মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বসুন্ধরায় প্রজাপতির ঝলমলে আলো

‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব সড়ক বাতি জ্বলবে এবং নিভে যাবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা বাজলে আলো জ্বলে ওঠে এবং ভোর সাড়ে ৫টা বাজলে আলো নিভে যায়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বসুন্ধরায় প্রজাপতির ঝলমলে আলো

দেশের সবচেয়ে পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এখন প্রজাপতি আকৃতির ঝলমলে আলোর বন্যা বইছে। -জয়ীতা রায়

ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ৫টা বেজে ৩৩ মিনিট। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ফুরিয়ে কুয়াশার গোধূলিতে মিলিয়ে যাচ্ছে সূর্য। চোখের পলকে অন্ধকার ফুঁড়ে জ্বলে উঠল প্রজাপতি আলো। প্রজাপতির মেলে দেওয়া দুই ডানা চুইয়ে আলো ছড়িয়ে পড়ছে সড়কে, জনপথে।  

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সড়কে শোভা পাচ্ছে প্রজাপতির ডানার আদলে গড়া সড়কবাতি। স্বচ্ছ আলোয় ঝলমলে হয়ে উঠেছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। গত রবিবার বসুন্ধরা আই হসপিটাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে গিয়ে দেখা মেলে অনিন্দ্য সুন্দর এই সড়কবাতির। কালো লম্বা খুঁটির মাথায় হলুদ ডানা। সারি সারি সড়কবাতি শোভা পাচ্ছে পুরো রাস্তায়। টুংটাং শব্দে চলছে রিকশা। সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হয়েছেন অনেকে। হেঁটে বেড়াচ্ছে শিশুরা। অনেক শিশু সাইকেল চালানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। শীতের মৌসুমে সন্ধ্যার পরেই ঝুপ করে রাত নেমে আসে নগরীতে। কিন্তু আলোর ফল্গু ধারায় ঝলমল করছে রাস্তা। আলো থাকায় নিশ্চিন্তে নিরাপদে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ।  

বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা ওমর আলীর বয়স ৬৪ ছুঁই ছুঁই। সকাল-সন্ধ্যায় প্রায় ১ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করেন অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমাদের ১০ জনের হাঁটার একটা দল আছে। চাকরি জীবন শেষে সবাই এখন অবসর সময় কাটাচ্ছি। বছর দুয়েক আগে আমার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। চিকিৎসক প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটতে বলেছেন। আমার মতো অনেকেই হাঁটতে আসেন। সন্ধ্যায় হাঁটতে অনেক সময় অন্ধকারে স্পিড ব্রেকারে হোঁচট খাই, দেখতে অসুবিধা হয়। প্রজাপতি বাতি লাগানোর পরে রাস্তা পুরো ঝকঝকে দেখা যায়। আড্ডা, হাঁটায় আমাদের সময় কেটে যায়।

বসুন্ধরা গ্রুপের হেড অব ডিভিশন (ইলেকট্রিক্যাল) লক্ষণ কুমার দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আধুনিক সড়কবাতিতে আলোকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আলোর পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনে জোর দিয়ে এই প্রজাপতি বাতি লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ এলাকা আলোকায়নে ১ হাজার সড়কবাতি লাগানো হবে। এ পর্যন্ত ২০০টি বাতি লাগানো হয়েছে। একটি সড়কবাতির দুই পাশে দুটি এলইডি বাল্ব লাগানো হবে। পুরো এলাকায় ১ হাজার সড়কবাতির দুই পাশে মোট ২ হাজার বাল্ব লাগানো হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা মাথায় রেখে ৬০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব লাগানো হয়েছে। এক সড়কবাতি থেকে আরেকটির দূরত্ব ২০ মিটার। পি ব্লক, পুলিশ হাউজিং, মাদানী এভিনিউতে খুব দ্রুত সড়কবাতি লাগানো হবে। ১৩০ ফুট ও ২০০ ফুট সড়কেও বসবে প্রজাপতি বাতি। জুনের মধ্যে পুরো এলাকায় সড়কবাতি লাগানোর কাজ সম্পন্ন হবে। এর ফলে পুরো আবাসিক এলাকাটি সন্ধ্যার পর থেকেই দিনের মতোই স্বচ্ছ আলোয় ঝলমল করে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসব সড়কবাতি জ্বলবে এবং নিভে যাবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা বাজলে আলো জ্বলে ওঠে এবং ভোর সাড়ে ৫টা বাজলে আলো নিভে যায়। এই আলোয় চোখের কোনো ক্ষতি হয় না। গাড়ির চালক এবং পথচারীদের যাতায়াত স্বাচ্ছন্দ্য করতে এ আলো লাগানো হয়েছে। এ বাতির বদলে নিয়ন কিংবা সোডিয়াম বাতি লাগালে বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেশি হতো, রাস্তায় আলোর স্বল্পতা তৈরি হতো। সফটওয়্যারের মাধ্যমে সড়কবাতির আলোর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের বাসিন্দা জেনিফার লেলিন। রাজধানীর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চার বছরের ছেলেকে সাইকেল চালানো শেখাতে নিয়ে আসেন তিনি। প্রজাপতি বাতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, স্কুল থেকে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় ছেলেকে একটু সময় দিতে রাস্তায় বের হই। এই ফাঁকে রাস্তায় সাইকেল চালানো শেখার চেষ্টা করে সে। রাস্তায় আলো কম থাকলে ছেলে সাইকেল চালিয়ে একটু দূরে গেলে দুশ্চিন্তা হয়।  কিন্তু এই প্রজাপতি বাতি লাগানোয় অনেক দূর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়।  স্বচ্ছ আলোয় একটা সুঁচ       পড়লেও মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে। এই বাতি পুরো এলাকায় লাগানো হলে নয়নাভিরাম রূপ নেবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।

সর্বশেষ খবর