আকাশের নীল, নদীর নীল, চোখের নীল কিংবা মনে জমে থাকা একরাশ নীল- সব মিলিয়ে এই ঋতুতে নীল হয়ে ওঠে আবহ, অনুভব আর অভিব্যক্তির ভাষা। তাই তো বর্ষার সাজে নারীর বসনে বারবার ফিরে আসে নীল রঙের শাড়ি, কুর্তা, কামিজ কিংবা টপ
আকাশে যখন ঘন মেঘের আনাগোনা, দিনভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মন আনমনা, তখন প্রকৃতির এই নীল রং কি আপনাকেও টানে? বর্ষা মানেই যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে সবুজের গাঢ়তা আর মেঘে ঢাকা আকাশের স্নিগ্ধ নীল। এই সময়ে মন চায় নিজেকেও সাজিয়ে তুলতে সেই নীল রঙের ছোঁয়ায়। বর্ষায় নীলের আবেদন চিরন্তন, তা হোক পোশাক, অনুষঙ্গ বা ঘরের কোণে এক চিলতে সতেজতা। ‘বর্ষায় নীলে নীলাম্বরি’ শুধু একটি ধারণা নয়, এটি এক ধরনের জীবনযাপন, যা প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের মিলেমিশে একাত্ম করে তোলে।
পোশাকে নীলের স্নিগ্ধতা
বর্ষার ভেজা দিনে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবার আগে আসে আরামের কথা। এই সময়ে উজ্জ্বল রং এড়িয়ে হালকা শেডের দিকে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সেখানেই নীলের যত ম্যাজিক! হালকা আকাশি, রয়্যাল ব্লু, ইন্ডিগো বা টিল (teal)-নীলের প্রতিটি শেডই বর্ষার সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়। ফ্যাশন হাউসগুলোও বর্ষা এলেই পোশাকে নীলকে প্রাধান্য দেয়। কারণ নীল হলো আভিজাত্য, শান্তি, একতা ও সম্প্রীতির রং। মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া বা কুর্তিতে একরঙা নীলের পোশাক ভীষণ আরামদায়ক। সুতি, জর্জেট, সিল্ক, হাফ সিল্ক, লিনেন, ভয়েল, স্লাব কাপড়ের মতো প্রাকৃতিক ও আরামদায়ক উপাদানের পোশাক বেছে নিলে তা যেমন দ্রুত শুকিয়ে যাবে, তেমনি সারা দিন সতেজ অনুভূতি দেবে। ফ্লোরাল প্রিন্টের জর্জেট এবং অরগ্যান্ডি শাড়িও এই সময়ে বেশ জনপ্রিয়। বৃষ্টির দিনে জর্জেট শাড়ির সঙ্গে সুতির প্রিন্টের ব্লাউজ, বিশেষ করে ফুলেল মোটিফের নকশা, চলতি ঋতুর সঙ্গে ভালো মানাবে। গোল বা বোট গলার ব্লাউজ এখন ট্রেন্ডি। উজ্জ্বল রঙের জর্জেট শাড়ি মেঘলা দিনে বেশি মানায় এবং এর যত্নও সহজ। তবে ছেলেদের জন্য ক্যাজুয়াল শার্ট, ফতুয়া, পলো, টি-শার্ট ও ডেনিম জিন্সে নীলের বিভিন্ন শেড বেছে নিতে পারেন। রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবি, বিশেষ করে হালকা নীল বা গাঢ় নীলের একরঙা বা হালকা নকশার পাঞ্জাবি বর্ষার আমেজে দারুণ মানায়।
অনুষঙ্গে নীলের ছোঁয়া
শুধু পোশাকেই নয়, অনুষঙ্গেও বর্ষায় আপনার সাজে নীলের ছোঁয়া যোগ করতে পারেন।
► ব্যাগ : বর্ষায় চামড়ার ব্যাগের বদলে ওয়াটারপ্রুফ, রেক্সিন, প্লাস্টিক বা রাবারের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। বাজারে আজকাল বর্ষা উপযোগী ফ্যাশনেবল ব্যাগও কিনতে পাওয়া যায়।
► জুতা : পুঁতি বা জরির জুতোর পরিবর্তে রাবার, রেক্সিন ও স্পঞ্জের তৈরি ফ্যাশনেবল জুতো বা স্লিপার এ সময়ের আদর্শ। বেশি কাদাযুক্ত রাস্তায় সেমি-হিল পরলেও বর্ষার কাদামাটি থেকে রক্ষা পাবেন।
► মেকআপ : বর্ষায় মেকআপ রাখুন হালকা ও সিম্পল। ভালো ব্র্যান্ডের ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ ব্যবহার করুন। ভারী মেকআপ বা লিকুইড লিপ কালার বৃষ্টির দিনে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
মোটিফ ও রঙে পরিবর্তন
বর্ষার প্রকৃতিতে যখন কদমফুল, শাপলা, পদ্ম, বেলি, মেঘলা আকাশ, নদী আর বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ খেলা করে, তখন ফ্যাশন হাউসগুলো পোশাকে এই মোটিফগুলো তুলে ধরে। ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা এমব্রয়ডারি ও চুমকির কাজ পোশাকে এক অন্য মাত্রা যোগ করে। রঙের ক্ষেত্রে সবুজ, নীল, ছাই, আকাশি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। রং বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস বলেন, ‘বর্ষা শুধুই রোমান্টিকতা নয়, বাস্তবতাও। রাস্তাঘাটে কাদা, হুটহাট বৃষ্টি, স্যাঁতসেঁতে বাতাস-সবকিছু মাথায় রেখেই বেছে নিতে হয় পোশাক।’ দ্রুত শুকানো যায় এমন কাপড়ের ওপর জোর দেন তিনি। যেমন- হাফ সিল্ক, আর্ট সিল্ক, সেমিতসর, ক্রেপ, শিফন, জর্জেট কিংবা কটন মিক্স। সুতি কাপড় ভিজে গেলে শুকাতে দেরি হয় এবং ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে।
বর্ষা উপযোগী পোশাক ও যত্ন
বর্ষার জন্য আদর্শ পোশাক হতে পারে ঢিলেঢালা কাটা টিউনিক, শর্ট ফতুয়া, পালাজ্জো, ঢোলা শার্ট, চেক বা প্রিন্টেড স্কার্ট। অফিসের জন্য হালকা জর্জেট বা ডবল জর্জেটের শ্রাগ বা লং কটি ভালো সমাধান। হাফ সিল্ক, পাতলা সিল্ক, শিফন, জর্জেট বা মসলিনের শাড়িও উপযুক্ত। ভিজলেও সহজে শুকিয়ে যাবে। বর্ষার পোশাকের রঙের স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। নতুন পোশাক পরার আগে পরীক্ষা করে নিন রং ওঠে কি না। যদি কাদা লাগে দ্রুত ধুয়ে নিন এবং ভালোভাবে শুকিয়ে ইস্ত্রি করুন।
আকাশের নীল, নদীর নীল, চোখের নীল কিংবা মনে জমে থাকা একরাশ নীল- সব মিলিয়ে এই ঋতুতে নীল হয়ে ওঠে আবহ, অনুভব আর অভিব্যক্তির ভাষা। তাই তো বর্ষায় নারীর বসন ও সাজে মিশে আছে আবেগ, সুবাস ও সৌন্দর্য। নীল ছোঁয়ায় নীলে নীলাম্বরি হয়ে ওঠেন রমণীরা।
লেখা : ফেরদৌস আরা