শতাব্দীর পর শতাব্দী পরী নিয়ে ভাবনার জগতে মানুষ নানা আল্পনা এঁকেছে। পরী মেয়ে। অনিন্দ্য সুন্দরী। রাতের অন্ধকার ফুঁড়ে সে শুভ্র আলোয় উদ্ভাসিত হয়। তার পিঠে রয়েছে একজোড়া পেখমযুক্ত ডানা। কেউ কেউ বলেছে, তার হাতে জাদুর কাঠি আছে। পরীকে মানুষ শুভ, অশুভ দুটি বিশেষণই দিয়েছে। পরী নিয়ে গল্পের শেষ নেই। পরী মেঘের ওপারে বাস করে। রাতের অন্ধকারে তারা পৃথিবীতে আসে। তারা নাচে ও গানে পারদর্শী। পরীর ইশারায় বাগানে ফুল ফোটে বলে অনেক দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। ঝড়ের কবলে পড়া পথভোলা সমুদ্র জাহাজকে তারা জাদু বলে বাঁচিয়েছে এমন রূপকথা যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করে এসেছে মানুষ।
সত্যি কি পরী আছে? যাকে নিয়ে এত গল্প, মানুষের এত বছরের বিশ্বাস কি এতই ঠুনকো? পরীর ধারণাটি এসেছে পাগানদের কাছ থেকে। পাগানরা তাদের নিজস্ব দেবীকে পরীর আদলে কল্পনা করে প্রচার করেছিল। পাগানরা বিশ্বাস করত, পরীদের জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। তারা গহিন বনে বিচরণ করে। আকাশ কী সমুদ্রতল সর্বত্র তারা অবলীলায় পৌঁছে যেতে সক্ষম। তবে বিভিন্ন প্রাচীন বিশ্বাস প্রমাণ দেয়, পরীরা অবিকল মানুষের মতো। অনেক নৃজাতীগোষ্ঠী পরী বিশ্বাস জিইয়ে রেখেছে। বেশিরভাগের ধারণা, পরী আকারে খুব ছোট। তবে চাইলে তারা মানুষের আকার ধারণ করতে পারে। প্রাচীনকালে বহু সমুদ্রযাত্রী পরী দেখার বর্ণনা দিয়েছেন। স্যার আর্থার কোনাল ডয়েল ‘ফ্রেন্সেস অ্যান্ড ড্যান্সিং ফেইরিস’ ছবিটিকে সত্যিকারের পরীর ছবি বলে মত দিয়েছিলেন। পরী নিয়ে বাস্তবতার প্রথম ছবি হিসেবে এটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। সেই ছবিতে ফ্রেন্সেসের সঙ্গে নাচে গানে মত্ত একদল পরীকে দেখা যায়। পরী নিয়ে বিজ্ঞানের যাত্রাও কম নয়। স্পষ্ট করে বললে, বিজ্ঞান এখনো পরীর দেখা পায়নি। তবে পরী সদৃশ জীবের দেখা হরহামেশাই মিলছে। যদিও সেগুলো নেহায়েতই পরী সদৃশ প্রাণী। পরী বলতে মানুষের যে গল্প তার ধারেকাছেও নেই সেগুলো। তবে চমকে ওঠার মতো পরীদের দেখা কিন্তু কদিন পরপরই মিলছে। গত বছরই ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনে পরীর ছবি তুলে চমকে দিয়েছেন লিসা। তার আগের বছর ২০১৪ সাল। সে বছর চেস্টার নিবাসী লুসিয়া কোরডারো ছেড়ে কথা বলার পাত্রী নন। তিনি বিজ্ঞানের মুখের ওপর ছুড়ে দিলেন কয়েক মিনিটের ভিডিও। বাড়ির সিসি ক্যামেরা ফুটেজে ধরা পড়ল উড়ন্ত এক পরী। সে নিয়ে কম বিশ্লেষণ হয়নি। তবে সেটি সত্যিকারের পরী নয়— এই উত্তরটিও শক্ত করে কেউ দিতে পারেনি। প্রভাবশালী ডেইলি মিরর সেটি ফলাও করে ছেপে বসল। তার আগে ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির লেকচারার জনের ক্যামেরায় দেখা মিলল পরীর। ছোট ছোট উড়ন্ত পরীর দল। ডিজিটাল ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেল এই পরীদের। এসবের উত্তর কী? বিশ্লেষকরাও চুপ করে রইলেন না। অনেক কুসংস্কারকে গুঁড়িয়ে দেওয়া তাদের হাতে ছেলেখেলা। এগুলো পরী সদৃশ উড়ন্ত পোকা বলেই ক্ষান্ত হলেন না, তাদের প্রজাতি নিয়ে বিস্তর কাজ করে যাচ্ছেন। তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিতেই আগ্রহী। তবে লক্ষ্য করেছেন কি, পরী নিয়ে কল্পনার জগতে যত গল্পই ফাঁদা হয় না কেন তার ভিত্তি সত্যি বলতে খুব দুর্বল। শুনে দেখুন, পরীর অস্তিত্ব পুরোটাই গালগল্পনির্ভর। রূপকথা সাজাতে যত যা আয়োজন তার কোনোটিরও কমতি নেই পরীর বেলাতে। অবশ্য পরীর অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক কিছু কিছু রহস্য উন্মোচিত না হলেও ক্ষতি নেই। মনে মনে পরী আর পরীস্থান খুঁজে ফিরে ক্লান্ত নয় কেউই।
সত্যিকারের পরী
কোনো মন ভোলানো গল্প নয়। বিজ্ঞানের এ যুগে সিসিটিভি ফুটেজ ও ডিজিটাল ক্যামরাবন্দী পরী এরা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে তোলপাড় করা সেই সত্যিকারের পরী—
ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির লেকচারার জনের ক্যামেরায় সত্যিকারের পরী দল। ডেইলি মেইল, হাফিংটন পোস্ট, ডেইলি মিররসহ বিশ্বের প্রথম সারির সব সংবাদ মাধ্যমে ছবিটি আলোড়ন তোলে।
ইংল্যান্ডের নর্দাম্পটনে লিসা ওয়াইল্ডগুজের তোলা ছবিতে সত্যিকারের পরী। ছবিটি প্রকাশ করে সারা বিশ্ব কাঁপিয়ে দেয় ডেইলি মিরর।