রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুন্দর কিন্তু ভয়ঙ্কর সেতু

সুন্দর কিন্তু ভয়ঙ্কর সেতু

দূরত্ব কমানো, চলাচল সহজ আর মালামালের নিরাপদ বহন তথা জীবনযাত্রাকে সহজ করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয় সেতু। দুর্গম এলাকা, জলপথ, গিরিখাত বা পাহাড় থেকে জনপদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এসব সেতু রাখে মূল ভূমিকা। সেতুর নির্মাণশৈলী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক সময় বিবেচিত হয় পর্যটনস্থান হিসেবে। কিন্তু চলাচলের ক্ষেত্রে এই সেতুগুলো সব সময় যে আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দেবে, তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। বিশ্বের নয়নাভিরাম অথচ ভয়ঙ্কর এমন কয়েকটি সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন-  তানিয়া তুষ্টি

 

সেতু নাকি রোলারকোস্টার

নরওয়ের স্টোরেসিসুন্দেট ব্রিজটি দেখতে সাধারণ সেতুর মতো নয়। বরং আপনার মনে হবে এটি একটি দীর্ঘ রোলারকোস্টার। মূল ভূখ- রমসদাল উপদ্বীপ থেকে রাস্তার সংযোগ ঘটিয়েছে ব্রিজটি। তীক্ষ বাঁকানো খাড়া এই রোলারকোস্টার কাউন্টির এভারোয়ায় দ্বীপে অবস্থিত। সেতুর মাঝখানে দাঁড়ালে মনে হবে দুই পাশের শেষাংশ ভয়ঙ্করভাবে জলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ২৬০ মিটার (৮৫০ ফুট) দীর্ঘ সেতুটি ছয় বছর ধরে এই অঞ্চলের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। তারপর ১৯৮৯ সালের ৭ জুলাই সর্বসাধারণের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। সেতুটি সম্পন্ন করার জন্য এক কোটি ২২ লাখ নরওয়েজিয়ান ক্রোন ব্যয় করা হয়েছিল। এটি এমন একটি অঞ্চল যা উচ্চগতির বাতাসের জন্য পরিচিত। এখানে হারিকেন এবং বৃষ্টিসহ বিশাল পানির তরঙ্গ প্রায়ই আঘাত হানে। তাই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এই নাটকীয় রূপে স্টোরেসিসুন্দেট ব্রিজটি তৈরি করা হয়।

১০০ ফুট উঁচু দড়ির সেতু

ক্যার্রিক-এ-রেডে রপ ব্রিজ। স্থানীয়ভাবে বলা হয় কেরিক-এ-রেডি। উত্তর আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি এন্টরিমের বেলিনটোয়ের কাছে অবস্থিত বিখ্যাত এই ব্রিজ। ১৭৭৫ সালে ব্রিজটি তৈরি করা হয় দড়ি দিয়ে। ক্যার্রিক-এ-রেডের ছোট্ট দ্বীপটিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের মূল ভূখ-ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এই সেতু। ৬৬ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই ব্রিজের উচ্চতা ১০০ ফুট। ভূস্বৈর্গিক দৃশ্য, শিলা, সমুদ্রসৈকত এবং পানির ওপরে অবস্থিত ক্যার্রিক-এ-রেডে রপ ব্রিজ দেখার জন্য পর্যটকরা প্রচ-ভাবে আকর্ষণ অনুভব করে। এত উঁচুতে সরু ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটতে ও শূন্যতা সামলাতে পর্যটকদের যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়। তাই একে ভয়ঙ্কর সেতুও বলা চলে।  সেতুর মাঝ বরাবর গিয়ে কেউ প্রবলভাবে ভীতি অনুভব করলেও তাকে নিজের সাহসিকতায় আবার ফিরে আসতে হয়। বর্তমানে এটি জাতীয় ট্রাস্টের মালিকানাধীন এবং পরিচালিত। প্রথমে এটি নিজেদের ব্যবহারের জন্য দ্বীপে বাসকারী জেলেরা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক আকর্ষণ এর মূল উদ্দেশ্য।

আত্মহত্যার জন্য আসে সানশাইনে

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সানশাইন ব্রিজটি আত্মহত্যার জন্য আলোচনায় থাকে। ১৯৮৭ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২শ মানুষ এখান থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৬.৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৯৪ ফুট প্রশস্ত ব্রিজটির উচ্চতা ৪৩০ ফুট। আর তাই হয়তো নিশ্চিত মৃত্যু ঘটানোর জন্য মানুষ এটিকেই বেছে নেন। এই ব্রিজের সবচেয়ে লম্বা স্প্যানটির দৈর্ঘ্য ১২ শত ফুট। প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে। বর্তমানে আত্মহত্যার স্থান হিসেবে কলঙ্কমাখা সেতুটির একটি অন্ধকার অতীত রয়েছে। এখানেই ১৯৫৪ সাল থেকে আরেকটি সেতু ছিল। কিন্তু বড় রকমের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ১৯৮০ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। একদিন ঘণ্টায় ৭০ মাইল বেগে তেড়ে আসা ঝড়ের কবলে পড়ে বিশাল একটি বাহক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের স্প্যানে আঘাত হানে। ফলে ব্রিজ ধারণ করে রাখা স্প্যানটি নিমিষেই ধসে পড়ে। যার ফলে ব্রিজের ১২০০ ফুট রাস্তা পানির নিচে চলে যায়। এ সময় একটি বাসসহ বেশ কয়েকটি ছোট যানবাহনও পানির নিচে চলে যায়। সেই ঘটনায় কমপক্ষে ৩৫ জন মারা যায়। আরও অনেকে আহত হয়। এমন ঘটনা এখন পর্যন্ত আর ঘটেনি। কিন্তু এই সেতু থেকে নিয়মিত আত্মহত্যার ঘটনা মানুষের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করে।

ভিতিম পার হওয়া দুঃসাধ্য

রাশিয়ার ভিতিম রিভার ব্রিজের উচ্চতা আহামরি কিছু বেশি নয়। আবার দৈর্ঘ্যওে কম। তবে কেন এটিকে বিপজ্জনক বলা হয়? কারণ হিসেবে পাওয়া যাবে, এই স্বল্পদৈর্ঘ্য আর স্বল্প উচ্চতার ব্রিজটি পার হওয়াই আপনার জন্য হতে পারে দুঃসাধ্য ব্যাপার। রেলিংবিহীন পুরনো কাঠামোয় ছয় ফুট প্রস্থের সংকীর্ণ এই ব্রিজটি যে কোনো গাড়ি চলাচলের জন্যও কঠিন। ট্রান্স-বাইকাল অঞ্চলের জরাজীর্ণ ব্রিজটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অবশ্যই সচেতন হতে হয়। ৫৭০ মিটার (১৮৭০ ফুট) দীর্ঘ ও ৫০ ফুট উঁচু এই ব্রিজটি বছরের অর্ধেক সময় থাকে বরফের জন্য পিচ্ছিল। প্রায়ই ঘটে নানা দুর্ঘটনা। নদীর এপার থেকে ওপারে মালামাল পরিবহনের জন্য প্রথম দিকে নৌকা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বরফের জন্য মালামাল পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটত। আবার বরফ না থাকলেও নদীর পানির স্রোত থাকে প্রচন্ড গতির। এতে নৌকাগুলো ভেঙে যেত বেশিরভাগ সময়। তাই ব্রিজের ওপর দিয়ে ছোট রেলগাড়িতে করে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করা হতো। এখন ব্রিজটির কিছু অংশ ক্ষয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ভিতিম হতে পারত রোমাঞ্চকর রাফটলিংয়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতার জন্য তা আর হয় না।

ভয় দেখাতেই কেপিলানো

কেপিলানো সাসপেনশন ব্রিজটি কানাডার ভ্যানকোভারে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া পার্কে অবস্থিত। ঝুলন্ত এই ব্রিজটি যেন নির্মিতই হয়েছে আপনাকে ভয় দেখাবার জন্য। অনবরত কাঁপতে থাকা ব্রিজটিতে হাঁটতে হলে কিছুটা সাহস নিয়েই এগোতে হবে পর্যটকদের। সুন্দর ব্রিটিশ কলম্বিয়ার দ্রুতগতির ক্যাপিলানো নদীর ওপরে ১৮৮৯ সাল থেকে ২৩০ ফুট উচ্চতায় পাথুরে পাহাড়ের মাঝখানে সাসপেনশন ব্রিজটি চালু রয়েছে। প্রথমে এটি রশি এবং সিডার ফলক ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই  ক্যাপিলানো সেতুটি দুর্ঘটনার জন্য সমালোচিত হতে থাকে। ব্রিজটির নিচে আছে বিস্তীর্ণ গিরিখাত। বিপদ এড়াতে প্রতিবছর এটি পুনর্গঠন করা হয়। নিরাপত্তা বাড়াতে এখানে দড়ির বদলে এখন ব্যবহার করা হয় কেবল তার। ১৯৫০ সালে পাটাতনে ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিট। সেতুটির নিরাপত্তা বাড়াতে ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার পরও জঙ্গলের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সেতুটি এখনো এমন ভাবে ঝাঁকুনি দেয় তাতে সাহসী ব্যক্তিটিও ভয় পেয়ে যান।

চীনের বিচিত্র সব কাচের সেতু

কাচের মতো স্পর্শকাতর উপাদান দিয়েও নির্মাণ করা যায় সেতু। আর সেই সেতুও হতে পারে পূর্ণ নিরাপদ। রোমাঞ্চকর বেশ কিছু সেতু আর পর্যটনস্থান নির্মাণ করে চীন স্থাপন করেছে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। তবে কিছুদিন আগে এর দুয়েকটি স্থানে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় অন্তত দুজনের প্রাণহানি হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেও গুয়াংজি প্রদেশে একটি গ্ল­াস স্ল­াইড থেকে পড়ে এক পর্যটক নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ছয়জন। নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনা এড়াতে তৎপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা কাচ দিয়ে বানানো আকর্ষণীয় হাঁটার পথ, উঁচু থেকে দৃশ্য দেখার স্থান ও ব্রিজসহ ৩২টি পর্যটনস্থান বন্ধ করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট কারণেই আপাতত কাচের তৈরি এসব স্থাপনা পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন স্থানে ২ হাজার ৩০০টি কাচের সেতু রয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু কাচের সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু আর লম্বা কাচের সেতু

জাংজিয়াজি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গ্ল­াস ব্রিজটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ও দীর্ঘ কাচের সেতু বলে দাবি করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে চীনের জাংজিয়াজি ন্যাশনাল পার্ক গিরিখাতের প্রায় ১ হাজার ফুট ওপরে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৫০ ফুট ও প্রস্থে প্রায় ২০ ফুট। নির্মাণ খরচ পড়েছে ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার। ব্রিজটির নকশা করেছেন ইসরায়েলের স্থপতি হাইম ডটান। স্বচ্ছ কাচের মেঝেবিশিষ্ট সেতুটি দূর থেকে দেখে মনে হবে দুই পাহাড়ের মধ্যে টাঙানো সাদা চিকন সুতো। উচ্চতাভীতি থাকুক বা না থাকুক যে কেউ সেখানে গেলে আতঙ্কিত হতে পারেন। কেননা আপনার মনে হতে পারে শূন্যে ভাসছেন বা পিছলে পড়ে যাচ্ছেন আপনি। দর্শনার্থীদের ভয় ভাঙাতে নির্মাণকর্মীরা বড় হাতুড়ি দিয়ে বার বার আঘাত করেন সেতুটিতে। এমনকি গাড়িও চালিয়ে নেওয়া হয়, প্রমাণ করতে চান মানুষের হাঁটাচলায় এটি ভাঙবে না।

দীর্ঘতর গ্লাস সাসপেনশন ব্রিজ

হংকিয়াগু গ্ল­াস সাসপেনশন সেতুটি হেবেই প্রদেশের হংকিয়াগু প্রাকৃতিক অঞ্চলে অবস্থিত। এটি ৪৮৮ মিটার দীর্ঘ এবং ৪ মিটার প্রশস্ত। ব্রিজটি দুটি শৃঙ্গকে যুক্ত করেছে। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সেতুটি নির্মাণে কেবল কাঠামোর ওপর চার সেন্টিমিটার পুরুত্বের ১ হাজার ৭৭টি গ্লাস প্যানেল ব্যাবহার করা হয়েছে। একই সময়ে সেতুর ওপর ৬০০ জন দর্শনার্থীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কাচের ওপর হাঁটার সুবিধার্থে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ ধরনের গ্লাভস সু-এর ব্যবস্থা আছে। তার পরও কেউ যদি এত উঁচুতে পরিষ্কার ঝকঝকে কাচের ওপর দিয়ে হাঁটতে ‘জেলি লেগস’ বা ভীতির কারণে পায়ের শক্তি কমে যাওয়ার সমস্যা অনুভব করেন তাদের ফিরে আসার জন্য বিশেষ বাহনের ব্যবস্থা আছে। তবে এটি সত্য যে, সেতুতে ভ্রমণকারীরা একটি রোমাঞ্চ উপভোগ করার সুযোগ পান।

শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্যে ঝুলন্ত সেতু ইউনিয়াং লংগাং

২০১৫ সালে চিংকিয়ের থ্রি জর্জেস জলাশয় অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে ইউনিয়াং লংগাং জিওলজিক্যাল পার্কে অশ্বক্ষুরাকৃতির ২৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ঝুলন্ত সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। এই অঞ্চলের পর্যটনস্থান বলতে গুহা, বন, পাহাড় এবং গিরিখাত রয়েছে। এই ধারণাটি বিশ্বের দীর্ঘতম ও বড় খিলানের আকাশচুম্বী সেতু নির্মাণের ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সুরক্ষার সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি ‘এ’ অক্ষরের আকৃতিতে নির্মিত ইউনিয়াং সেতুটি নতুন দর্শনার্থীদের জন্য বেশ ভয়ঙ্কর বলা যায়। তবু শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য থেকে নিজেদের বঞ্চিত করতে চান না। মাটির স্তর থেকে এটি প্রায় ২০০ মিটারের বেশি উঁচু পাহাড়ের সঙ্গে ক্লিপের সঙ্গে আটকে ঝুলে আছে। পাহাড়ের কিনারা থেকে শূন্যের দিকে আরও ৮৬ মিটার পর্যন্ত এটি প্রসারিত। কর্তৃপক্ষ একই সময়ে ৩০ জন পর্যটককে ভ্রমণের অনুমতি দেন।

 

 

অন্যরকম

ভালোবাসার সেতু

প্যারিস শহরের বুকের ওপর দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে চলেছে সিন নদী। আর এই নদীর ওপর রয়েছে ৩৭টি সেতু। এর কয়েকটিতে চোখে পড়বে রেলিংয়ে লাগানো বিশেষ এক ধরনের তালা। সেই তালার নাম ‘লাভ প্যাড লক’। এখানে প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরের নামের প্রথম অক্ষর খচিত করে এই তালাগুলো রেলিংয়ে ঝুলিয়ে চাবিটি সিন নদীতে ফেলে দেন। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা প্রকাশের এই অনন্য রীতি প্যারিসকে ভালোবাসার শহর হিসেবে খ্যাতি দিয়েছে। শুধু দেশের নয়, বহু বিদেশি পর্যটকও তালা ঝোলান এই হেঁটে চলার সেতুর রেলিংয়ে। প্রথম দিকে একটি দুটি সেতুতে এই তালা লাগানো হলেও, এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সিন নদীর একাধিক সেতুতে। আর এসব দিক দিয়ে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় হলো নটর ডেম গির্জায় যাওয়ার জন্য সিন নদীর ওপর বানানো একটি সেতু।

যেন ঈশ্বরের হাতের ওপর সেতু

ইন্দো চীন উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত রাষ্ট্র ভিয়েতনাম। দেশটির দানাং শহরের গাছপালা আর পাথুরে পাহাড় ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে কংক্রিটের তৈরি প্রকা- দুটি হাত। সেই হাতের ওপর রয়েছে ধনুকের মতো বাঁকানো সোনালি রঙের সেতু। স্থানীয়রা এই হাতকে ঈশ্বরের হাত বলে। ১৯১৯ সালে ফ্রান্সের এক নির্মাতা সংস্থা অভিনব এ সেতুটি তৈরি করে। বর্তমানে সেখানে পর্যটকের ভিড় থাকে উপচেপড়া। ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ের ওপরে প্রায় ৪৯০ ফুট উঁচুতে তৈরি করা হয়েছে সেতুটি। ওই সেতু থেকে দানাং শহরটি পুরোপুরি দেখা যায়। ওয়েডিং ফটোগ্রাফি বা ইনস্টাগ্রাম ছবির জন্য সেখানে ছুটে যান অনেকেই। ২০১৭ সালে থাই পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখের মতো।

মনে হবে জলপ্রপাত

২০০৪ সালে চীনের প্রাচীন ইয়োলো রিভার, নিংজিয়ায় ২.৬ মিটার প্রশস্ত ও ৩২৮ মিটার দীর্ঘ একটি কাঠের সাসপেনশন সেতু উদ্বোধন করা হয়। জল থেকে এর উচ্চতা রাখা হয় মাত্র ১০ মিটার। ২০১৭ সালে এসে সেতুটির কাঠের প্যানেলগুলো সরিয়ে কাচের প্যানেল প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে সেতুটি যেন হঠাৎ করেই বেশি  রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। পরিষ্কার, স্তরযুক্ত, টেম্পারেড কাচ, যা দেখে দর্শকদের মনে হতে পারে পায়ের নিচে ছুটে যাচ্ছে বাদামি পানির প্রবাহ। তবে বিল্ট-ইন ৩ডি দৃশ্যের সঙ্গে কাচের স্তরগুলো এমন কৌশলে আঁকা তাতে মনে হতে পারে, খাড়া পাহাড়ের ওপর ছুটে আসছে জলপ্রপাত। কোথাও কোথাও ভয়ঙ্কর উপত্যকায় ডুবে আছে পথ। অন্যান্য কাচের সেতুর মতোই, এখানেও দর্শনার্থীদের জুতোয় কভার পরতে হবে এবং সব সম্ভাব্য সুরক্ষা-সতর্কতা মানতে হবে।

সর্বশেষ খবর