কুমিল্লা নগরীর মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয়েছে নানা শিল্পকর্ম। পুলিশ লাইন্স, কান্দিরপাড়, লিবার্টি মোড়, রাজগঞ্জ, ঈদগাহ মোড়, নগর উদ্যান ও ফৌজদারি মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে এই শিল্পকর্ম দেখা যায়। এতে রয়েছে দেশ ও জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছোঁয়া। নগরীতে দেখা যায়, পুলিশ লাইন্স মোড়ে রয়েছে স্বাধীনতার স্মৃতি বহন করা একটি শিল্পকর্ম। যার একদিকে রয়েছে থ্রি-নট থ্রি রাইফেল, অন্য দিকে বাংলাদেশের মানচিত্র।
নিচের অংশে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উল্লাস, সাত বীরশ্রেষ্ঠ, পাকবাহিনীর ক্ষমতা হস্তান্তর, শহীদ পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদের প্রতিকৃতি। গভীর রাতে এসব শিল্পকর্মে রঙিন আলো পড়ে তা বর্ণিল হয়ে ওঠে। রঙিন আলো আর ফোয়ারা বর্ণিল শিল্পকর্ম দেখতে অনেকে সন্ধ্যায় পরিবার নিয়ে বের হন। পাশে দাঁড়িয়ে ছবি ও সেলফি তোলেন। ফৌজদারি মোড়ে আরবি হরফে পবিত্র কালিমা খচিত ফলকটির উচ্চতা ভূমি থেকে ১৬ ফিট, ব্যস ১০ ফিট। তিনটি ফলকের মাঝখানে আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম আরবি হরফের সঙ্গে বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ লেখা আছে। উপরে আল্লাহু লেখা এবং এর নিচের অংশে রয়েছে ছয়টি আরবি ক্যালিওগ্রাফি ট্যারাকোটা সমৃদ্ধ পানির ঝরনা।
ঈদগাহ মোড়ে রয়েছে কুমিল্লার কৃতিসন্তান ও শহীদদের প্রতিকৃতি। পানির ঝরনাবেষ্টিত এ শিল্পকর্মে রয়েছে ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী শচীন দেব বর্মণ, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, সমবায় বিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খান, শহীদ পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদের প্রতিকৃতি। উপরে কসকস ফুল শোভা বাড়িয়েছে। জিলা স্কুলের সামনের সড়কে রয়েছে ‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর’ নামক শিল্পকর্ম। যা সব বয়সীদের যতীন্দ্র মোহন বাগ্চীর ‘কাজলা দিদি’ কবিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজগঞ্জ মোড়ে জাতীয় ফুল শাপলা তৈরি করা হয়েছে। নগরীর কান্দিরপাড় লিবার্টি মোড়ে বিশেষ স্থাপনার চূড়ায় তৈরি করা হয়েছে জাতীয় পতাকা। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের শোভা বাড়িয়েছে বঙ্গবন্ধু ও ধীরেন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে রয়েছে বিশ্বের বুকে কুমিল্লা এমন বার্তাবহ স্থাপনা। যার চারদিকে রয়েছে কুমিল্লার খাদি, ধর্মসাগর দিঘি, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সমাধি, শাহ সুজা মসজিদ, বাখরাবাদ গ্যাস অফিস, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, শালবন বিহার, গোমতী নদী, রানীর কুটির, শতবর্ষী ভিক্টোরিয়া কলেজ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, নগর ভবনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি। গোলাকৃতির এ স্থাপনার চারদিকে ঝরনা। মাঝখানে রয়েছে বিশ্বের মানচিত্র। মানচিত্রের চারদিকে গ্রহ-উপগ্রহ। বিশ্ব মানচিত্রের উপরের চূড়ায় রয়েছে কুমিল্লার মানচিত্র। একপাশে হারমোনিয়ামের আকৃতি শচীন দেব বর্মণের কুমিল্লার কথা জানান দেয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শবনম আর্ট হলের স্বত্বাধিকারী আবদুছ ছালাম বেগ জানান, নগরীর বেশির ভাগ শিল্পকর্ম আমার প্রতিষ্ঠানের তৈরি। প্রতিটি কাজেই নানা রকম বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে আল্লাহর ৯৯ নামের চত্বর বাংলাদেশে এটিই প্রথম। মেয়র মহোদয়ের সহযোগিতায় কুমিল্লায় আরও নান্দনিকতার ছোঁয়া পাবে আশা করি। কুমিল্লা সিটির মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সঙ্গে আমরা কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতিমধ্যে অনেক কাজ হয়েছে। আরও কাজের পরিকল্পনা রয়েছে।