রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

পবিত্র জিলহজ মাসের আমলসমূহ

ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন দুটি উৎসবের অন্যতম একটি এই ঈদ। ঈদুল আজহার প্রধান আকর্ষণ পশু কোরবানি করা। নিজের অর্থে  কেনা পশুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করার মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলমান মূলত নিজেকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণের শিক্ষা নেয়।

 

ইসলামের দৃষ্টিতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল আল্লাহর কাছে যতটা প্রিয় তা অন্য কোনো সময়ে নয়। সাহাবারা আরজ করেন, আল্লাহর পথের  জেহাদ থেকেও প্রিয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে কোনো ব্যক্তি যদি জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে বের হয়ে আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন।’ -সহিহ বোখারি

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে জিলহজের ১০ রাতের কসম করে এর সম্মান ও মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ ফজরের। ১০ রাতের। জোড় ও বেজোড়ের।’ সূরা ফজর : ১-৩

মুফাসসিরদের মতে, এখানে ১০ রাত বলতে জিলহজের প্রথম ১০ রাত এবং বেজোড় দ্বারা আরাফার দিন এবং জোড় দ্বারা কোরবানির দিন উদ্দেশ্য। -তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন

জিলহজের নবম তারিখটি আরাফার দিন। সেদিন আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের সবচেয়ে বড় রোকন। এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনের মতো অন্য কোনো দিন আল্লাহ অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। সেদিন তিনি দুনিয়ার নিকটবর্তী হয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, দেখ, ‘আমার বান্দারা এলোমেলে চুল ও ধূলি ধূসরিত শরীরে আমার দরবারে আগমন করেছে। লাব্বাইকা বলে চিৎকার করছে। তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি সবাইকে মাফ করে দিলাম।’

অনন্য এ মাসে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। সেসব আমলের উল্লেখযোগ্য হলো-

নখ, চুল, মোচ ইত্যাদি না কাটা : জিলহজের চাঁদ দেখার পর হাত-পায়ের নখ না কাটা। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানি করতে চায়, সে যেন জিলহজের চাঁদ দেখার পর চুল ও নখ না কাটে।’ -ইবনে মাজাহ : ৩১৮৭

রোজা রাখা : তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জিলহজের প্রথম দশকের প্রত্যেক দিনের রোজা সওয়াবের বিচারে এক বছরের রোজার সমান এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত শবেকদরের ইবাদতের সমতুল্য।’ বিশেষ করে রসুলুল্লাহ (সা.) আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আরাফার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর  বিনিময়ে পেছনের ও সামনের এক বছরের পাপ মাফ করে দেবেন।’

-সহিহ মুসলিম

অধিক পরিমাণে জিকির করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।’ -সুরা হজ : ২৮

আলেমদের মতে, এখানে নির্দিষ্ট দিন বলতে জিলহজের প্রথম ১০ দিন উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দিন আল্লাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ দিনগুলোর ইবাদত তার কাছে অন্য সময়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। সুতরাং তোমরা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার) উচ্চারণ করো।’ -মুসনাদে আহমদ

বর্ণিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বাজারে গিয়ে উচ্চস্বরে তাকবির বলতেন। তার তাকবির শুনে অন্য লোকেরা তাকবির বলতেন। বিশেষ করে জিলহজের ৯ তারিখ ফরজ হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর উচ্চ আওয়াজে একবার তাকবির পাঠ করা সবার জন্য আবশ্যক। একে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়।

তাকবিরটি হলো- ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’

গোনাহ পরিহার করা : এ দিবসগুলোতে ইবাদতের সওয়াব যেমন বেশি, তেমনি পাপকাজে জড়িয়ে পড়াও গুরুতর। তাই এ মাসে যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকা এবং কৃত পাপের জন্য তওবা করা অপরিহার্য।

ঈদের দিন কোরবানি করা : হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈদের দিন পশুর রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা আল্লাহর কাছে অন্য কোনো আমল অধিক প্রিয় নয়। আর কোরবানির পশু তার শিং, চুল এবং পায়ের খুরসহ কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে এবং কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়।’ -তিরমিজি

 

সর্বশেষ খবর