এসে গেছে ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদ। এই ঈদের রসনাবিলাসে ডাইনিংয়ে থাকে গরু ও খাসির মাংসের নানা পদ। খাওয়াটা তখনই জমে যদি রান্নাটা ভালো হয়, যদি আইটেমে থাকে বৈচিত্র্য। ভোজনবিলাসীদের রসনাকে তৃপ্তি দিতে ঈদের আয়োজনে বেশ কয়েকটি মজাদার রেসিপি তুলে ধরেছেন সোনিয়া রহমান...
বিফ স্টেক
উপকরণ
বিফ স্টেক দুই পিস (দুই কেজি), রসুন বাটা ১.৫ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা দুই টেবিল চামচ, অলিভ অয়েল দুই টেবিল চামচ, ভিনেগার দুই টেবিল চামচ, সয়া সস তিন টেবিল চামচ, লবণ ১/৪ চা চামচ, মধু এক চা চামচ, তেঁতুল দুই টেবিল চামচ, লালমরিচ গুঁড়া ১.৫ চা চামচ এবং গোলমরিচ গুঁড়া ১.৫ চা চামচ।
প্রণালি
একটি বোলে রসুন বাটা, ভিনেগার, সয়া সস, অলিভ অয়েল, সরিষা বাটা, লালমরিচ গুঁড়া, গোলমরিচ গুঁড়া, মধু ও লবণ একসঙ্গে ভালো করে মেশাতে হবে। এবার তাতে তেঁতুল ঢেলে দিতে হবে। আবার ঠিকমতো মিশিয়ে নিয়ে মিক্সচারটি একটি জিপলকড ব্যাগে ঢেলে দিতে হবে। তার মধ্যে বিফ স্টেকের টুকরো দুটি দিয়ে লক আটকে ভালোভাবে নেড়ে মাংসের গায়ে মিক্সচারটি লাগিয়ে নিতে হবে। এবার ব্যাগটি ফ্রিজে ৮-১২ ঘণ্টা মেরিনেট হতে রেখে দিতে হবে। এখন একটি গ্রিল প্যানে কুকিং স্প্রে দিয়ে তার ওপর স্টেক দিয়ে দিতে হবে। দুই পাশ ঠিকমতো উল্টেপাল্টে দিতে হবে। তৈরি হয়ে যাবে বিফ স্টেক।
খাসির গ্লাসি কারি
উপকরণ
খাসির মাংস ৭৫০ গ্রাম, পিঁয়াজ কুচি এক কাপ, আস্ত গরম মসলা (দারুচিনি দুটি, এলাচ দুটি, লবঙ্গ তিনটি, গোলমরিচ পাঁচটি, তেজপাতা একটি) আদা বাটা এক টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১/২ টেবিল চামচ, বাদাম বাটা ১ ১/২ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, নারিকেল বাটা ১ ১/২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা এক চা চামচ, গরম মসলা বাটা (দারুচিনি দুই টুকরো, এলাচ দুটি, লবঙ্গ তিনটি, তেজপাতা একটি), জয়ফল গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, জয়িত্রী গুঁড়া ১/৪ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১/২ চা চামচ, টালা জিরা গুঁড়া ১/২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, আলুবোখারা পাঁচটি এবং তেল+ঘি মিলিয়ে চার টেবিল চামচ।
প্রণালি
প্রথমে পাত্রে তেল গরম হতে নিন। এরপর গরম তেলে একে একে পিঁয়াজ কুচি এবং আস্ত গরম মসলা দিয়ে দিন। পিঁয়াজের কালার ব্রাউন হয়ে গেলে এর মধ্যে খাসির মাংস ঢেলে দিয়ে তিন চার মিনিট মাংস ভেজে নিন। এরপর মাংসে পরিমাণমতো লবণ দিন। মাংস ভাজার এসময় সব বাটা মসলা এবং গুঁড়া মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্টের মতো বানিয়ে নিন। এরপর ভাজা মাংসের মধ্যে এই মসলার পেস্টটি দিয়ে দিন। পাত্র ঢেকে দিন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন যাতে পাত্রের নিচে না লেগে যায়। মাংস সিদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হলে আলুবোখারাগুলো দিয়ে দিন।
গরুর কালা ভুনা
উপকরণ
দুই কেজি গরুর মাংস, ১/২ চামচ মরিচ গুঁড়া, এক চামচ হলুদ গুঁড়া, ১/২ চামচ জিরা গুঁড়া, ১/২ চামচ ধনিয়া গুঁড়া, এক চা চামচ পিঁয়াজ বাটা, দুই চামচ রসুন বাটা, ১/২ চামচ আদা বাটা, সামান্য গরম মসলা, ১/২ কাপ পিঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ পাঁচটা, স্বাদমতো লবণ, সরিষার তেল।
প্রণালি
গরুর মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। তারপর লবণ, তেল ও বাকি সব মসলা দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে (পিঁয়াজ এবং কাঁচা মরিচ বাদে)। মাখানো মাংসটি চুলায় হালকা আঁচ রেখে জ্বাল দিতে হবে। এবার দুই কাপ পানি দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে দিন। ঝোল শুকিয়ে, মাংস নরম হয়ে গেলে অন্য একটি কড়াই নিয়ে, তাতে তেল গরম করে পিঁয়াজ কুচি এবং কাঁচা মরিচ ভাজতে থাকুন। সোনালি রং হয়ে এলে কড়াইতে গরুর মাংস দিয়ে, হালকা আঁচে ভাজতে হবে। মাংস কালো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
আফগানি পোলাও-গোশত
উপকরণ
মাংস এক কেজি, টম্যাটো তিনটি (ব্লেন্ড করা), পোলাওয়ের চাল তিন কাপ, রসুন কুচি ৪-৫ কোয়া, পিঁয়াজ কুচি তিনটি, আদা কুচি এক চা চামচ, ছোট এলাচ আটটি, গোটা ধনে এক চা চামচ, জিরা এক চা চামচ, লবঙ্গ ১/২ চা চামচ, লাল মরিচ গুঁড়া এক চা চামচ, দারুচিনি তিনটি ছোট টুকরো, কাঁচা মরিচ কুচি ২-৩টি, গরম পানি সাত কাপ, সাদা তেল দুই টেবিল চামচ, ঘি দুই টেবিল চামচ, কিশমিশ ১৫-২০টি এবং গাজর ১/৪ কাপ জুলিয়ান কাট।
প্রণালি
প্রথমে গরুর মাংস ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর একটি কড়াইয়ে আদা, রসুন, গোটা গরম মসলা, পিঁয়াজ, ধনে, জিরা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে সাত কাপ পানিতে ৩০ মিনিট ধরে মাংস সেদ্ধ করে নিন। এবার মাংসের টুকরোগুলো আলাদা করে রেখে দিন। একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে পিঁয়াজ দিয়ে সোনালি করে ভাজুন। এতে টম্যাটো কাঁচা মরিচ, লাল মরিচ গুঁড়া দিয়ে মসলা কষানো হয়ে এলে তাতে মাংসের টুকরোগুলো যোগ করুন। এর মধ্যে আগে থেকে বানিয়ে রাখা চিকেন স্টক ভালো করে ছেঁকে ঢেলে দিন। এতে চাল মিশিয়ে ফুটতে দিন। যতক্ষণ না চাল সব স্টক শুষে নিয়ে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে কিশমিশ ছড়িয়ে আরও ২-৩ মিনিট হালকা আঁচে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। অল্প ঘিয়ে গাজর ভেজে নিন নরম হওয়া পর্যন্ত। পোলাওয়ের ওপর ছড়িয়ে দিন। তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু আফগানি পোলাও-গোশত।
আচার-ই-মাংস
উপকরণ
গরু বা খাসির মাংস দুই কাপ, আদা বাটা এক চা চামচ, রসুন বাটা এক চা চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়া এক চা চামচ, হলুদ গুঁড়া এক চিমটি, তেজপাতা দুটা, পাঁচফোঁড়ন এক চা চামচ, সরিষা বাটা এক চা চামচ, ভিনেগার এক চা চামচ, রসুন আধা কাপ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, শুকনা মরিচ পাঁচ-ছয়টা, সরিষার তেল দুই কাপ এবং লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি
একটি প্যানে মাংস নিয়ে তাতে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, আদা-রসুন বাটা ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিন। পরিমাণমতো পানি দিয়ে মাংস সেদ্ধ করে নিন। অন্য একটি প্যানে দুই কাপ সরিষার তেল গরম করে এতে তেজপাতা শুকনা মরিচ ও পাঁচফোঁড়ন দিয়ে নাড়তে থাকুন। এবার সরিষা বাটা, ভিনেগার ও গোটা রসুন দিয়ে নাড়তে থাকুন দুই মিনিটের মতো। এরপর মাংস দিয়ে নাড়ুন। এতে গরম মসলা গুঁড়া দিন। নাড়তে নাড়তে যখন মাংস ভাজা ভাজা হবে এবং রসুন সেদ্ধ হবে তখন নামিয়ে নিন।
গোশত-ভর্তা
উপকরণ
হাড় চর্বি ছাড়া গরু বা খাসির মাংস, চার-পাঁচটা বোটাসহ শুকনো মরিচ ভাজতে হবে, দুই-তিনটি কাঁচা মরিচ বোটা ছাড়িয়ে, দুটি পিঁয়াজ কুচি (পাতলা পাতলা পিঁয়াজ কুচি), লবণ পরিমাণমতো, রসুন কুচি (পাতলা করে কেটে নিতে হবে), ১/৪ ভাগ গরম মসলা গুঁড়া, হাফ চা চামচ ভাজা জিরার গুঁড়া, সরিষার তেল পরিমাণমতো।
প্রণালি
গোশত রান্না করার পর হাড় ও চর্বি ছাড়া যে গোশতগুলো থাকে সেগুলো নিয়ে নিতে হবে। আট থেকে দশ পিস গোশত কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে বা চাকু দিয়ে নরম করে নিতে হবে। এবার একটি প্যানে তেল নিয়ে চার থেকে পাঁচটি শুকনো মরিচ আর দুই থেকে তিনটি কাঁচা মরিচ দিয়ে দেবেন। মরিচ ভাজা হলে তুলে নিয়ে দুটি পিঁয়াজ কেটে নিতে হবে আর মরিচগুলো লবণ দিয়ে ভেঙে নিতে হবে। পিঁয়াজ ভালো করে চটকে নিতে হবে। পাতলা করে রসুন কুচি করে কেটে নিতে হবে আর আদাও পাতলা করে কেটে নিতে হবে। এক চামচের চার ভাগের এক ভাগ গরম মসলা, হাফ চা চামচ টেলে নেওয়া জিরার গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। এবার কুচি করা গোশতগুলো এর মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। আরও দিতে হবে সরিষার তেল। তারপর গোশত সব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তৈরি হয়ে যাবে মজাদার গোশত ভর্তা।