মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বুড়িগঙ্গা তীরে ডকইয়ার্ড শিল্প             

টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। কেউ জাহাজের রং তুলছেন। কেউ লোহার শিট ঝালাই করছেন। কেউ প্রপেলার লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কর্মময় দিন পার করছেন শ্রমিকরা

রাশেদ হোসাইন

বুড়িগঙ্গা তীরে ডকইয়ার্ড শিল্প             

রাজধানীর বুড়িগঙ্গা তীরে জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ মেরামতের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের বিপরীত দিকে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ডকইয়ার্ড। এসব ডকইয়ার্ডের মাধ্যমে দেশের নৌ পরিবহন খাতের বড় চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। নৌযান নির্মাণ ও মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বুড়িগঙ্গা তীরের ডকইয়ার্ডগুলো।

সরেজমিন দেখা যায়, টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। কেউ জাহাজের রং তুলছে। কেউ লোহার শিট ঝালাই করছেন। কেউ প্রপেলার লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কর্মময় দিন পার করছেন শ্রমিকরা। পুরনো জাহাজের বডি থেকে লোনা তোলা হচ্ছে। অনেক জাহাজে সাগরের লোনা পানিতে মরিচা ধরেছে। এসব রং করায় ব্যস্ত শ্রমিকরা। এ ছাড়া জাহাজের বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এখানে উৎপাদন করা হয়। এক সময় প্রপেলার দেশের বাহির থেকে আমদানি করা হতো। বর্তমানে কেরানীগঞ্জে তা উৎপাদন হয়। আকার ভেদে এক একটি জাহাজ নির্মাণ করতে ছয় মাস, আট মাস, ১২ মাস সময় লেগে যায়। ক্ষেত্র বিশেষ দুই বছরও লাগে। নতুন জাহাজ নির্মাণ শেষে বিআইডব্লিউটিএকে জানানো হয়। তারা পরিদর্শন করে জাহাজ চলাচলের অনুমতিপত্র সামুদ্রিক পরিবহন অধিদফতরে পাঠায়।

জানা যায়, কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা তীরে ৩৩টি ডকইয়ার্ড রয়েছে। এর পাশে আরও ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাধারণত বর্ষার আগে জাহাজ মেরামতের কাজ বেশি হয়। শীতের মৌসুমে ডকইয়ার্ডে ভালো ব্যবসা চলে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি কমে আসে। নদীর উপকূলে বিভিন্ন ধরনের জাহাজের কাজ করতে তখন সুবিধা হয়। জাহাজ রং করা, পুনঃ নির্মাণ করতে এসব ডকইয়ার্ডে আসে। এ ছাড়া নতুন জাহাজ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বন্দরে জাহাজ ভিড়তে পারছে না। আগে যেখানে ১৫/২০ দিন জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করার অপেক্ষা করা লাগত এখন সেখানে দেড় দুই মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তাই এসব লাইটার জাহাজের ব্যবহার ও কমে গেছে। ফলে মালিকরা জাহাজ মেরামত কম করছেন।

কেরানীগঞ্জের ডকইয়ার্ডে প্রায় শতাধিক ঠিকাদার জাহাজ মেরামত ও নির্মাণের কাজে নিয়োজিত। ডকইয়ার্ড মালিকরা মূলত পঞ্চাশের দশকে এখানে কাঠের জাহাজ ব্যবসা শুরু করে। তবে স্বাধীনতার পরপরই ডকইয়ার্ড শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। পর্যায়ক্রমে আধুনিকতার স্পর্শে এসে স্টিলের জাহাজ নির্মাণ শুরু করে। বর্তমানে এসব ডকইয়ার্ডে বছরে বিভিন্ন সাইজের প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী ও মালবাহী জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত হচ্ছে। আকার ভেদে এক একটি জাহাজ নির্মাণে খরচ পড়ে ৬০ লাখ থেকে সাত-আট কোটি টাকা পর্যন্ত। কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, খুলনা এবং বরিশালেও অনুরূপ ডকইয়ার্ড শিল্প এলাকা রয়েছে। ডকইয়ার্ড মালিকরা জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে এ ইয়ার্ড শিল্প এলাকাই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। সেখানে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী জাহাজ ও পণ্যবাহী জাহাজ মেরামত করা হয়।

তবে ডলার সংকটে এলসি বন্ধ থাকায় ভরা মৌসুমেও তেমন কাজ নেই ডকইয়ার্ডে। এ সময়ে জাহাজে পূর্ণ থাকত ডকইয়ার্ডগুলো। এবার তার উল্টো চিত্র। বেবি ডকইয়ার্ডের কর্মী মো. নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের ডকইয়ার্ডে শীতকালে ৫/৬টা জাহাজ একসঙ্গে মেরামত করা হয়। নদীতে অনেক জাহাজ অপেক্ষায় থাকত। বর্তমানে জাহাজ কম মেরামত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড শিপইয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, কেরানীগঞ্জে ডকইয়ার্ড ও শিপইয়ার্ড নির্মাণ শিল্পে ১০ থেকে ২০টি সেক্টর নিয়ে ৫০/৬০ হাজার লোক এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে এলসি বন্ধ থাকায় এ শিল্পের মন্দা যাচ্ছে। বন্দরে জাহাজের ব্যবহার কমে যাওয়ায় জাহাজের মালিকরা নতুন জাহাজ তৈরি করছেন না। পুরনোগুলো মেরামতও কম হচ্ছে।  তিনি বলেন, সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নিয়ে আমাদের পুনর্বাসন করতে চায়। নতুন জায়গাতে চার স্লিপারের একটি ডকইয়ার্ড নির্মাণের খরচ প্রায় ১০ কোটি টাকা হবে। এটি স্থানান্তর করা হলে ব্যবসায়ীদের নতুন বিনিয়োগ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর