। আমরা ২০০৯-১০ সালে দায়িত্বে আসার পর ২০১২ সাল থেকে অনেকবার বলেছি এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক। এখন সেটির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রাজধানীর খালগুলো দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। ওয়াসার দায়িত্বে থাকলেও খাল রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ না থাকায় দখলে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী অনেক খাল। খাল দখল করে গড়ে উঠেছে সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বসতবাড়ি। গত অক্টোবরে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম মিরপুর-১ এলাকায় গোদাগাড়ী খাল পরিষ্কারে নেমেছিলেন। খালের ভিতর পাওয়া গেছে নষ্ট ফ্রিজ, টেলিভিশন, বাথরুমের কমোড, সুটকেস, স্কুলব্যাগ, গাড়ির টায়ার, বালিশ, সোফা, জাজিম, তোশক, চেয়ার ও বড় পানির বোতল। প্রতিটি জিনিসের নাম লিখে ডিএনসিসি প্রদর্শনী করেছে। তাই সেবা সংস্থার উদাসীনতার সঙ্গে অসচেতনতা রয়েছে এলাকাবাসীরও। জনগণকে সচেতন করে খাল পরিচ্ছন্ন করার পরিকল্পনা করছে দুই সিটি করপোরেশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর