সাম্প্রতিক সময়ে ‘রাজকীয়’ কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠছে সুনামগঞ্জের মানুষ। সদর হাসপাতাল সংস্কার, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জমি ও ধোপাজান বালু পাথর মহালের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির প্রতিবাদে উত্তাল এখন সুনামগঞ্জের রাজপথ। ধোপাজান বালু মহালের ইজারা প্রক্রিয়া এবং পরবর্তীতে কথিত ইজারাদারের জুলুমবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠ।
দুর্নীতির এসব ঘটনাগুলোকে মানুষজন বলছেন, দিনদুপুরে জীবনের জৌলুশ ও বিদেশের সম্পদ বাড়াতে জনগণের সম্পদ রাজকীয় স্টাইলে লুটপাট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও সদর হাসপাতাল সংস্কার দুর্নীতি একই সূত্রে গাঁথা। কিন্তু অতীতের মতো এবারও সুনামগঞ্জের মানুষ দুর্নীতির দৈত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে মাঠে নেমেছে।
সুনামগঞ্জের স্বচ্ছ রাজনৈতিক ইমেজের অধিকারী হিসেবে পরিচিত সদর আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বখত জগলুলের নেতৃত্বে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদের মিছিলে শামিল হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কথা জানান দিয়েছেন সুনামগঞ্জের মানুষ। আলোচিত সেই ‘রাজকীয়’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্রমেই ফুঁসে ওঠছে সুনামগঞ্জ। দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোন না কেন- তাদের বিচারের মুখোমুখি করে সরকারের প্রতিটি টাকা যাতে ফেরত নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়, সেই দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। এই প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া থেকে মহল্লায়, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। প্রতিবাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের দাবানল দাউ দাউ করে এখন জ্বলছে হাওরের রাজধানীতে। জানা যায়, হাসপাতাল সংস্কারের জন্য ৫ কোটি ৭১ লাখ এবং বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের জন্য ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারি এই মোট অঙ্কের বরাদ্দের বারো আনাই রাগব বোয়ালরা সাবাড় করে দিয়েছে রাজধানী ঢাকা বসেই। আর এর নেপথ্যে পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় রাজনীতিতে পথহাঁটা দাম্ভিক এক সৎ পিতার অসৎ যুবলীগ নেতা। যার গা থেকে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
রবিবার শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি বলেন, সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক ঐতিহ্য অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সেই ঐতিহ্যকে কালিমাযুক্ত করে নিজেদের ভোগের রাজনীতিকে স্ফিত করে সুনামগঞ্জে কালো অধ্যায় রচনা করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সাহেব সেজে এখানে এসে বিদ্যুৎ ও উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির এই এমপি। জানা যায়, নানা সংকটে জর্জরিত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল সংস্কারের জন্য ২০১৩ সালে জেলা প্রকৌশলীর দফতর গণপূর্ত বিভাগ একটি প্রস্তাবনা পাঠায়। সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে এক কোটি টাকার প্রস্তাবনাকে ৫ কোটি ৭১ লাখে উন্নীত করা হয় অসৎ কর্মকর্তা, ঠিকাদার আর প্রভাবশালীদের যোগসাজশে। বরাদ্দকৃত অর্থের বারো আনাই ভাগাভাগি করে নেয় তারা। তবে এই সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পূর্ত সচিবকে অবগত করান সদর আসনের এমপি। সেসঙ্গে তিনি দাবি করেন, দুর্নীতির সেই টাকা সরকারি কোষাগারে যে কোনো মূল্যে ফেরত নিয়ে আসতে হবে। বিদ্যুতের ভোগান্তি সুনামগঞ্জে এখন নিত্যব্যাপার। সাম্প্রতিক সময়ে অবস্থা একেবারে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎহীন কাটাতে হয় নাগরিকদের। ছাতক থেকে মান্দাতার আমলের প্রযুক্তির মাধ্যমে শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে জমি অধিগ্রহণের নামে নজিরবিহীন দুর্নীতির মাধ্যমে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির সঙ্গে জড়িতরা আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক কম দামে জমি কিনে রাখেন শহরতলির চেখনিখাড়ায়। পরবর্তীতে সেই জমিটি অধিগ্রহণের জন্য নির্বাচন করে, বরাদ্দকৃত ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বারো আনাই ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ এখন মানুষের মুখে মুখে। বরাদ্দকৃত ৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিগ্রহণকৃত ওই সোয়া ৫ একর জমি বর্ষায় অথৈ জলের নিচে তলিয়ে যায়। সেখানে না আছে কোনো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট কিংবা স্থাপনা। এদিকে সুনামগঞ্জের ধোপাজান বালু মহালে শ্রমিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। অতীতে এই জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই আন্দোলনও ভেস্তে গেছে, ওই স্যুট পরা যুবকের উড়ে এসে ভাগবসানোর মধ্য দিয়ে। তার সঙ্গে বিদায়ী বিতর্কিত ডিসিও জড়িত ছিলেন। এদিকে সম্প্রতি পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল ডাক দেন দুর্নীতিবিরোধী মতবিনিময় সভার। সেখানেও শত শত মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মেয়র জানান, বন্যার কারণে আপাতত আন্দোলন স্থগিত রয়েছে। তবে আমরা আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করছি। দুর্নীতির মাধ্যমে কুক্ষিগত প্রতিটি টাকা ফেরত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে অঙ্গীকার করেন জগলুল। উল্লেখ্য, ৯৪ সালে মরহুম পৌর মেয়র মমিনুল মউজদীনের নেতৃত্বে ও দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
এবারে জনগণের আন্দোলনের সামনে একজন যুব রাজনীতিকের উড়ে আসা খলনায়ক সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছেন।
শিরোনাম
- চট্টগ্রামের সড়ক যেন মৃত্যুকূপ, ছয় মাসে নিহত আড়াইশো
- জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবলে টাঙ্গাইলকে ৪-১ গোলে হারাল নেত্রকোনা
- ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৬৪৭
- রাঙামাটি লিগ্যাল এইডে সমাধান হবে ৮ মামলা
- নারায়ণগঞ্জে ২২৪ মন্ডপে দুর্গাপূজা
- ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো
- রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা চায় বিএনপি : আমীর খসরু
- নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বললেন মোদি
- ফেলানীর ছোট ভাইকে চাকরি দিলো বিজিবি
- সৌদি সফর শেষে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
- খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পূজার আমেজ, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- শারদীয় দুর্গোৎসবে সারা’র আয়োজন
- বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাবে ‘এইচবিও ম্যাক্স’
- শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট আসক্তি ও বই পড়ার আগ্রহ বিষয়ে ফকিরহাটে শুভসংঘের আলোচনা সভা
- স্ন্যাপচ্যাটে নতুন দুই ফিচার চালু
- সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টা
- যশোরে কোটি টাকার স্বর্ণের বারসহ যুবক আটক
- বাজারে এলো সাশ্রয়ী মূল্যের ‘আকিজ ড্রিংকিং ওয়াটার’
- ৫ দিনের রিমান্ডে স্বাস্থ্যের ঠিকাদার মিঠু
‘রাজকীয়’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠছে সুনামগঞ্জবাসী
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর