বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের বিশাল যত বিমান

গত ১৩ এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়ায় পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডানাবিশিষ্ট এয়ারক্রাফট ‘স্ট্রাটোলঞ্চ’-এর। এটা ছাড়াও আকৃতিতে বিশ্বে আরও কিছু বিশাল বিমান আছে। বিশ্বের বিশাল কিছু বিমান নিয়ে আজকের রকমারি...

সাইফ ইমন

বিশ্বের বিশাল যত বিমান

পৃথিবীর সবচেয়ে  বড় বিমান স্ট্রাটোলঞ্চ

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মোহাভে স্পেস অ্যান্ড এয়ারপোর্ট থেকে আকাশে উড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান স্ট্রাটোলঞ্চ। বিমানটি তুলনামূলক কম কার্বন নিঃসরণ করবে, একবার জ্বালানি নিয়েই কয়েক দিন উড়তে পারবে এবং বিমানবন্দর ছাড়াই যেখানেই প্রয়োজন সেখানেই হেলিকপ্টারের মতো অবতরণ করতে পারবে। কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে স্থাপন করতে সহায়ক হবে স্ট্রাটোলঞ্চ। এখন রকেটে করে কোনো উপগ্রহ পেটে করে মহাকাশে নিয়ে যায় রকেট। ৩৫ হাজার ফুট উঁচুতে তাদের স্থাপন করে। ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রাটোলঞ্চের সাহায্যে উপগ্রহ মহাকাশে স্থাপন করা সহজ হবে। আর খরচও কম পড়বে। ছোট ছোট উপগ্রহগুলোকে কম উচ্চতায় স্থাপন করতে সহায়ক হবে স্ট্রাটোলঞ্চ। যোগাযোগের উপগ্রহ স্থাপন করার ফলে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় উন্নতি আসবে। দানুবে এ বিমানের রয়েছে অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। দুটি বড় বিমান পাশাপাশি রাখা হলে যেমন আকার হয় সেরকমই আয়তন এ বিমানের। এটিতে রয়েছে বোয়িং ৭৪৭-এর ৬টি ইঞ্জিন এবং ২৮টি চাকা। বিমানটির দুই ডানার মোট দৈর্ঘ্য ১১৭ মিটার। তবে বিমানটির সবচেয় বড় বিশেষত্ব হলো, এটি একই সঙ্গে তিনটি রকেট বহন করতে পারে। ওইসব রকেট উৎক্ষেপণও করতে পারে। ঘণ্টায় ৩০৪ কিলোমিটার গতিতে আড়াই ঘণ্টা আকাশে উড়েছিল বিমানটি। স্ট্রাটোলঞ্চয়ের নির্মাতা সংস্থা স্কেলড কমপোসিট। এ এয়ারক্রাফটটি আকাশে উড়ে ৭১ বছর আগের এক রেকর্ড (স্পরুস গুজ বিমানের রেকর্ড) ভেঙে দিয়েছে। হিউজেস এইচ-৪ হারকিউলিস যা স্পরুস গুজ নামে পরিচিত। বিমানটির দুই ডানার বিস্তৃতি ছিল ৯৭.৫৪ মিটার বা প্রায় ৩২০ ফুট। এর ওজন ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৯ কেজি। ১৯৪৭ সালে বিশাল এ বিমানটি একবারই উড়েছিল। আর তা মাত্র ২৬ সেকেন্ডের জন্য (প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ)। তবে এর মাধ্যমেই ‘স্পরুস গুজ’ বিশ্বের সবচেয়ে বিশাল ডানাওয়ালা বিমানের খেতাব পেয়ে গিয়েছিল।

 

এটি যেন উড়ন্ত প্রাসাদ

বিশ্বের খ্যাতনামা বিমান নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা বোয়িং ৪০ কোটি ডলার মূল্যের ৭৭৭এক্স নামে সদ্য নির্মিত একটি নতুন প্রাইভেট বিমান। একে বলা হচ্ছে উড়ন্ত প্রাসাদ বা ফ্লাইং ম্যানশন। প্রাইভেট বিমানগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে দীর্ঘ আকৃতির। যাতে করে বিশ্বের অর্ধেকটা ঘুরে আসা যেতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মিডল ইস্ট বিজনেস এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশন শো’তে বোয়িং বিজনেস জেটস বিবিজে ৭৭৭এক্স প্রথম প্রদর্শন করে। ধারণা করা হচ্ছে এ বিমানটি হবে বিমানের প্রাইভেট-জেট সংস্করণ। বোয়িং বিজনেস জেটস-এর প্রধান গ্রেগ ল্যাক্সটন এক বিবৃতিতে জানান, আমাদের অত্যন্ত বিশিষ্ট কাস্টমাররা সর্বোত্তম পরিসর ও আরামের মধ্যে ভ্রমণ করতে চান। ভিআইপি ভ্রমণের দীর্ঘ যাত্রাপথ পুনঃসজ্জিতকরণের মধ্য দিয়ে নতুন বিবিজে ৭৭৭এক্স তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। যা আগে কেউ করেনি। এ উড়ন্ত প্রাসাদের ডানার বিস্তৃতি ২৩৬ ফুট। এর কেবিনটি ৭.৯ ফুট উঁচু এবং প্রায় ২০ ফুট প্রশস্ত। ৭৭৭-৯ হচ্ছে ৭৭৭-৮ এর চেয়ে ৩৩ ফুট দীর্ঘ। এর অভ্যন্তরীণ জায়গার পরিসর হচ্ছে তিন হাজার ২৫৬ বর্গফুট।

 

এয়ারবাস এ৩৮০-৮০০

যাত্রী সংখ্যা ধারণের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমান এয়ারবাস এ৩৮০-৮০০। এর দৈর্ঘ্য ৭২.৭২ মিটার। মোট ৮৫০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা আছে এ বিমানের। ২০০৫ সালে প্রথম এ বিমান আকাশে ওড়ে। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস এ ধরনের বিমান তৈরি করে। বর্তমানে দুবাইয়ের এমিরেটস এয়ারলাইন্স এ ধরনের বেশিরভাগ বিমান ব্যবহার করছে। এয়ারবাস এ৩৮০ দ্বিতল, সুপ্রশস্থ, চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট। বৃহৎ যাত্রীবাহী জেট বিমানটির নির্মাতা ইউরোপীয় ইএডিএস অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এটি বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান এবং বিশালাকায় এ বিমানের স্থান সংকুলানের জন্য বহু বিমানবন্দরকে তাদের সুবিধাদি সম্প্রসারণ করতে হয়েছে। বৃহদাকার বিমানের বাজারে বোয়িংয়ের একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতেই এ বিমানের নকশা করা হয়েছে। এ ৩৮০ প্রথমবারের মতো আকাশে ওড়ে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ২০০৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিক  কার্যক্রম শুরু করে।

 

এয়ার‌্যান্ডার ১০

বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বিমানগুলোর একটি এয়ার‌্যান্ডার-১০। ৯২ মিটার লম্বা এ বিমান একাধারে বিমান, এয়ারশিপ ও হেলিকপ্টারের কাজ করবে। ব্রিটিশ কোম্পানি হাইব্রিড এয়ার ভেহিকেলস এ বিমানটির নকশা করেছে। এটি টানা তিন সপ্তাহ আকাশে থাকতে পারবে। এর জ্বালানি হিলিয়াম। ঘণ্টায় ৯২ মাইল গতিবেগে এয়ারল্যান্ডার-১০ আকাশে উড়তে পারে যা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বেডফোর্ডশায়ারে ২৬ মিটার উচ্চতার এবং ৪৪ মিটার প্রস্থের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার এয়ারক্রাফট হ্যাঙ্গার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ওড়ানো হবে। এ বিমানটি বাতাসের চেয়ে সামান্য ভারি হওয়ায় পানি ও বরফসহ যে কোনো স্থানে অবতরণ করতে পারবে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য সার্ভেইল্যান্স এয়ারক্রাফট হিসেবে প্রথম এটার কাজ শুরু হয়। পরে এটার উৎপাদনকারীরা এর প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বাদ দিয়ে দেন। যদিও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দাবি, উড়োজাহাজটি সার্ভেইল্যান্স, যোগাযোগ, ত্রাণ ও যাত্রী বহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিমানটি কোনো শব্দ করে না ও বায়ুদূষণ করে না।

 

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার হলো বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন কোম্পানির তৈরি দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিশালাকার সুপরিসর বিমান। বিমানটি প্রকরণ ভেদে সর্বোচ্চ তিনটি শ্রেণিতে ২৪২ থেকে ৩৩৫ জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনে সক্ষম। ড্রিমলাইনার বিমানটি সবচেয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসেবে পরিচিত। হালকা যৌগিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হওয়ায় বোয়িং ৭৮৭ কে ৭৬৭-এর চেয়ে প্রায় ২০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয়ী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া আধুনিক কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন ইলেকট্রিক্যাল ফ্লাইট সিস্টেম, চার প্যানেল বিশিষ্ট উইন্ডশিল্ড, শব্দ নিরোধী শেভরন ইত্যাদি বিমানটিকে অনন্য করে তুলেছে। এটি ২০১১ সালের মার্চের দিকে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনেস্ট্রেশন ও ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সির অনুমোদন পায় এবং একই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম চালানটি হস্তান্তর করা হয়।

 

হেলিকপ্টার মিলএমআই

মিল এমমাই-২৪ হাইন্ড হচ্ছে রাশিয়ান একটি শক্তিশালী বিশালাকার হেলিকপ্টার। এটি ১৯৭৫ সালে সার্ভিসে আসে। রাশিয়া প্রায় ২৫০০ মি-২৪ হাইন্ড তৈরি করেছে। ১৯৭৫ সালের পর প্রায় সব যুদ্ধে মি-২৪ অংশগ্রহণ করেছে। যেমন- ওগাদান যুদ্ধ, লিবিয়া যুদ্ধ, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়ান গৃহযুদ্ধ, শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধ, গাল্ফ যুদ্ধ ও বর্তমানে সিরিয়ায় এটি সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হচ্ছে। অনেক হেভি আর্মামেন্ট থাকায় একে ‘উড়ন্ত ট্যাংক’ বলা হয়ে থাকে। আবার অনেকে একে ‘কুমির’ নামেও ডাকে। এতে রয়েছে অনেক ধরনের অস্ত্র। যেমন- ১৪৭০ রাউন্ড ১২.৭ মিমি গ্যাটলিং গান, টুইন ব্যারেল ৩০কে অটোক্যানন যা দিয়ে খুব শক্তিশালি বুলেট ছোড়া যায় তা ছাড়াও আছে মিসাইল, অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল, এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ও বিভিন্ন ধরনের বোমা (সর্বোচ্চ ৫০০ কেজি)। এটি খুব নিচ দিয়ে চলতে পারে ও শত্রুপক্ষের জন্য খুব ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর